লোহিত সাগরে হামলা চালিয়ে মালবাহী জাহাজ ডোবানোর দাবি হুতিদের
Published: 8th, July 2025 GMT
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা গতকাল সোমবার দাবি করেছেন, তাঁরা লোহিত সাগরে একটি মালবাহী জাহাজে হামলা চালিয়ে সেটি ডুবিয়ে দিয়েছেন। গুলি, রকেট ও দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকভর্তি নৌকা ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছে। এটি চলতি বছরে উন্মুক্ত সমুদ্রে জাহাজ লক্ষ্য করে হুতিদের চালানো প্রথম হামলা।
জাহাজটির গ্রিক মালিকানা প্রতিষ্ঠান স্টেম শিপিং রয়টার্সকে বলেছে, জাহাজটি সত্যি ডুবে গেছে কি না, তা তারা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। রয়টার্সও তাৎক্ষণিকভাবে এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি।
হুতি বিদ্রোহীরা বলেছেন, গত রোববারে এই হামলা হয়েছে। তাঁরা লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী ম্যাজিক সিজ নামের জাহাজে হামলা চালিয়েছেন এবং জাহাজে থাকা ১৯ নাবিককে নিরাপদে নেমে যেতে দিয়েছেন।
স্টেম শিপিং কোম্পানি রয়টার্সকে বলেছে, ওই জাহাজের পাশ দিয়ে যাওয়া আরেকটি বাণিজ্যিক জাহাজ সব নাবিককে উদ্ধার করে জিবুতির উদ্দেশে রওনা করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ গতকাল বলেছে, লোহিত সাগরে হামলার কবলে পড়ার পর জাহাজটি থেকে সাহায্য চেয়ে বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছিল। আর সেই সংকেত পাওয়ার পর এডি পোর্টস গ্রুপের মালিকানাধীন সাফিন প্রিজম নামের একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালায় এবং সফলভাবে ২২ আরোহীর সবাইকে উদ্ধার করে।
এর আগে স্টেম শিপিংয়ের প্রতিনিধি মাইকেল বুদোরোগলু বলেন, হামলার পর ম্যাজিক সিজ জাহাজটিতে পানি ঢুকতে শুরু করে এবং তা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।
জাহাজটি চীন থেকে লোহা ও সার নিয়ে তুরস্কের দিকে যাচ্ছিল।
গত রোববারের হামলার মধ্য দিয়ে লোহিত সাগরে ছয় মাস ধরে চলা শান্তিপূর্ণ অবস্থার অবসান ঘটল। এর আগে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই বাণিজ্য পথটিতে ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত হুতিদের একের পর এক হামলায় সুয়েজ খাল হয়ে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়।
হুতি বিদ্রোহীরা তখন দাবি করেছিলেন, তাঁরা গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর এবং এই দুইয়ের সংযোগস্থল বাব আল-মান্দেব প্রণালিতে ১০০-এর বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছেন।
তবে চলতি বছর এই ধরনের হামলা বন্ধ ছিল। সর্বশেষ হামলার ঘটনা ঘটেছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ হ জট
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ