জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।

গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তার এক বছরের মাথায় এই মামলার মাধ্যমে সেই অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠন করা হয়। সেখানে প্রথম মামলা (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) ছিল এটি। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম শুনানি হয় ১৭ অক্টোবর। সেদিন এই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

গত ১২ মে এ মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরে ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)।

আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাঁদের আত্মসমর্পণ করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ, অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনসহ যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। আজ সোমবারও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য আছে।

এ মামলায় একমাত্র গ্রেপ্তার হওয়া আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মামলার কার্যক্রমের কিছু অংশ বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ৪ মামলা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জুলাই আদালত অবমাননার একটি মামলায় তাঁকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এটিই তাঁর প্রথম সাজা।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলা রয়েছে। ২৪ আগস্ট এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারিত রয়েছে।

মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে করা একটি মামলায়ও শেখ হাসিনা আসামি। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ১২ আগস্ট।

সর্বোচ্চ শাস্তি চান অ্যাটর্নি জেনারেল

গতকাল বিচারকাজের শুরুতে ট্রাইব্যুনাল–১–এ বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে ফ্যাসিস্টদের জন্ম হয়েছে। এসব ফ্যাসিস্টের অনেকেই বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

জুলাই বিপ্লবে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান বলেন, ৩৬ দিনে গুলি করে ৩০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে। প্রায় ২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তিনি সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান। আগামী প্রজন্মের জন্য এমন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে খুনের রাজনীতি বন্ধ হয়।

এরপর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে আসামি শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, নির্বাহী বিভাগের প্রধান, আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৪–দলীয় জোটের নেত্রী। ফলে সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। একনায়কতান্ত্রিক শাসক হিসেবে তিনি এককভাবে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন। তাঁর অধীন কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নে সর্বদা আগ্রহী ছিলেন।

জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখা—এ মন্তব্য করে তাজুল ইসলাম বলেন, অন্য আসামিরা তাঁর অধীনে থেকে বুঝতেন যে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার ওপরই তাঁদের নিরাপত্তা ও পুরস্কার নির্ভর করছে।

পলাতক আসামি আসাদুজ্জামান খান প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ও নীতিনির্ধারক এবং কথিত ‘গ্যাং অব ফোর’–এর সদস্য। আন্দোলন দমনের সব সিদ্ধান্ত তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে ‘কোর কমিটি’র বৈঠকে নেওয়া হতো। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন আইজিপি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তিনি এবং আসাদুজ্জামান খান নিজেরা উপস্থিত থেকে নিরস্ত্র ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার গুলি চালানোর নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা তদারকি করতেন।

শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন—এই তিনজনই সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের আসনে থেকে যৌথ অপরাধমূলক পরিকল্পনা (জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ) ও কমান্ড রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের দায়) মাধ্যমে তাঁদের অধীন বাহিনী ও দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের দিয়ে দেশব্যাপী প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেন। এর ফলেই ১ হাজার ৪০০-এর বেশি নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ছাত্র আন্দোলনকারী নিহত হন। তদন্তে সংগৃহীত প্রমাণের ভিত্তিতে এই তিনজনের কার্যকলাপ স্পষ্টভাবে দেখায় যে তাঁরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংঘটিত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বহন করেন।

প্রসিকিউশন ১১টি প্রতীকী ঘটনার ওপর মামলা কেন্দ্রীভূত করবে, যেগুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বাছাই করা হয়েছে। যাতে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিটি উপাদান প্রমাণিত হয় বলেও উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দি: শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনকে দায়ী করলেন

সূচনা বক্তব্যের শেষ অংশে গণ–অভ্যুত্থানের ওপর দুটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। একটি ভিডিও ছিল গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার।

খোকন চন্দ্র বর্মণ গতকাল প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন। সেখানে সারা দিন আন্দোলন করে বাসায় ফিরে যান। পরদিন আন্দোলনের জন্য নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড় থেকে চাষাঢ়া এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পুলিশ ও বিজিবি তাঁদের ওপর গুলি চালায়। তাতে তাঁর সামনে এক ব্যক্তির বুকে গুলি লেগে মারা যেতে দেখেন। আরও অনেকে আহত হন। এর পর থেকে তিনি নিয়মিত আন্দোলনে যোগ দেন।

খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল ৯টা–সাড়ে ৯টার দিকে তিনি আন্দোলনে যোগ দিতে সাইনবোর্ড এলাকায় যান। অনেকক্ষণ স্লোগান ও মিছিল করে সেখানে থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী পৌঁছে দেখেন, পুলিশ গুলি করছে। একজন সেখানেই মারা যান। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী এসে ফাঁকা গুলি করলে পুলিশ যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরে চলে যায়। এর মধ্যে খবর আসে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তখন সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে তাঁদের ওপর গুলি করতে থাকে। তখন তিনি যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে পিলারের পেছনে লুকান। পুলিশ সেখানে গিয়ে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি করে। সেখানে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশের গায়ে গুলি লাগে এবং তাঁর হাত ও পায়ে গুলি লাগে।

এরপর ফ্লাইওভারের নিচে থাকা ড্রামের পেছনে আশ্রয় নিলে সেখানে পুলিশ তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে বলে উল্লেখ করে খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, কিন্তু গুলি তাঁর চোখ, নাক ও মুখে লাগে। তিনি ট্রাইব্যুনালে মাস্ক খুলে মুখ দেখান। দেখা যায়, তাঁর বাঁ চোখ, নাক ও মুখ পুরোটাই বিকৃত হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাশিয়া পাঠানো হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে মুখ থেকে কয়েকটি গুলি বের করা হয় বলে জানান খোকন চন্দ্র বর্মণ।

খোকন চন্দ্র বর্মণ ‘হাজার হাজার মানুষ’ হত্যার জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, ওবায়দুল কাদের, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও শামীম ওসমানকে দায়ী করেন এবং তাঁদের বিচার দাবি করেন।

পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণ জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁকে আমির হোসেন জেরা করেন। আমির হোসেন সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে দায়ী করলেন, তার দলিল আছে?’ জবাবে খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘না।’

আইনজীবী আমির হোসেনের আরেকটি প্রশ্ন ছিল, আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এতে যাত্রাবাড়ী থানার ১৩–১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আরও অনেক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের ওপর হামলায় ছাত্র–জনতা দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন এবং সেই অস্ত্রের আঘাতে আপনি আহত হয়েছেন? জবাবে খোকন চন্দ্র বলেন, ‘এসব কথা অসত্য।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ আল ম ম ন আস দ জ জ ম ন খ ন ত জ ল ইসল ম ম নবত ব র ধ আম র হ স ন গত বছর র অপর ধ র র জন য প রস ক এল ক য় এই ত ন ক ষমত আওয় ম তদন ত র ওপর আগস ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫

তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫

গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ