Risingbd:
2025-09-19@04:50:13 GMT

কেন বাড়ছে ইলিশের দাম?

Published: 19th, September 2025 GMT

কেন বাড়ছে ইলিশের দাম?

ইলিশের ভরা মৌসুমে সাগরে ইলিশ শিকারে গিয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে খালি হাতে ফিরছে উপকূলের হাজার হাজার ট্রলার। একের পর এক লোকসানে পথে বসতে শুরু করেছেন মৎস্যজীবীরা।

জেলেরা বলছেন, অবৈধ ট্রলিং জাহাজে মাছ শিকার করায় ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের সংকট তৈরি হয়েছে। তাই নাগালের বাইরে ইলিশ, নাগালের বাইরে দাম।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বরগুনার পাথরঘাটার এফবি আর এস-১ ট্রলার ১৮ জেলেসহ ২ লাখ টাকার জ্বালানি-রসদ নিয়ে ইলিশ শিকারে যায় সাগরে। ছয় দিন সাগরে মাছ শিকার শেষে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বরগুনার পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে ফেরে ট্রলারটি। টানা ছয়দিনে সাগরে তিন বার করে মোট ১৮ বার জাল ফেলেছে জেলেরা। দুর্ভাগ্য, একটি ইলিশও পাননি এই ট্রলারের জেলেরা। ইলিশের জালে ভিন্ন প্রজাতির যে সব মাছ পেয়েছেন, তা বিক্রি করে ১৮ জন জেলে পারিশ্রমিক পেয়েছেন ১৩০০ টাকা করে। ছয় দিনে সাগরে মাছ শিকারের জনপ্রতি জেলের পারিশ্রমিক মাত্র ৭২ টাকা! যা দিন প্রতি ভাগে পড়েছে মাত্র ১২ টাকা! 

ট্রলারের মাঝি আনোয়ার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, “সাগরে ইলিশের অকাল চলছে, গভীর সাগরে দিনে তিনবার করে জাল ফেলে একটা ইলিশও পাইনি। আমাদের বড় ফাঁসের ইলিশ জাল, তাই ছোট মাছ জালে আটকায় না। চলতি মৌসুমে ইলিশ শিকারে গিয়ে প্রত্যেকবার লোকসান হয়েছে আমাদের।”

ট্রলারের জেলে জাহিদ, মনির, আবু-সালেহসহ অন্যান্য জেলেরা বলেন, ছয় দিন সাগরে থেকে ফিরেছি। ইলিশের জালে অন্য প্রজাতির সামান্য কিছু মাছ উঠেছে। সেসব বিক্রি করে ছয় দিন পর ভাগে পেয়েছি ৭২ টাকা। পরিবারের সামনে খালি হাতে উঠতে হবে। জানি না বাড়িতে চাল আছে কিনা।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এফ বি মুনিম-২ ট্রলারের মালিক ও মাঝি মোতালেব শিকদারের সাথে। তিনি বলেন, “জুন থেকে অক্টোবর ইলিশের প্রধান মৌসুম। অথচ এবার মৌসুমের শুরু থেকে বার বার ধারদেনা করে ১৮ জন জেলে নিয়ে সাগরে ইলিশ শিকারে যাই। প্রতিবার এটাই ভেবেছি এবার হয়তো মাছ পাব। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। আড়াই লাখ টাকা খরচ করে এসেছি সাগরে। অথচ মাছ বিক্রি করেছি মাত্র ২১ হাজার টাকার। তাও ইলিশ না, অন্য প্রজাতির মাছ।”

এফ বি সাফিন ট্রলারের জেলেরা বলেন, গোটা মৌসুমে লোকসানের মুখে আমরা। মালিক দেউলিয়া হওয়ার পথে। স্ত্রী-সন্তানদের দুই বেলা খাবার দিতেও ধারদেনা করতে হচ্ছে। 

ট্রলার মালিকরাও লোকসানের মুখে পথে বসতে শুরু করেছেন। এফ বি আব্দুল্লাহ কোম্পানির মালিক আবুল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার কোম্পানির ছয়টি ট্রলারের মধ্যে চারটি ট্রলার শুধু ইলিশ শিকার করে। কিন্তু ইলিশ ধরা না পড়ায় ৮ ট্রলারের ৭৬ জন জেলে এখন বেকার। আমিও লোকসানের ভার আর কতো বহন করব?”

তিনি আরো বলেন, ‘‘সাগর ও নদী মোহনায় অবৈধ জালে মাছ শিকারে ধ্বংস হয়েছে ইলিশ সম্পদ। আমরা গত ১০ বছর ধরে অবৈধ জালের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। প্রশাসন কিছুটা কঠোর হয়ে জাল বন্ধে অভিযান করেছিলো। তবে, গত দেড় বছর ধরে অসাধু জেলেরা আবার সক্রিয় হয়েছে। মশারি নেট দিয়ে ইলিশের ডিমসহ সকল ধরনের মাছ নষ্ট করছে। তাই এখন আর ইলিশের দেখা মেলে না। সাগরে এখন পানি আছে, ইলিশ নেই।”

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “অবৈধ জালে মাছ শিকারের কারণে ইলিশ শূণ্য সাগর ও নদী। পাথরঘাটায় দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রলার মাছ বিক্রি করতে আসে। সব ট্রলারের চিত্র একই রকম। একদিকে অবৈধ জাল অন্যদিকে অবৈধ ট্রলিং জাহাজে মাছ শিকারে ধ্বংস হয়েছে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের ডিম ও রেণু।”

বরগুনা জেলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.

মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, “সাগর ও নদীতে ইলিশসহ মাছের প্রজনন বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমরা জেলেদের অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধে সচেতন করছি। তবে, জেলেরা অবৈধ জাল বন্ধ না করলে আমাদের কঠোর হবার বিকল্প নেই।”

সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসকে বিশেষভাবে ভরা মৌসুম বলা হয়, কারণ এই সময়ে ইলিশ মাছ বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। সাগরের পানির খানিকটা মধ্যভাগে পেটে ডিম নিয়ে ঘোরাঘুরি করে ইলিশ। তাই এই সময়ে জেলেদের জালে বেশি মাছ ধরা পড়ে।

তবে, চলতি ইলিশ মৌসুমে ইলিশ যেন সোনার হরিণ। বরগুনা খুচরা মাছ বাজারে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাছ বিক্রি করেন মো. জলিল। প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার। তিনি বলেন, “প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে এই বাজারে সব থেকে বেশি ইলিশ আমি বিক্রি করি। গত আড়াই মাস ধরে ইলিশের মৌসুম চলছে, অথচ আমি দিন রাত মিলিয়ে ১০ কেজির উপরে মাছ জেলেদের থেকে কিনতে পারিনি।”

মো. জলিল বলেন, “বিগত ইলিশ মৌসুমে প্রতিদিন ১০/২০ মণ ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হতো এই খুচরা মাছ বাজারে। কিন্ত এ বছর এই বাজারে ১৫ দিনেও পাঁচ মণ ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়নি। একদিকে জেলেদের জালে মাছ কম, আবার অন্যদিকে চাহিদার থেকে ইলিশের দাম অনেক বেশি।”

প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় মো. জলিলের কাছে ৭০০ গ্রামের তিনটি ইলিশ মাছ ছিল। ক্রেতা হিরণ মিয়া এসেছেন মাছ কিনতে। তিনি বলেন, “৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি প্রতি দাম চেয়েছেন ১৭০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে ইলিশ মাছ কেনা অসম্ভব। এই টাকায় সারা মাসের অন্য মাছ কেনা যায়।”

একাধিক ক্রেতা জানান, প্রতিদিন যেকয়টি ইলিশ এই বাজারে পাওয়া যায় তার দাম মধ্য বিত্তদের নাগালের বাইরে। বিগত বছরগুলোর থেকে তিন গুন দামে বিক্রি হয় ইলিশ। 

দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটায়। পাইকারি এই বাজার থেকে প্রতিদিন ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাঠানো হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। 

পাইকারি এই বাজারের ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া বলেন, “জেলেদের জালে ইলিশ কম ধরা পড়ায় মাছের দাম বেশি।”

পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী তৌহিদুর রহমান বলেন, “স্থানীয় নদীতে কিছু ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়লেও খরচের হিসেব করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। লোকসানের মধ্যেও মৎস্যজীবীদের পেটের তাগিদে এখনো ব্যবসা করে যাচ্ছি।”

রাসেল কোম্পানির মালিক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি অনেকে লেখালেখি করে- ‘ইলিশকে খাবার কিনে খাওয়াতে হয় না, তারপরও দাম বেশি কেনো?’ একদিকে সাগরে ইলিশ মাছ অনেক কম অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ৫ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত থাকে। সেই সময়ে তাদের চাল, ডাল, তেল, হলুদ-মরিচসহ সব খাবার কিনে দিতে হয়। এই টাকাটাও আমাদের ওঠে না ইলিশ বিক্রি করে।”

তিনি আরো বলেন, “ছোট থেকে বড় ট্রলার তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা। এরপর আমাদের খরচের টাকাও উঠছে না। শত শত ট্রলার মালিক এখন পথে বসেছেন। তাই কিছুটা বেশি দামে আমরা মাছ বিক্রি করি, যাতে জেলেদের পরিবার অনাহারে না থাকে।”

আড়তদাররা বলছেন, সাগরে ইলিশ সংকটে পেশা গুটিয়ে আনছেন অনেক মৎস্যজীবী। মুন্নী ফিস-এর আড়তদার জামান বলেন, “ইলিশের ভরা মৌসুমে যে পরিমাণ সংকট, এটা এর আগে কখনো ছিল না। অনেক আড়তদার ব্যবসা গুটিয়ে পালিয়ে গেছেন।”

আল্লাহর দান ফিস- এর ম্যানেজার সাইফুল বলেন, “আমরা মাছের ব্যবসা করি, অথচ আমরাও বছরে দুই দিন ইলিশ খেতে পারি না। চলতি মৌসুমে ইলিশ কম ধরা পড়েছে, আমার বিশ্বাস আগামী বছর আর জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়বে না, আমরা বিক্রিও করতে পারব না।”

এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জিএম মাসুদ শিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “ইলিশ মাছ অবতরণকেন্দ্রে আসছে না বললেই চলে। জেলেরা ইলিশ মাছ খুব কম পাচ্ছেন, তাই দাম বেশি। গত বছর এই অবতরণকেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ থেকে ৬ কোটি টাকার ইলিশ মাছ বেচাকেনা হয়েছে। জেলেদের বিক্রি করা মাছের প্রতি ১০০ টাকায় ১ টাকা ২৫ পয়সা রাজস্ব পায় সরকার। কিন্তু এ বছর গড়ে প্রতিদিন ইলিশ বিক্রি হয় ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মণ। এই সংখ্যা বিগত ইলিশ মৌসুমের থেকে অন্তত ৮০ ভাগ কম।”

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মৎস য অবতরণ ক ন দ র র অব ধ জ ল এই ব জ র প থরঘ ট র ব যবস আম দ র ছয় দ ন বরগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আকাশে দুই উড়ন্ত গাড়ির সংঘর্ষ

গন্তব্য নির্বাচন করলেই যাত্রীদের নিয়ে উড়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিতে পারে উড়ন্ত গাড়ি। হেলিকপ্টারের আদলে খাড়াভাবে ওঠানামাও করতে পারে। ফলে রানওয়ের বদলে শহরের যেকোনো স্থানে যাত্রী ওঠানামা করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে না এলেও এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের তৈরি উড়ন্ত গাড়ির পরীক্ষা করে সফল হয়েছে। তবে সম্প্রতি চীনের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় শহর চ্যাংশুনে এয়ার শোর মহড়ায় মাঝ–আকাশে দুটি উড়ন্ত গাড়ি বা ফ্লাইং কারের সংঘর্ষ হয়েছে। চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা এক্সপেংয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এক্সপেং অ্যারোএইচটির তৈরি গাড়িগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উড়ন্ত গাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

এক্সপেং অ্যারোএইচটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মহড়ার সময় দুটি উড়ন্ত গাড়ি একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এর মধ্যে একটি অবতরণের সময় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা সবাই নিরাপদে আছেন। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর বরাতে জানিয়েছে, এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন।

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি গাড়ি মাটিতে পড়ে জ্বলছে এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। এক্সপেং অ্যারোএইচটি জানিয়েছে, গাড়িটির ফিউজলাজে (গায়ের কাঠামোতে) গুরুতর ক্ষতি হয়ে আগুন ধরে যায়। তবে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জরুরি ব্যবস্থা নেয়।

অ্যারোএইচটির তৈরি বৈদ্যুতিক উড়ন্ত গাড়িগুলো উল্লম্বভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণে করতে পারে। প্রতিটি গাড়ির সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় তিন লাখ ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক্সপেং অ্যারোএইচটি জানিয়েছিল, ইতিমধ্যে তিন হাজার উড়ন্ত গাড়ির ফরমাশ পাওয়া গেছে।

গত বছর ইউরোপের একটি উড়ন্ত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিনেছে এক্সপেং অ্যারোএইচটি। এর মাধ্যমে ইউরোপের বাজারেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো উড়ন্ত গাড়ির বাজারেও নেতৃত্ব নিতে চায় চীন।

সূত্র: বিবিসি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আকাশে দুই উড়ন্ত গাড়ির সংঘর্ষ