ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ খুব সতর্কতার সঙ্গে এবং নির্ভুলভাবে করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই নির্দেশ দেন। নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই মিলে এই জাতিকে একটা ভালো ভোটার তালিকা উপহার দিই।’

‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা’ বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফরোজা খাতুন প্রমুখ।

নির্বাচন কমিশনার মো.

আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তাদের দেশপ্রেমের কমিটমেন্ট দেখে আমরা অভিভূত। তারা আমাদের বলেছে, আপনারা নির্বাচন কমিশনার হয়ে আসছেন, আমরা খুশি। কিন্তু ভালো ভোট যদি উপহার দিতে না পারেন, আপনাদেরও আমরা ছাড়ব না, তারা এটা আমাদের সরাসরি বলেছে। তারা নির্ভেজাল গণতন্ত্র চায়। ভালো নির্বাচন না হলে তারা আবারও আন্দোলনে নামবে বলেও আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। তাই শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও জাতির স্বার্থে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। আমি আশা করি, সবাই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।’

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ একটাই, সেটা হলো মনকে ঠিক করা। উদ্দেশ্য মহৎ থাকলে চ্যালেঞ্জ কোনো কিছু না। ১ শতাংশ ত্রুটিও যদি নির্বাচন কমিশনের থাকে, সেটি থাকা উচিত না। জনগণের থাকতে পারে, বুঝে হোক না বুঝে হোক, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য হোক—এটা তারা করবেই। দালালমুক্ত করা এটা কোনো কঠিন কাজ না। সাবধান করে দিচ্ছি, এটি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, আমাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হবে।’

আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এনআইডি নিয়ে বিগত দিনে অনেক বদনাম আছে। তাই আমাদের সতর্কতার সঙ্গে নির্ভুল ভোটার লিস্ট করতে হবে। জাতিকে ভালো ও নির্ভেজাল ভোটার তালিকা উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।’

৩৫ লাখ নতুন ভোটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভালো একটি নির্বাচন করার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার, আমাদের তা–ই করতে হবে। সেটার পূর্বশর্ত হলো একটি সুষ্ঠু, ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। সেটার দায়িত্ব আপনাদের। এই দায়িত্ব যদি আপনারা পালন না করেন, তাহলে কিন্তু বিপদ আছে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!

সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। 

এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।  

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। 

এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন। 

এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। 

এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।

একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।

নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।

যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।  

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়। 

২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
  •  শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা চান নাই : টিপু 
  • নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাথে গিয়াসউদ্দিনের মতবিনিময় সভা
  • সোনারগাঁয়ে ইসলামী আন্দোলনের পরিচিতি সভা ও শপথ গ্রহণ  
  • বন্দর ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ 
  • তেল চোর দেলোয়ারকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন : টিপু
  • নারায়ণগঞ্জে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৫ বিএনপি নেতা বহিষ্কার
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু
  • কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও সদস্য ফরম বিতরণ
  • সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!