শান মাসুদের ব্যাটে প্রথম দিন এগিয়ে পাকিস্তান
Published: 20th, October 2025 GMT
লাহোর টেস্ট শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডির প্রথম দিনের খেলা দেখে মনে হলো যেন সময় থেমে গেছে সেখানেই। একই রকম চিত্র- ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ নেয় ম্যাচের, স্কোরবোর্ডে জমে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান। টস জিতে ব্যাটিং নেয়া পাকিস্তান আবারও প্রমাণ করল কঠিন পিচে ধৈর্য ধরে খেলাই তাদের মূল শক্তি।
রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে এখনো তেমন স্পিন না ধরলেও বেশ ধীর। মাঝে মাঝে বল নিচু হচ্ছে। পুরনো বলে রিভার্স সুইংও পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডার ধীর গতিতে হলেও সামলে নিয়েছে ইনিংস। রানরেট ছিল তিনেরও নিচে। কিন্তু দিনে মাত্র পাঁচ উইকেট হারিয়ে শেষ করায় তারা নিশ্চয়ই খুশি।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের ঘূর্ণিতে দিশেহারা দক্ষিণ আফ্রিকা
চার ফিফটিতে প্রথম দিন পাকিস্তানের
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দিনের শেষে আফসোসে পুড়ছে। তারা চারটি সহজ ক্যাচ ফেলেছে- আব্দুল্লাহ শফিকের তিনবার (০, ১৫ ও ৪১ রানে) আর শান মাসুদের একবার (৭১ রানে)। তাছাড়া অন্তত সাতটি বল স্লিপ বা শর্ট লেগে পড়ে গেছে অল্পের জন্য। সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে পাকিস্তান হয়তো অনেক কঠিন অবস্থায় পড়ত।
পাকিস্তানের ইনিংসের ভিত গড়ে দ্বিতীয় উইকেটে শফিক ও মাসুদের ১১১ রানের জুটি। শান মাসুদ দলীয় সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন। আর শফিক করেন ধৈর্যশীল ৫৭। সৌদ শাকিল দিনের শেষে অপরাজিত ৪২ রানে ক্রিজে আছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন কেশব মহারাজ। প্রথম ওভারেই কাগিসো রাবাদার বলে শফিকের ক্যাচ ফেলেন ট্রিস্টান স্টাবস। এরপর রাবাদার বলেও দুবার ইমাম-উল-হক স্লিপের সামনে বল ফেলে দেন। বাঁহাতি মার্কো জানসেনের এক বল শফিকের স্টাম্প ছুঁয়ে গেলেও বেল পড়েনি। নিয়তির মতোই বেঁচে যান ওপেনার। এরপর কেশব মহারাজের হাতে শফিকের একটি রিটার্ন ক্যাচও হাতছাড়া হয়।
অবশেষে সাইমন হার্মার ভাঙলেন সেই জুটি। ইমামকে বোল্ড করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দেন প্রথম উইকেট। তার পরের ওভারেই মাসুদের ক্যাচের অল্প সুযোগও মিস করে প্রোটিয়ারা।
প্রথম ১৬ ওভারে পাকিস্তানের রানরেট ছিল ঘণ্টায় ২.
দুপুরে লাঞ্চে যায় পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে ১ উইকেটে ৯৫ রান রেখে। এরপর ধীরে ধীরে এগোয় ইনিংস। শফিক আবারও একাধিক সুযোগ দেন। কিন্তু ক্যাচ ধরতে না পারায় বেঁচে যান বারবার। অবশেষে ১২০ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে তিনি ৫৭ রান করে আউট হন, হার্মারের বলে উইকেটকিপারের হাতে।
এরপর বাবর আজম নামতেই যেন মাঠে নতুন উদ্দীপনা। কভার ড্রাইভে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন। কিন্তু মাসুদের জীবনদান দক্ষিণ আফ্রিকার হতাশা বাড়ায়। বাবর মহারাজের বলে ক্যাচ দেন মুথুসামির কাছে, কিন্তু সেটিও হাতছাড়া হয়। এরপর মহারাজের এলবিডব্লিউ রিভিউও ব্যর্থ হয়। আল্ট্রা-এজে স্পষ্ট দেখা যায় ব্যাটে লেগেছিল।
অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এল এক ‘ম্যাজিক মুহূর্ত’। বাবর এবার মহারাজের বল রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। বলটা লাফিয়ে উঠে যায় সিলি মিড-অফে। সেখানে টনি ডি জর্জি অবিশ্বাস্য এক ডাইভ দিয়ে মাটি ছুঁয়ে ক্যাচ ধরেন। পাকিস্তান তখন ৩ উইকেটে ১৭৭।
বিকেলে জানসেন পুরনো বলে রিভার্স সুইং কাজে লাগিয়ে বিপদ তৈরি করেন। শান মাসুদ শতকের দিকেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু মহারাজকে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজে জানসেনের হাতে ধরা পড়েন।
শেষ দিকে শাকিল ও সালমান আলী আগা ধীরে ধীরে দলকে স্থিতিশীল করেন। রাবাদা নতুন বল তুলে নিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউ করে দিনের শেষ উইকেট নেন। ৯১ ওভারের দিন শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২৫৯।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা দিয়ে পথ দেখালে তরুণেরা পথ হারাবে না
দৃঢ় মনোবল আর প্রচেষ্টা থাকলে কোনো বাধা পেরোনোই কঠিন নয়। দরকার ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রম। আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজেদের জীবনগাথায় লিখে চলেছেন অদম্য জয়ের গল্প। তাঁদের সেই সাফল্য ব্যক্তিগত অর্জনের সীমানা পেরিয়ে সমাজের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। তেমনই কয়েকজনের গল্প নিয়ে ধারাবাহিক এ আয়োজন। আজ জানব রংপুর সদরের খলেয়া ইউনিয়নের দেওরা গ্রামের বানিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাজিম ইসলামের জীবন-গল্প। (শুরুতেই একসার্পট আকারে যাবে)
রংপুর সদরের খলেয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রাম দেওরা। এই গ্রামের বানিয়াপাড়ায় এক সাধারণ পরিবারে আমার জন্ম। আমি শাজিম ইসলাম। আমার তারুণ্য ছিল অন্ধকারে ঢাকা। ২০ বছর বয়সে সঙ্গদোষে নেশার কবলে পড়ি। নেশার ঘোরে চারপাশের সবাইকে তুচ্ছ ভাবতাম, অবহেলা করতাম। বিশেষ করে আমার বয়সী কারও সঙ্গে বনিবনা হতো না। সব সময় মেজাজ খিটখিটে থাকত। সবার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করতাম। রগচটা আর বদমেজাজের কারণে সবাই আমাকে ভয় পেত। পরিচিতরা এড়িয়ে চলায় নিজেকে খুব বদ্ধ জগতের মানুষ মনে হতো। এই জগৎ থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
নেশায় আসক্ত থাকায় লেখাপড়াও বেশি দূর এগোতে পারিনি। পরিবারের কেউ আমার ওপর ভরসা করতে পারত না। ঘরে-বাইরে মানুষের এত অসম্মান আমাকে অনেক পীড়া দিচ্ছিল। তখন লক্ষ করলাম, আমার স্বভাবের কারণে অনেকেই কটু কথা বললেও অন্ধকার থেকে আলোতে আনার পথ দেখাত না। আর নেশার ঘোরে আমার রাত-দিন পার হতে থাকে।
এর মধ্যে আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়, যদিও তার বয়স কম ছিল। পরিবারের সবাই ভেবেছিল বোন অনেক সুখী হবে। কিন্তু তা হলো না। তার কষ্ট দেখে আমার উপলব্ধি হয়, অধিকাংশ পুরুষ নারীদের মর্যাদা দেয় না। নারীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। বোনের সংসারজীবনের কষ্ট আমাকে ভাবনায় ফেলে।
নিজেকে বদলানোর সুযোগ খুঁজি। একদিন খবর পাই আমাদের গ্রামে ব্র্যাকের একটি প্রকল্প আছে, যেখানে আমার বয়সী ছেলেমেয়েরা যায়। নিয়মিত বৈঠক করে। ‘অধিকার এখানে, এখনই’ (আরএইচআরএন) নামে তরুণদের গ্রুপে লিঙ্গসমতা, অধিকার আর আবেগ বা রাগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা বলা হয়।
প্রথমে এ ধরনের প্রকল্পের কথা শুনে হাসতাম। বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-তামাশাও করেছি। তবে একদিন কৌতূহলবশত আরএইচআরএনের ওই সেশনে যাই। এরপর মনে হলো, অন্ধকারে বসবাস করা আমি আলোর দেখা পেয়েছি। বৈঠকগুলোতে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। বুঝলাম, আমি ভালোবাসা আর সম্মানের কাঙাল ছিলাম। তাদের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। নতুন করে অন্ধকার থেকে আলোর পথের দিশা পাই।
সেই প্রকল্প থেকে ইলেকট্রিক্যাল আর হাউস ওয়্যারিংবিষয়ক প্রশিক্ষণ নিই। এরপর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন বাসাবাড়ি এবং নির্মাণাধীন ভবনে কাজ শুরু করি। যেকোনো ইলেকট্রিক্যাল কাজের সমাধান করতে শিখি। ফ্যান, মোটর, রাইস কুকার মেরামত কিংবা ওয়্যারিং কাজে আমার দক্ষতার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আমার ব্যবহারেও অনেক পরিবর্তন আসে। মানুষকে সম্মান আর সমীহ করে কথা বলতে শিখি। বিনিময়ে হারানো ভালোবাসা আর সম্মান ফিরে পাই।
বৈদ্যুতিক কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে মূলধারায় ফেরেন শাজিম। ধীরে ধীরে হারানো সম্মান ও ভালোবাসার দেখা পান