মিয়াজাকি, কিং অব ব্রুনাই, চাকাপাতসহ ৫০টির বেশি জাতের আম, জামরুল, করমচা, ডেউয়া, কাঁঠাল, খেজুর, কদবেল, বাতাবি লেবু, তরমুজ, নারকেলসহ নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফলের প্রদর্শনী চলছে নওগাঁয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় চত্বরে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ফলমেলা শেষ হবে আগামী শনিবার। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

আজ সকাল ১০টার দিকে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনুল আবেদিন উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় ফলমেলার এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়—‘দেশি ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই’। তিন দিনের এই ফলমেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে প্রায় দেড় শ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফল। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা বিভিন্ন ফলের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ছাড়াও ফল চাষের পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারছেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ফলের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় হোক মানুষের খাদ্যাভ্যাস। ফল খেলে মানবদেহে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের চাহিদা পূরণ হয়। নিয়মিত ফল খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সবার উচিত নিয়ম করে প্রতি ঋতুতে মৌসুমি ফল খাওয়া। মানুষকে ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ও ফল খেতে আগ্রহী করতে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুর রউফ তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে এই মেলায় আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছে ছিল এ রকম একটি ফলমেলায় মেয়েদের নিয়ে আসার। এখানে এসে নানা জাতের ফল দেখে ওরা ভীষণ খুশি হয়েছে। অনেক ফল দেখেছে, যা জীবনে ওরা প্রথম দেখল। আমি নিজেও অনেক ফল দেখলাম, যেগুলো আগে দেখিনি।’ আবদুর রউফের পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সাদিয়া আক্তার বলে, ‘দেড় কেজি ওজনের আম দেখলাম। সেই আমের নাম কিং অব চাকাপাত। এত বড় আম কোনো দিন দেখিনি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফলম ল

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু, চাষিদের নানা অভিযোগ

রংপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল এই আম বাজারজাতকরণের ঘোষণা দেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি বিভাগ যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আমচাষি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় আমচাষিরা হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও মান উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্যে মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন জানান, এ বছর মিঠাপুকুরে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ২৬ হাজার মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙা আম উৎপাদন হবে। আমের বাজারমূল্য, কুরিয়ার সার্ভিস, পরিবহন—সবকিছু মিলে শুধু পদাগঞ্জ হাটে ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। হাঁড়িভাঙা আমের বাজারজাতকরণ সময়সীমা বাড়াতে তিন থেকে চার ইঞ্চি বোঁটাসহ আম সংগ্রহ, কুসুম গরম পানিতে ধৌতকরণ ও বরিক অ্যাসিড দিয়ে প্লে করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চাষিদের। এ ছাড়া হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানির জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। উত্তম কৃষিচর্চা ও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি বিভাগ হাঁড়িভাঙা আমের গুণগত মান ও বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।

আমচাষি মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, প্রতিবছর হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসার আগে তারিখ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এ বছর জেলা প্রশাসন থেকে আগে কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। কৃষি বিভাগ গত বছরের মতো এবারও ২০ জুন আম সংগ্রহের তারিখ ঘোষণা করে। তবে পরে পাঁচ দিন এগিয়ে আনে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। আগে থেকে তারিখ ঘোষণা না করায় দূরের আম ব্যবসায়ীরাও সময়মতো আসতে পারছেন না। এতে আমচাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

আরেক চাষি জহিরুল ইসলাম বলেন, হাঁড়িভাঙা আম সুস্বাদু। এটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এর বাজারজাতকরণের সময়সীমা (সেলস লাইফ) খুব কম। এ কারণে প্রতিবছর অনেক আম নষ্ট হয়। হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণের জন্য একটি বিশেষায়িত হিমাগার নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

আমচাষি আইয়ুব আলী বলেন, জেলা প্রশাসন আম সংগ্রহের তারিখ ঘোষণা না করায় ঈদের পর থেকে অনেকে অপরিপক্ব আম বাজারে বিক্রি করেছেন। এভাবে অপরিপক্ব আম বাজারজাত করা হলে হাঁড়িভাঙা জিআই পণ্য থেকে বঞ্চিত হবে। হাজারো আমচাষি পথে বসে যাবেন।

আমচাষিরা অভিযোগ করেন, হাঁড়িভাঙা আমের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পদাগঞ্জ বাজার। এটি মিঠাপুকুরের ঘোড়াগাছ ইউনিয়নে হলেও মিঠাপুকুর থেকে দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। রংপুর থেকে ২৪ কিলোমিটার। বদরগঞ্জ থেকে ১২ কিলোমিটার। অথচ এখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা নেই। রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা আম পরিবহনে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুলতামিস বিল্লাহর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান, জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রব্বানী, সেক্রেটারি এনামুল হক, জেলা বিএনপির সদস্য সাজিদুর রহমান, মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে হাঁড়িভাঙা আম নির্ধারিত সময়ের আগে এসেছে। হাঁড়িভাঙা আমের একটি সমস্যা, পাকলে এটি নরম হয়ে যায়, ভেতরে গলে যায়। এ জন্য রংপুরে আমকেন্দ্রিক শিল্পকারখানা প্রয়োজন।

মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পুলিশের এসআই সাময়িক বরখাস্ত
  • রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু, চাষিদের নানা অভিযোগ