আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জামালপুর পৌরসভার এক কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁর মুক্তির দাবিতে পৌরসভার প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে থানায় অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নিলে ওই কর্মচারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

ওই কর্মকর্তার নাম মো. আবদুল খালেক। পৌরসভার টিকাদান সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত খালেক জামালপুর পৌরসভা কর্মচারী সংসদের সাবেক সভাপতি। তাঁর বাড়ি শহরের নাঙ্গজোড়া এলাকায়। তিনি জামালপুর পৌর শাখার ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য।

জামালপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল কি না, তা জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আবদুল খালেককে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে জানা যায়, তিনি হার্টের রোগী এবং অসুস্থ। মানবিক কারণে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নানা অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার বেলা দুইটার দিকে আবদুল খালেককে পৌরসভার কার্যালয় থেকে আটক করে সদর–থানা পুলিশ। এর কিছু পরেই পৌরসভার প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে সব সেবা বন্ধ করে দেন অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে থানা থেকে খালেককে ছাড়িয়ে আনতে থানা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন তাঁরা। পরে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান তালুকদার পুলিশের সঙ্গে দেনদরবার করে খালেককে ছাড়িয়ে আনেন। পরে রাজনৈতিক নেতার মতো তাঁকে সামনে রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হেঁটে পৌরসভায় যান। বিষয়টি নিয়ে শহরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, পৌরসভার বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সাবেক মেয়রের আশীর্বাদপুষ্ট। বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আওয়ামী লীগের আমলের। ফলে তাঁরা সবাই মিলে বড় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন পৌরসভায়। আজকের ঘটনা এটাই প্রমাণ করে। আবদুল খালেক আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবেই পরিচিত। অথচ আওয়ামী লীগের অনুসারী অন্য কর্মচারীরা পৌরসভায় তালা ঝুলিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে এনেছেন।

আবদুল খালেককে ধরার পর ছেড়ে দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জামালপুর সদর থানার ওসি তদন্ত মকবুল হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি পৌরসভার সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া তিনি এক হার্টের রোগী। সম্প্রতি তাঁর অস্ত্রপচার হয়েছে। মানবিক কারণে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থানায় অবস্থান নেওয়ার কারণে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা থানায় আবদুল খালেককে দেখতে এসেছিলেন। অবস্থান নেননি। তাঁকে ধরলেনই কেন? আবার তাঁকে ছেড়েই দিলেন কেন? এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতনরা যেভাবে বলেছেন, সেইভাবেই করেছি।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আবদুল খালেকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু ফোনটি ব্যস্ত দেখাচ্ছিল। ফলে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক এ কে এম আবদুল্লাহ-বিন-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছিলাম, পৌরসভার একজন কর্মচারীকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেছেন। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে পৌরসভার প্রধান ফটকে তালা ঝোলানোর বিষয়টি আমার জানা নেই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল খ ল ক প রসভ র প অবস থ ন ন কর মকর ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতদের ছাড় নয়: রিজভী 

বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্মে জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, “সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। যদি কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্মে করে তাদের কোন ছাড় নয়। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। একটি অসত্য সংবাদ রাষ্ট্র ও সমাজের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।”

শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রিজভী।

কোনো কিছু ঘটলেই বিএনপির ওপর দায় চাপানো যেন কারো কারো অভ্যাসে পরিনণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “সমাজবিরোধী কাজে যেই জড়িত হবে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকার কেনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং সরকারের মাঝে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “রাউজানে কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। অথচ, কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হলো এই অস্ত্রধারীরা বিএনপির লোক! কোনো প্রমাণ ছাড়া এগুলো লেখা দুঃখজনক। এই রাউজানে নানান অভিযোগে অনেক সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” 

বিএনপি ১৫ বছরের অত্যাচার-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। জুলাই-আগস্টে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। মানুষ হয়ত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু এখনও আত আতঙ্কমুক্ত নয় বলেও জানান রিজভী।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববাজারে যখন গমের দাম কমেছে তখন বাংলাদেশে এর দাম বেড়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্র এতে ব্যর্থ হলে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে সামাজিক অস্থিরতা।” 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতদের ছাড় নয়: রিজভী