মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার শুরু
Published: 4th, August 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।
গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তার এক বছরের মাথায় এই মামলার মাধ্যমে সেই অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠন করা হয়। সেখানে প্রথম মামলা (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) ছিল এটি। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম শুনানি হয় ১৭ অক্টোবর। সেদিন এই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
গত ১২ মে এ মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরে ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)।
আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাঁদের আত্মসমর্পণ করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ, অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনসহ যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। আজ সোমবারও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য আছে।
এ মামলায় একমাত্র গ্রেপ্তার হওয়া আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মামলার কার্যক্রমের কিছু অংশ বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ৪ মামলাশেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জুলাই আদালত অবমাননার একটি মামলায় তাঁকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এটিই তাঁর প্রথম সাজা।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলা রয়েছে। ২৪ আগস্ট এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারিত রয়েছে।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে করা একটি মামলায়ও শেখ হাসিনা আসামি। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ১২ আগস্ট।
সর্বোচ্চ শাস্তি চান অ্যাটর্নি জেনারেলগতকাল বিচারকাজের শুরুতে ট্রাইব্যুনাল–১–এ বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
জুলাই বিপ্লবে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান বলেন, ৩৬ দিনে গুলি করে ৩০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে। প্রায় ২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তিনি সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান। আগামী প্রজন্মের জন্য এমন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে খুনের রাজনীতি বন্ধ হয়।
এরপর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে আসামি শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, নির্বাহী বিভাগের প্রধান, আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৪–দলীয় জোটের নেত্রী। ফলে সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। একনায়কতান্ত্রিক শাসক হিসেবে তিনি এককভাবে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন। তাঁর অধীন কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নে সর্বদা আগ্রহী ছিলেন।
জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখা—এ মন্তব্য করে তাজুল ইসলাম বলেন, অন্য আসামিরা তাঁর অধীনে থেকে বুঝতেন যে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার ওপরই তাঁদের নিরাপত্তা ও পুরস্কার নির্ভর করছে।
পলাতক আসামি আসাদুজ্জামান খান প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ও নীতিনির্ধারক এবং কথিত ‘গ্যাং অব ফোর’–এর সদস্য। আন্দোলন দমনের সব সিদ্ধান্ত তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে ‘কোর কমিটি’র বৈঠকে নেওয়া হতো। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন আইজিপি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তিনি এবং আসাদুজ্জামান খান নিজেরা উপস্থিত থেকে নিরস্ত্র ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার গুলি চালানোর নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা তদারকি করতেন।
শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন—এই তিনজনই সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের আসনে থেকে যৌথ অপরাধমূলক পরিকল্পনা (জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ) ও কমান্ড রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের দায়) মাধ্যমে তাঁদের অধীন বাহিনী ও দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের দিয়ে দেশব্যাপী প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেন। এর ফলেই ১ হাজার ৪০০-এর বেশি নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ছাত্র আন্দোলনকারী নিহত হন। তদন্তে সংগৃহীত প্রমাণের ভিত্তিতে এই তিনজনের কার্যকলাপ স্পষ্টভাবে দেখায় যে তাঁরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংঘটিত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বহন করেন।
প্রসিকিউশন ১১টি প্রতীকী ঘটনার ওপর মামলা কেন্দ্রীভূত করবে, যেগুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বাছাই করা হয়েছে। যাতে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিটি উপাদান প্রমাণিত হয় বলেও উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দি: শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনকে দায়ী করলেনসূচনা বক্তব্যের শেষ অংশে গণ–অভ্যুত্থানের ওপর দুটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। একটি ভিডিও ছিল গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার।
খোকন চন্দ্র বর্মণ গতকাল প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন। সেখানে সারা দিন আন্দোলন করে বাসায় ফিরে যান। পরদিন আন্দোলনের জন্য নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড় থেকে চাষাঢ়া এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পুলিশ ও বিজিবি তাঁদের ওপর গুলি চালায়। তাতে তাঁর সামনে এক ব্যক্তির বুকে গুলি লেগে মারা যেতে দেখেন। আরও অনেকে আহত হন। এর পর থেকে তিনি নিয়মিত আন্দোলনে যোগ দেন।
খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল ৯টা–সাড়ে ৯টার দিকে তিনি আন্দোলনে যোগ দিতে সাইনবোর্ড এলাকায় যান। অনেকক্ষণ স্লোগান ও মিছিল করে সেখানে থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী পৌঁছে দেখেন, পুলিশ গুলি করছে। একজন সেখানেই মারা যান। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী এসে ফাঁকা গুলি করলে পুলিশ যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরে চলে যায়। এর মধ্যে খবর আসে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তখন সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে তাঁদের ওপর গুলি করতে থাকে। তখন তিনি যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে পিলারের পেছনে লুকান। পুলিশ সেখানে গিয়ে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি করে। সেখানে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশের গায়ে গুলি লাগে এবং তাঁর হাত ও পায়ে গুলি লাগে।
এরপর ফ্লাইওভারের নিচে থাকা ড্রামের পেছনে আশ্রয় নিলে সেখানে পুলিশ তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে বলে উল্লেখ করে খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, কিন্তু গুলি তাঁর চোখ, নাক ও মুখে লাগে। তিনি ট্রাইব্যুনালে মাস্ক খুলে মুখ দেখান। দেখা যায়, তাঁর বাঁ চোখ, নাক ও মুখ পুরোটাই বিকৃত হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাশিয়া পাঠানো হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে মুখ থেকে কয়েকটি গুলি বের করা হয় বলে জানান খোকন চন্দ্র বর্মণ।
খোকন চন্দ্র বর্মণ ‘হাজার হাজার মানুষ’ হত্যার জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, ওবায়দুল কাদের, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও শামীম ওসমানকে দায়ী করেন এবং তাঁদের বিচার দাবি করেন।
পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণ জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁকে আমির হোসেন জেরা করেন। আমির হোসেন সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে দায়ী করলেন, তার দলিল আছে?’ জবাবে খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘না।’
আইনজীবী আমির হোসেনের আরেকটি প্রশ্ন ছিল, আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এতে যাত্রাবাড়ী থানার ১৩–১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আরও অনেক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের ওপর হামলায় ছাত্র–জনতা দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন এবং সেই অস্ত্রের আঘাতে আপনি আহত হয়েছেন? জবাবে খোকন চন্দ্র বলেন, ‘এসব কথা অসত্য।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ আল ম ম ন আস দ জ জ ম ন খ ন ত জ ল ইসল ম ম নবত ব র ধ আম র হ স ন গত বছর র অপর ধ র র জন য প রস ক এল ক য় এই ত ন ক ষমত আওয় ম তদন ত র ওপর আগস ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ: তথ্য উপদেষ্টা
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, সংবাদমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ। জনগণের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
রোববার রাজধানীর তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবার ও আহত এবং সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, মিডিয়ার ওপর জনগণের আস্থা ফেরাতে সংবাদমাধ্যমকে হতে হবে জবাবদিহিমূলক। সংবাদমাধ্যম যদি স্বাধীনতা চায়, তাকে জবাবদিহি করতেই হবে। যারা ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারের দালালি করেছে, তাদের কেউ জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কোনো হাউসকে (সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান) বাধ্য করিনি কিছু প্রচার করতে। তবে গত ছয় মাসে দেশের অনেকগুলো হাউস গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ও ঐক্যকে ভণ্ডুল করতে কাজ করেছে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের ১২ দফা নিয়ে কাজ করছি। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন, নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন—এসব নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা আহত সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সম্প্রচার নীতিমালার কথা ভাবছি এবং অনলাইন নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়িত হবে।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘কারফিউর সময়ে যে সাংবাদিকতা, বিশেষ করে টেলিভিশনের সাংবাদিকতা, আপনারা জানেন খুবই একপক্ষীয় ছিল। একটা রিলস বারবার দেখানো হচ্ছিল। বিটিভির ওখানে “পুড়ে গেছে সব”, “সব ধ্বংস”, “আগুন সন্ত্রাস”। হাসিনা যা বলত, ওই কথাগুলো বারবার টিভিতে দেখানো হচ্ছিল।’
তবে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় কয়েকটি হাউস খুব ভালো ভূমিকা রেখেছে। অনেক সাংবাদিক ব্যক্তি হিসেবে সাহস দেখিয়েছেন। পুরো কৃতিত্ব হাউসের নয়, সাংবাদিকদের। কিন্তু এই সুযোগ বারবার আসবে না। বারবার মানুষ জীবন দিতে পারে না। প্রতি ২০ বছর পরপর রক্ত দেওয়ার কোনো মানে হয় না।’
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এটা মাত্র শুরু। একটা নতুন বাংলাদেশের শুরু। কিন্তু নতুন বাংলাদেশ এক বছরেই বা দুই বছরে সম্ভব নয়। বরং এটা যদি অব্যাহত লড়াই থাকে, তাহলে সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে মাঠের সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ছিল বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সেরা সময়। আবার গত বছরের জুলাইয়ে আমরা সবচেয়ে খারাপ সাংবাদিকতাও দেখেছি।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘মেহেদী হাসান, তাহের জামান, আবু তাহের মো. তুরাব—এঁরা মাঠে নেমে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অন্যদিকে কিছু সাংবাদিক গণভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রশ্ন করেছেন, আপনি এখনো এদেরকে শায়েস্তা করছেন না কেন? খুন করছেন না কেন?’ এটি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও ধারণকারী সাংবাদিক তাওহীদুল হক সিয়াম ও দ্য ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক ইমরান হোসেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবার এবং আহত ও সাহসী ১৯২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননার পাশাপাশি আর্থিক সম্মানী হিসেবে মোট ৫৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।