জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ছে না: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 17th, June 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ছে না। তবে সংঘাত বেশি দিন হলে তখন একটা প্রভাব পড়বে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে আমাদের দেশের জ্বালানি তেলের দামে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ইরান- ইসরায়েল সংঘাত আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দেখেছি, এরইমধ্যে কিছুটা বেড়েছে। তবে যেগুলোতে আমরা অর্ডার করেছি সেগুলোতে প্রভাব ফেলে নাই৷”
তিনি বলেন, “গ্যাস, এলএনজির দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে আমরা বিবেচনায় নেবো। আজকে যে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছি সেটা পুরানো দামেই কোড করেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা আগের দামেই পাবো।”
আপাতত বাণিজ্য ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না না আপাতত বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।”
বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “বিশেষ প্রস্তুতি বলতে আজকে আমরা যে এলএনজি, সার আনার প্রস্তাব অনুমোদন দিলাম সেটা পুরানো দামে। ভবিষ্যতে যখন নতুন কোনো কিছু আনবো তখন হয়তো কিছুটা ইফেক্ট পড়বে।”
সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে বিকল্প কিছু চিন্তা করছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “বিকল্প চিন্তা বলতে অবশ্যই জ্বালানি মন্ত্রণালয় করছে। যেহেতু আমরা এলএনজির ওপর নির্ভর করি বেশি। জ্বালানি শুধু না, সার, জাহাজ চলাচলেও প্রভাব পড়বে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে জাহাজ আসে সেখানে প্রভাব পড়তে পারে। আমার মনে হয় সংঘাত বেশি দিন চলবে না।”
ঢাকা/হাসনাত/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কহার নিয়ে তৃতীয় দফা আলোচনা শুরু
বাংলাদেশি পণ্যে আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশ দলের আলোচনা শুরু হয়েছে। ওয়াশিংটনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আজ রাত সাড়ে ১২টায় (যুক্তরাষ্ট্র সময় দুপুর আড়াইটা) শুরু হওয়া এ আলোচনা ভোর ৫টা পর্যন্ত চলবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তিন দিনব্যাপী এ আলোচনা শেষ হবে ৩১ জুলাই।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটিতে আরও আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। ৩ আগস্ট তাঁদের ঢাকায় ফিরে আসার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তৃতীয় দফা বাণিজ্য আলোচনা ২৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হতে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এ দফার আলোচনায় ইতিবাচক ফল আশা করছে।
বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ১ আগস্ট এ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বর্তমানে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেন, নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশ দাঁড়াবে।
বাড়তি শুল্কহার কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুই দফা আনুষ্ঠানিক আলোচনা করলেও উভয় দেশ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তৃতীয় দফার আলোচনা করতে গত সোমবার রাতে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল।
সরকারি প্রতিনিধিদলের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের একটি দলও যুক্তরাষ্ট্র গেছে। ব্যবসায়ীদের এ দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির আলাদা বৈঠক হওয়ার কথা। সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের জন্য এ হার ছিল ৩৭ শতাংশ। পাঁচ দিনের মাথায় ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ।
পরে ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক বজায় রেখে সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। তিন মাসের শেষ সময় ছিল ৯ জুলাই। আগের দিন ৮ জুলাই ট্রাম্প নতুন করে ঘোষণা দিয়ে জানান, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কহার হবে ৩৫ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য। একই অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশ ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬২৬ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি পর্যায়ে গম, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), ২৫টি উড়োজাহাজ ইত্যাদি পণ্য আমদানির মাধ্যমে দেশটির বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি আগে থেকেই চলছে। এলএনজির চাহিদা বাড়ছে, দামও কমছে। আমাদের আমদানি বাড়তে পারে। তবে দরপত্র ডেকেই তা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেসরকারি পর্যায়ে তুলা, সয়াবিনবীজ ইত্যাদি পণ্যও আমদানি করা হবে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকেরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনতে কত খরচ হবে—এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।
শুধু উড়োজাহাজ কিনে বাণিজ্যঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে না, আর কী ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও আছে। ওই প্যাকেজ নিয়েই তো গেছেন (বাণিজ্য উপদেষ্টা), কী কী কিনতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা হবে কি না, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সেটা আমি বলব না। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে প্রশ্ন করুন।’
আরও পড়ুন:
পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে কাল যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে বাংলাদেশের দল
১ আগস্টের সময়সীমা কি বাড়াবেন ট্রাম্প, কী অপেক্ষা করছে
আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে কাল যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে বাংলাদেশের দল২৭ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুন১ আগস্টের সময়সীমা কি বাড়াবেন ট্রাম্প, কী অপেক্ষা করছে২৮ জুলাই ২০২৫