ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‌‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আরও অপেক্ষা করব। আপাতত পর্যবেক্ষণ করছি, যুদ্ধটা যদি বেশি দিন চলে তখন আমাদের ওপর একটা প্রভাব পড়বে।’

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে আমাদের দেশের জ্বালানি তেলের দামে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধটা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দেখেছি ইতোমধ্যে কিছুটা দাম বেড়েছে। তবে যেগুলোতে আমরা অর্ডার করেছি সেগুলোতে প্রভাব ফেলে নাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করছি গ্যাস, এলএনজির দাম যদি বেড়ে যায়, তাহলে আমরা বিবেচনায় নেবো। আজকে যে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছি, সেটা পুরোনো দামেই কোড করেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা আগের দামেই পাবো।’

আপাতত আমাদের বাণিজ্য ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা কী নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না না, আপাতত বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।’

বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশেষ প্রস্তুতি বলতে আজকে আমরা যে এলএনজি, সার আনার প্রস্তাব অনুমোদন দিলাম সেটা পুরোনো দামে। ভবিষ্যতে যখন নতুন কোনো কিছু আনব তখন হয়তো কিছুটা ইফেক্ট করবে।’

যুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে বিকল্প কিছু চিন্তা করছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বিকল্প চিন্তা বলতে অবশ্যই জ্বালানি মন্ত্রণালয় করছে। যেহেতু আমরা এলএনজির ওপর নির্ভর করি বেশি। যুদ্ধতে শুধু জ্বালানি না, সার, জাহাজ চলাচলেও প্রভাব পড়বে। হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ আসে, সেখানে প্রভাব পড়তে পারে। মনে হয়, যুদ্ধটা বেশি দিন চলবে না।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল

শুক্রবারের শুরুতেই ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও অস্ত্রাগারে বড় ধরনের হামলা চালায় এবং ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে আঘাত হানে। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইরান শুক্রবার গভীর রাতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের দিকে ডজন ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই হুমকি দূর না হওয়া পর্যন্ত হামলা যত দিন প্রয়োজন, তত দিন চলবে।’ এর প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের হামলার প্রতি জোরালো সমর্থন জানান। তিনি সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি দারুণ হয়েছে। আমরা (ইরানিদের) সুযোগ দিয়েছিলাম, তারা সেটি নেয়নি। তারা বড় আঘাত পেয়েছে, খুব বড় আঘাত...এবং আরও আসছে।’

নেতানিয়াহুর এই হামলার পেছনের উদ্দেশ্য, কীভাবে তিনি ট্রাম্পকে কাজে লাগিয়ে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন এবং এই হামলার ফলে অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?

আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলা: ট্রাম্প কি পাগল হয়ে গেছেন১৩ জুন ২০২৫

হামলাটি ঠিক এখনই কেন হলো? প্রথমত, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েল ইরানের ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’–এর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে আসছে। এই ২০ বছরের বেশির ভাগ জায়গায় নেতানিয়াহুই ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু সামরিক নেতারা অনেক আগে থেকেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের কথা ভাবছিলেন। ১৯৮১ সালে ইরাকে এবং ২০০৭ সালে সিরিয়ায় পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করা হয়েছিল। দুই ক্ষেত্রেই ওই পারমাণবিক কর্মসূচিগুলো ইসরায়েলের জন্য অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। ইসরায়েলের মূল উদ্দেশ্য ছিল আগেভাগে হামলা করে সেই হুমকি দূর করা।

ইরানে হামলার চিন্তাভাবনা ২০১২ সালে নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাকের সময় তুঙ্গে পৌঁছেছিল। কিন্তু তখন ওবামা প্রশাসন তাঁদের থামিয়ে দেয়। পরে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি হয়। তখন কিছু ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাপ্রধান মনে করেছিলেন যে ইসরায়েলকে একাই হামলা করা উচিত নয়।

আরও পড়ুনযে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে হামলা চালাল ইসরায়েল৭ ঘণ্টা আগে

আমেরিকার সম্মতি আর আগে থেকে জানিয়ে রাখা জরুরি। ১৯৮১ সালে মেনাখেম বেগিন আমেরিকাকে না জানিয়ে ইরাকের চুল্লিতে হামলা চালান। ফলে দুই দেশের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে এহুদ ওলমার্ট ২০০৭ সালে জর্জ বুশকে সিরিয়ার গোপন চুল্লি সম্পর্কে জানান। তখন বুশ প্রথমে নিজে হামলার কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকে তা ধ্বংস করতে দেন। প্রায় এক দশক ইসরায়েল সেই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এই হামলা ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে গত বছরের দুই দফা পাল্টাপাল্টি হামলার পর হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে দামেস্কে এক ইরানি জেনারেল নিহত হলে ইরান ড্রোন দিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়। কারণ, ইসরায়েল মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের সমর্থন পেয়েছিল।

অক্টোবর মাসে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েল পাল্টা আঘাত করে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দেয়। এরপর লেবাননে হিজবুল্লাহ ভেঙে পড়ে। সিরিয়ায় আসাদের শাসনও দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার দিকে আঘাত হানার পথ সুগম হয়। কিন্তু তারা ট্রাম্পের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ছিল।

এখন একটা প্রশ্ন হলো, ইসরায়েল কি এখন গাজায় হামলা থামিয়ে দেবে? নাকি এই আক্রমণ শেষ করে গাজায় নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে? এটা সময়ই বলবে। নেতানিয়াহু এখনো গাজায় হামাস ধ্বংস ও ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের পরিকল্পনায় অটল। ট্রাম্প পরিকল্পনা মেনে সেই এলাকায় অবকাশযাপনকেন্দ্র ও বসতি গড়ার নীতিই এখনো ইসরায়েলের নীতি।

কিছু ইসরায়েলি মনে করছিলেন, ট্রাম্প হয়তো এই হামলার অনুমতি দেবেন না। কারণ, তিনি ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। আসলে কি সময় আর ট্রাম্পের উপস্থিতিই তাহলে মূল পার্থক্য তৈরি করল?

অবশ্যই। অক্টোবরের হামলার পর ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ভেঙে যাওয়া, রাশিয়ার নতুন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম না দেওয়া, হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের ধ্বংস, আসাদের পতন—সব মিলিয়ে বড় হামলার সুযোগ তৈরি হয়। সম্প্রতি জানা গিয়েছিল যে ইসরায়েল সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নেতানিয়াহু হামলার জন্য চাপও দিচ্ছিলেন। ট্রাম্প কয়েক দিন আগেও প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেছিলেন। বাস্তবে নেতানিয়াহু তাঁকে আগেই জানিয়েছিলেন। আর এখন ট্রাম্প প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের সমর্থনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, তাঁর প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে ইসরায়েলকে সেন্টকমের অংশ করা হয়। ফলে ইসরায়েল এখন মার্কিন আঞ্চলিক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছে। এতে মার্কিন সেনা বা বিমান নয়, গোয়েন্দা তথ্যও ভাগাভাগি হচ্ছে।

সেই সঙ্গে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বোঝার ক্ষেত্রে বেশ দক্ষ বলেই মনে হয়। ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে চুক্তির কথা বললেও বা গাজার যুদ্ধবিরতির কথা বললেও তিনি আসলে ইসরায়েলকে কোনো রকম চাপ দিতে চান না। ফলে ইসরায়েল নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে।

গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও আমেরিকা প্রায়ই ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক বিষয়ে শেষ কথা সব সময় আমেরিকার। ট্রাম্প চুক্তি চেয়েছিলেন। ইরান চুক্তির শর্ত মেনে চললে হামলা হতো না। কিন্তু তারা সুযোগ নেয়নি। হিজবুল্লাহও যুদ্ধ থামাতে পারত। কিন্তু তারা তা চায়নি।

এখন একটা প্রশ্ন হলো, ইসরায়েল কি এখন গাজায় হামলা থামিয়ে দেবে? নাকি এই আক্রমণ শেষ করে গাজায় নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে? এটা সময়ই বলবে। নেতানিয়াহু এখনো গাজায় হামাস ধ্বংস ও ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের পরিকল্পনায় অটল। ট্রাম্প পরিকল্পনা মেনে সেই এলাকায় অবকাশযাপনকেন্দ্র ও বসতি গড়ার নীতিই এখনো ইসরায়েলের নীতি।

ইরান আক্রমণে ইসরায়েলে প্রায় সর্বসম্মত সমর্থন আছে। গাজার যুদ্ধ ও ইরান আক্রমণ নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তাই বাড়িয়েছে। তাঁর কৌশল হলো, কোনো অজনপ্রিয় কাজ করতে গেলে যুক্তি দেখান যে বড় কোনো শক্তির চাপে পড়ে এমনটা করতে হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর এই হামলা নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বেগ ছিল, মার্কিন সমন্বয় ও ব্যর্থতার ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু এখন সমন্বয় হয়েছে। তবে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু সন্দেহ রয়ে গেছে। তবু এটি বহু বছরের প্রস্তুতির ফল।

ইরানের পারমাণবিক হুমকি সত্যিই বেড়েছে। গত ডিসেম্বর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে পারমাণবিক অস্ত্রের এক ধাপ কাছে চলে যায়। এই তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা। সব মিলিয়ে ইরানের এই ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ, ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতি এবং ট্রাম্পের সমর্থন—এই তিনের সমন্বয়েই এই হামলা হয়েছে।

আলুফ বেন হারেৎজ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক

দ্য নিউ ইয়র্কার থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এখনই নয়: অর্থ উপদেষ্টা
  • ৬২২ কোটি টাকায় আমদানি হবে এক কার্গো এলএনজি 
  • জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ছে না: অর্থ উপদেষ্টা
  • যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে শেয়ার সূচকে পতনের আভাস, বেড়েছে তেলের দাম
  • ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধের কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে
  • যুদ্ধের পরিধি বাড়াতে চায় না ইরান, তবে আক্রমণের জবাব দেবে: পেজেশকিয়ান
  • যুদ্ধে ইরান জিতছে না, তাদের এখনই আলোচনায় বসা উচিত: ট্রাম্প 
  • ইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল