জিয়াউর রহমান ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগণ্য সেনানায়ক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনার গাড়িগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সকে টার্গেট করে এগিয়ে আসছিল। সে রাতেই তারা পরিচালনা করে ইতিহাসের নৃশংস গণহত্যা। এমন পরিস্থিতিতে জাতি যখন দিশেহারা, তখন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী থেকে বিদ্রোহ করেন সময়ের সাহসী বীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। 

ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর অপারেশনের খবর পেয়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে জিয়াউর রহমান তাঁর কমান্ডিং অফিসারসহ অন্যান্য পাকিস্তানি অফিসার ও সৈন্যকে বন্দি করেন। পরদিন ২৬ মার্চ প্রাণভয়ে পলায়নপর মানুষকে থামিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্দীপনাময় ভাষণ দিতে শুরু করেন মেজর জিয়া। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিজ কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৭ মার্চ সারাদিন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ পক্ষে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা বারবার প্রচার হতে থাকে। মুক্তিকামী জনতা নতুন উদ্দীপনায় ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে। শুরু হয় ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ।

মেজর জিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১১ সেক্টর কমান্ডারের একজন ছিলেন। ৪৯ জন যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধাকে ১৯৭২ সালে সরকার সর্বোচ্চ বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করে। তিনি তাদের একজন ছিলেন। কিন্তু তিনি সেক্টর কমান্ডার ও বীরউত্তম খেতাবধারীদের মধ্যেও অনন্য ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে।
মেজর জিয়া চট্টগ্রাম যুদ্ধাঞ্চলে ১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে বহু আলোচিত যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষভাগে সিলেট অঞ্চলে তাঁর বাহিনীর কাছেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী যুদ্ধে তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম শক্তিশালী প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে। কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। প্রথমত, শক্তিশালী সম্প্রচার কেন্দ্রে বারবার সম্প্রচারিত হওয়ার ফলে জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাটিই কেবল দেশের সব অঞ্চল থেকে বহু মানুষ শুনতে পেয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণের মুখে দিশেহারা ও পলায়নপর অবস্থায় এটি মানুষের কাছে তূর্য ধ্বনির মতো উদ্দীপনা 
সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয়ত, জিয়ার ঘোষণাটি ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন বিদ্রোহী বাঙালি অফিসারের এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে। এটি মানুষকে প্রতিরোধের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রবলভাবে আশান্বিতও করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানীর নির্দেশে অক্টোবর মাসে পুরো জেড ফোর্স নিয়ে মেজর জিয়া চলে আসেন সিলেটে। এর তিনটি ব্যাটালিয়ন শ্রীমঙ্গল, ছাতক ও কুলাউড়ায় অবস্থান নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা ও ক্যাম্পে সরাসরি হামলা চালায়। ১০ ডিসেম্বর এই ফোর্স সিলেট আক্রমণ শুরু করে। ১৪ তারিখ তারা সিলেটে প্রবেশ করে। যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তিনি একদিন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন; সিলেটে ১২৫ জন অফিসার, ৭০০ সৈন্যসহ সেই বাহিনীর একটি অংশ তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান ছিল অপরিসীম। স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া ছাড়াও যুদ্ধ পরিচালনা ও যুদ্ধ প্রশাসনের নীতিনির্ধারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। জিয়া ছিলেন এই যুদ্ধে মহানায়কের মতো। আরও ছিলেন খালেদ মোশাররফ, আবু তাহের, আবু ওসমান, এমএ জলিল, রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য সেক্টর কমান্ডার।
মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি ছিল একটি জনযুদ্ধ; বহু সাধারণ মানুষের অসাধারণ আত্মত্যাগ আর শৌর্য-বীর্যের এক অনুপম গৌরবগাথা।

মেজর জিয়াউর রহমান আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের এমনই এক অবিনশ্বর নক্ষত্র। আজ জন্মদিনে তাঁকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। 

আব্দুল্লাহ যোবায়ের: শিক্ষক ও গবেষক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র কম ন ড র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমিতাভের চিরকুট কিংবা ফ্যাশন নিয়ে রাধিকার ১০ প্রশ্নের জবাব, ১০ ছবি

ভারতে ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় ঝাঁপ দিয়ে সফলতার হার কম। রাধিকা মাদানের নামটি এই ছোট তালিকায় আছে। ছোট পর্দায় ‘মেরি আশিকি তুমসে হি’ সিরিয়ালের পর সোজা ‘পটাকা’ সিনেমা দিয়ে নিজের অভিষেক ঘটালেন বলিউডের বড় পর্দায়। তারপর ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’ ছবিতে দর্শক আর সমালোচক—এই দুই বিপরীতমুখী দলেরই প্রশংসা কুড়ালেন। অল্প দিনে তিনি পেয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ছবিগুলোর একটি—‘আংরেজি মিডিয়াম’।
আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৯৫ সালে ১ মে দিল্লির একটি পাঞ্জাবি পরিবারে জন্ম রাধিকার।

মথুরা রোডের দিল্লি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা। তারপর জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন। রাধিকার বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং মা চিত্রশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি কৌতূহল ছিল তাঁর। জ্যাজ, হিপ-হপ, ব্যালে—সব রকম নাচে প্রশিক্ষিত তিনি। নিজের নাচের স্কুলও খুলে ফেলেছিলেন।

রাধিকা—সারাক্ষণই ক্রিকেট খেলতে ব্যস্ত থাকতেন আর আচরণ ছিল টম-বয় প্রকৃতির। কখনো অভিনয়ে আসার কথা ভাবেননি রাধিকা। নাচ নিয়েই থাকবেন ভেবেছিলেন।

ছোটবেলায় আরও একটা কারণে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে খুব পরিচিত ছিলেন কিন্তু একটা অনুষ্ঠানে একতা কাপুরের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। রাধিকার সারল্য ও সৌন্দর্য মন ছুঁয়ে গিয়েছিল একতা কাপুরের।

২০১৪ সালে একতা কাপুরের রোমান্টিক ড্রামা ‘মেরি আশিকি তুম সে হি’-তে সুযোগ পান তিনি। প্রায় দেড় বছর টিভিতে চলেছিল এই সিরিয়াল। দর্শকেরা তাঁকে পছন্দও করেছিলেন। দর্শকদের ভালোবাসাই রাধিকাকে অভিনয়ের প্রতি কৌতূহলী করে তোলে। এরপর তিনি ‘ঝলক দিখলা জা’র সিজন ৮-এ প্রতিযোগী হিসেবে যোগ দেন।
২০১৮ সালে প্রথম বলিউডে যাত্রা করেন রাধিকা। বিশাল ভরদ্বাজের পরিচালনায় ফিল্মটির নাম ছিল ‘পটাকা’। খুব একটা হিট হয়নি ছবি, যদিও অভিনয়ের জন্য রাধিকা প্রশংসিত হয়েছিলেন। সে ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতাও ছিল অন্য রকম। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছেন, ‘কত কী শিখেছি—গোবরে হাত দেওয়া, ঘুঁটে দেওয়া, গরুর দুধ দোয়ানো, ঘর ঝাঁট দেওয়া ও মোছা এবং পেঁয়াজ আর টমেটো কাটা, যেটা করতে আমার সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছিল। আর রুটি করাটা খুব কঠিন ছিল। প্রথম দুই দিন আমার বানানো রুটি কুকুরকে খাওয়ানো হয়েছিল! রুটি গোল বানাতে অনেক সময় লেগেছিল। বাড়িতে আমি একদম পাপা কি পরি! একটা কাজও করতাম না! তা সত্ত্বেও সেটে কোনো দিন মুখে একটা আওয়াজও করিনি। কোনো অভিযোগও করিনি।’

সেবার সেরা নারী নবীন অভিনেত্রী হিসেবে মনোনিতও হয়েছিলেন তিনি। তবে ‘আংরেজি মিডিয়াম’ দেখে তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করে অমিতাভ বচ্চন নিজের হাতে একটি চিরকুট পাঠিয়েছেন রাধিকাকে। সঙ্গে দিয়েছেন ফুলের তোড়া। সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে তাঁর অনুভূতির কথাও লিখেছেন রাধিকা।

এবার রাধিকার ওয়ার্ডরোবে হানা দিয়ে দেখা যাক কেমন ধরনের পোশাকের আধিক্য সেখানে। বেশ কিছুদিন আগে ফ্যাশন নিয়ে এককথায় উত্তর ধরনের এই ছোট ছোট ১০টি প্রশ্ন করেছে ফিল্মফেয়ার।
১. যখন আপনি আবেদনময়ী হয়ে ধরা দিতে চান, তখন আপনি কোন ধরনের পোশাকের আশ্রয় নেন?
—আমি যেকোনো কিছুতেই আবেদনময়ী হয়ে উঠতে পারি। এটা পোশাকের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে আমার মুডের ওপর।
২. আপনার ওয়ার্ডরোবের সবচেয়ে দামি পোশাক কোনটি?
—আমার সাদা শার্টগুলো। সাদা শার্ট পরতে আমি খুবই ভালোবাসি।

৩. আপনার পছন্দের ডিজাইনার?
—কলকাতার বাঙালি ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।
৪. পছন্দের রং?
—সাদা।

৫. সবচেয়ে সুন্দর ফ্যাশন পরামর্শ?
—তুমি নিজের মতো হও।
৬. সবচেয়ে সুন্দর ফ্যাশন পরামর্শ যা আপনি পেয়েছেন...
—‘নিজেকে এমন করে দেখিয়ো না, যেটা তুমি নও।’

৭. জিনসের কোন ধরন আপনার পছন্দ?
—আমি সব ধরনের জিনস পছন্দ করি।
৮.যা বারবার কেনেন...
—পোশাক।
৯. বলিউডের একজন ফ্যাশন আইকন?
—কারিনা কাপুর খান।
১০. ওয়ার্ডরোবের যে জিনিস নিয়ে গর্ব করেন?
—এক জোড়া নীল জিনস আর আমার সানগ্লাসগুলো।

নেটফ্লিক্স, অ্যামাজনের মতো ওয়েব সিরিজে অভিনয় করলে প্রত্যেকের মনের কাছে পৌঁছাতে পারবেন বলেও মনে করেন এই বলি নায়িকা। ‘দর্শকেরা আগের চেয়ে বেশি স্মার্ট। তাই ছবির “কনটেন্ট”ই আসল হিরো,’ এমনটাই বলেন রাধিকা। সহ-অভিনেতা রাজভিত সিংহের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাধিকা, তাই প্রেমিক ঈশান আর্যর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়, বলি মহলে গুঞ্জন রয়েছে এমনটাই। তবে কোনো রকম গসিপে বিশ্বাসী নন তিনি। তথাকথিত হিরোইন নয়, সু–অভিনেত্রী হতে চান রাধিকা। কারণ, ‘স্টারডম’ ক্ষণস্থায়ী। ‘পটাকা’ ছবিতে অভিনয় করে এ অনুভূতিই হয়েছে তাঁর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অমিতাভের চিরকুট কিংবা ফ্যাশন নিয়ে রাধিকার ১০ প্রশ্নের জবাব, ১০ ছবি
  • চমেক শিক্ষার্থী আবিদ হত্যা: ১২ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
  • চমেক শিক্ষার্থী আবিদ হত্যা ১২ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
  • দুদকের দুই মামলায় তুহিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
  • তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
  • চমেক শিক্ষার্থী আবিদুর হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ১২ জনকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
  • আত্মসমর্পণের পর কারাগারে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে তুহিন
  • খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
  • আয়কর ফাঁকির মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন
  • মানহানি মামলায় জামিন পেলেন বাসস এমডি