সুন্দরবনে শিকারিদের হামলায় বন কর্মকর্তা আহত
Published: 3rd, November 2025 GMT
সুন্দরবনে হরিণ শিকারীদের হামলায় পূর্ব বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব আহত হয়েছেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ডিমেরচর এলাকায় হামলা করা হয়। পরবর্তীতে তিন শিকারিকে আটক করেছে বনরক্ষীরা।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল্লাহ জানান, হরিণ শিকারিদের আক্রমণে একজন বন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
হরিণ শিকারের ফাঁদে আটকা পড়ল বানর
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে ৮ ফুট লম্বা অজগর অবমুক্ত
তিনি আরো জানান, বন বিভাগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তারা অভিযোগ দিলে এবং আসামিদের হস্তান্তর করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আটকরা হলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার সুগন্ধি গ্রামের রাফি হাসান (২৬), রামপাল উপজেলার সোনাতুনিয়া গ্রামের শহিদ মল্লিক (২৮) ও একই উপজেলার ঝালবাড়ি গ্রামের আল আমিন আকুঞ্জি (২৭)।
আহত সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেব বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণি রক্ষা ও হরিণ শিকাররোধে বনরক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে ডিমেরচর এলাকায় বনের ভেতরে হেঁটে টহল দিচ্ছিলাম। বনের মধ্যে হরিণ ধরার জন্য পেতে রাখা একাধিক ফাঁদ দেখতে পাই। সেখানে চার থেকে পাঁচজন শিকারিকেও দেখতে পাই। আমি দৌড়ে গিয়ে একজনকে ধরে ফেললে বাকি শিকারিরা ফিরে এসে আমাকে মারধর করে ধৃত শিকারিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’’
পরে বনরক্ষীরা ঘটনাস্থল থেকে ১৮টি হাঁটা ফাঁদ উদ্ধার করেন বলে জানান তিনি।
আহত রানা দেবকে তাৎক্ষণিকভাবে দুবলারচরের অস্থায়ী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলার পরপরই বনরক্ষীরা অভিযান চালিয়ে তিন শিকারিকে আটক করে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী ও শরণখোলা রেঞ্জের অন্যান্য কর্মকর্তারা রাস পূজার দায়িত্ব পালনের জন্য দুবলার চরে অবস্থান করায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বনভ ম কর মকর ত স ন দরবন বনরক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব। পূর্ণিমার তিথিতে পুণ্যস্নান ও পূজার মধ্য দিয়ে এই উৎসব উদ্যাপন করা হয়। এরই মধ্যে সাগরতীরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে এবারও রাস উৎসবে কোনো মেলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে না।
রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনে প্রবেশে কড়া বিধিনিষেধ জারি করেছে বন বিভাগ। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরাই বন বিভাগের নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে আলোরকোলে যেতে পারবেন। অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী বা পর্যটকের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
খুলনার কয়রা উপজেলার কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন থেকে আজ সকালে ৩০ জনের একটি পুণ্যার্থী দল রওনা হয় দুবলার চরের উদ্দেশে। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা। তিনি বলেন, ‘৩৫ হাজার টাকায় ট্রলার ভাড়া করেছি। তিন দিনের বাজার-সদাই সব সঙ্গে নিয়েছি। ট্রলারেই রান্না ও খাওয়া চলবে। সবাই আনন্দ নিয়ে যাচ্ছেন। ভালোভাবে ফিরে এলেই আমাদের সফলতা।’
কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনজিত কুমার রায় বলেন, ‘সুন্দরবনের বাটুলা নদী পেরিয়ে দুবলার চরের দিকে যাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলে (মুঠোফোন) নেটওয়ার্ক থাকবে না। তবে সবাই খুব আনন্দে আছে। পূর্ণিমায় জোয়ারের নোনাজলে স্নান করলে পাপমোচন হয় এই বিশ্বাস নিয়েই যাচ্ছি।’
কয়রার গুড়িয়াবাড়ী গ্রামের সুব্রত কুমার মণ্ডল বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। মাঝারি আকারের ট্রলার ভাড়া করেছেন তিন দিনের জন্য। বাজার-সদাই সব করে সকালে রওনা দিয়েছেন ২০ জন পুণ্যার্থী নিয়ে।
রাস উৎসব উদ্যাপন কমিটি ও দুবলার চর ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘তিথি অনুযায়ী আজ থেকে পূজা শুরু হচ্ছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আলোরকোলে রাধা-কৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দির তৈরি করা হয়েছে। ৫ নভেম্বর ভোরে সাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে পুণ্যার্থীরা ফিরে যাবেন। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এ বছর শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরাই অংশ নিতে পারবেন। পর্যটকদের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুণ্যার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য পাঁচটি নির্ধারিত রুটে টহল দল মোতায়েন আছে। সবার জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও নৌযান থামানো যাবে না। এ বছরও রাস উৎসব উপলক্ষে কোনো মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে জানান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল। তিনি বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী সাধু হরিভজন প্রথম দুবলার আলোরকোলে রাস পূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই ধর্মীয় পূজাই লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ রয়েছে।
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, অতীতে কিছু পুণ্যার্থী বা জেলের ছদ্মবেশে হরিণশিকারিরা বনে ঢোকার সুযোগ নিতেন, তাই এবার উৎসব চলাকালীন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলে, পর্যটক ও সাধারণ মানুষের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার রাতে সুন্দরবনের গহিনে ট্রলারে বন বিভাগের পতাকা লাগিয়ে হরিণ শিকারের চেষ্টা করার সময় সাতজনকে আটক করেছেন বনরক্ষীরা। তাঁদের কাছ থেকে ১০০টি ফাঁদ, ২টি ট্রলার, ১টি বন বিভাগের পতাকা ও ৪টি মাংস রান্নার পাতিল জব্দ করা হয়েছে।