রিশাদকে বিগ ব্যাশ-পিএসএল খেলার সুযোগ দিতে বললেন মালান
Published: 18th, January 2025 GMT
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন রিশাদ হোসেন। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর নজরে আসেন প্রতিশ্রুতিশীল এই লেগ স্পিনার।
কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি, জিম আফ্রো ও অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি বিগ ব্যাশে হোবার্ট হারিকেন্সের হয়ে খেলার সুযোগ হয়েছিলো রিশাদের। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তিনটি টুর্নামেন্টের কোনটিতেই খেলতে পারেননি তিনি। বিপিএল খেলার ব্যস্ততার মাঝে তার পাকিস্তান সুপার লিগে খেলার দরজা খুলে গেছে। এবার কী তার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলার সুযোগ মিলবে? প্রশ্নটা সময়ের কাছেই তোলা থাক।
তবে এসব প্রতিযোগিতায় রিশাদের অংশগ্রহণ চান ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটসম্যান ডেভিড মালান। তার মতে, যত বেশি প্রতিযোগিতায় রিশাদ অংশগ্রহণ করবে, তত তার উন্নতি হবে।
আরো পড়ুন:
মাথায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, বিপিএলে তাড়াহুড়ো নেই সৌম্যর
‘বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যে ব্র্যান্ড তৈরি করেছে, সেটার জন্যেও শোকেসে একটি ট্রফি দরকার’
বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে রিশাদ ও মালান খেলছেন। নেটে বাংলাদেশের লেগ স্পিনারকে খেলে মনে ধরেছে তার। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের খবর টুকটাক জানা মালালেন। নিয়মিত বিপিএল বাদেও ঢাকা লিগে অংশগ্রহণ করেছেন। তাইতো রিশাদের জন্য সব প্রতিযোগিতায় খেলার দুয়ার খুলে দিতে বললেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান, ‘‘রিশাদকে অসাধারণ লাগছে। বাংলাদেশের লেগ স্পিনারদের জন্য রিশাদকে আমার আদর্শ ও প্রতিশ্রুতিশীল মনে হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় সব দলেরই এখন একজন মান সম্মত লেগ স্পিনার রয়েছে যারা খেলাটাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। আপনার দলে যদি একজন লেগ স্পিনার থাকে তাহলে খেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে।’’
বরিশাল বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচ খেললেও রিশাদ সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৩টিতে। কম্বিনেশনের কারণে তার সুযোগ মিলছে না তা আগে থেকেই ধারনা দিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে লেগ স্পিনারের উন্নতির জন্য ধারাবাহিক ম্যাচ খেলার বিকল্প নেই তা জানিয়েছেন মালান,
‘‘তার মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ম্যাচ খেলা। যত বেশি ম্যাচ সে খেলবে তত তার উন্নতি হবে। যত প্রতিযোগিতায় সে অংশ নেবে তত তার ধার বাড়বে। যেমনটা আপনি বললেন তার বিগ ব্যাশে খেলার সুযোগ হয়েছে। ওখানে গেলে তার উন্নতি হতো। সেখানকার ভিন্ন কন্ডিশনে সে বোলিং করতো। ভিন্ন ভিন্ন ব্যাটসম্যানকে সে বোলিং করতো। তার জ্ঞানের পরিধি আরও বেড়ে যেত। তাতে সে আরও উৎসাহিত হতো। শুধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বাংলাদেশ ক্রিকেট নয়, সে সব ধরণের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আমার মতে তার উন্নতির জন্য এটা ভালো উপায়।’’
‘‘সে প্রতিভাবান। উচুঁ, বল দুদিকে ঘুরাতে পারে। তার আলো স্কিল আছে, ব্যাটিংও করতে পারে। এটা অবশ্যই ভালো দিক।’’ - যোগ করেন মালান।
লিগে এখন পর্যন্ত মাত্র এক ম্যাচ খেলেছেন মালান। শুরুর দিকে দলের সঙ্গে যোগ দিলেও কম্বিনেশনের কারণে তারও সুযোগ হয়নি। কাইল মায়ার্স চলে যাওয়ার পর মালান প্রথম ম্যাচে নেমে গতকাল ৪৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জেতাতে ভূমিকা রাখেন। এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন বেশ ভালোভাবেই। সামনে আরও ভালো করা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল র জন য ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ