সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালকের পদে নিযুক্ত হন পুতুল, যিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা।

আরো পড়ুন:

‘খালেদা জিয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশ গেছেন, আর হাসিনা পালিয়ে’ 

হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট শনিবার (২৫ জানুয়ারি) পুতুলের নিয়োগে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ তদন্তের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

দ্য ল্যানসেট লিখেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদের দুর্নীতির মাধ্যমে পদে বসার অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।

ভারতের দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ববিষযক আঞ্চলিক কার্যালয়, যেখানে এখন কাজ করছেন সায়মা ওয়াজেদ। এই দিল্লিতে গোপন বাসস্থানে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন শেখ হাসিনা, যিনি ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে গণভবন ছেড়ে যান।

“তার মা (শেখ হাসিনা) যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মেয়েকে নিয়োগের জন্য অনৈতিকভাবে তার ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে,” দ্য ল্যানসেটকে বলেছেন দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম।

পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠিতে সায়মা ওয়াজেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য থেকে অপসারণের জন্য সংস্থাটির ওপর চাপ প্রয়োগের অনুরোধ করেছে দুদক।

দ্য ল্যানসেট লিখেছে, শেখ হাসিনা অনৈতিকভাবে তার মেয়ের প্রোফাইল ভরি করার জন্য তার অবস্থান ব্যবহার করেছেন; যার অংশ হিসেবে সায়মা ওয়াজেদকে ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে হাই-প্রোফাইল রাষ্ট্রীয় সফরে নিয়ে যান শেখ হাসিনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতুলকে এভাবে নিয়োগ দেওয়ায় সংস্থাটির বৈশ্বিক ভাবমূর্তি খর্ব হচ্ছে। এই সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের পদে বসার ক্ষেত্রে তার যোগ্যতার অভাব ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তার নিয়োগের সময়ই ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক পরিচালক মুকেশ কপিলা সায়মা ওয়াজেদের এই অস্বচ্ছ নিয়োগের কড়া সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেছেন, “সায়মা ওয়াজেদকে ঘিরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক ভাবমূর্তিতে খারাপ অভিজ্ঞতার ছাপ ফেলেছে। শুধু এই অঞ্চলের জন্যই তা হয়নি, বরং বিশ্বজুড়েই সে প্রভাব পড়েছে। অবশ্যই এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাকেও খাটো করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মানুষদের জন্য এই অস্বচ্ছতা অভিযোগের মওকা হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পের মতো মানুষ, যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজেদের দেশকে প্রত্যাহার করে নিতে চান, তাদের জন্য বিরাট সুযোগ করেছে দুর্নীতির মাধ্যমে এই নিয়োগের ঘটনা।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ বলেন, “যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাচনি প্রক্রিয়া কোনো সদস্য দেশের মাধ্যমে বা তাদের অভ্যন্তরেই কারো বিরুদ্ধে অন্যায় করার অভিযোগ ওঠে, তাহলে সংশ্লিষ্ট জাতীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবেই সেই অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কোনো আইনগত প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।”

দ্য ল্যানসেট বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতায় ঘাটতি ছিল সায়মা ওয়াজেদের। তার চেয়ে বেশি যোগ্যতা ছিল পুতুলের প্রতিদ্বন্দ্বী নেপালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শম্ভু প্রসাদ আচার্যের। অথচ সাময়া ওয়াজেদের মা প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি পরায়ণ চর্চার মাধ্যমে তার নিয়োগ নিশ্চিত করেছেন।”

দ্য ল্যানসেটকে দুদক কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেছেন, “সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগ পাওয়ার শর্তগুলো যথাযথভাবে পূরণ করেছেন কিনা অথবা এ প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাবের কারণে তিনি পছন্দের প্রার্থী ছিলেন কিনা, সেসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক কমিটির প্রবিধানের ৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার জন্য শক্তিশালী প্রযুক্তিগত এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক প্রাজ্ঞতা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং জনস্বাস্থ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ থাকা আবশ্যক।

দ্য ল্যানসেট লিখেছে, এসব প্রয়োজন হলেও সায়মা ওয়াজেদের আছে শুধু ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি। তার আর কোনো আনুষ্ঠানিক মেডিকেল বা জনস্বাস্থ্যবিষয়ক একাডেমিক যোগ্যতা নেই। অবশ্য ২০২৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করায় তার বৈশ্বিক স্বাস্থ্যে সীমিত কাজের অভিজ্ঞতা আছে। এর মধ্যে আছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং চ্যাথাম হাউসে উপদেষ্টার ভূমিকা। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নেপালের শম্ভু প্রসাদ আচার্য, যিনি সংস্থাটির সঙ্গে অন্তত ৩০ বছর কাজ করেছেন। জনস্বাস্থ্যে ডক্টরেট ডিগ্রিও রয়েছে শম্ভু প্রসাদের।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও মানবতাবিষয়ক অধ্যাপক ও জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক পরিচালক মুকেশ কপিলা দ্য ল্যানসেটকে বলেছেন, “তার (সায়মা ওয়াজেদ) নিয়োগ নিয়ে তদন্তের অধিকার আছে সে দেশের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুদকের।”

সায়মা ওয়াজেদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগ নিয়ে এর আগেও কথাবার্তা হয়েছে, বিদেশি পত্রিকায় সমালোচনা করে খবরও হয়েছে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্ষেত্রে পুতুলের নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় পড়া প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও সংস্থাটির আঞ্চলিক পর্যায়ের আরো কিছু পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে কেলেঙ্কারির খবর রয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক তাকেশি কাসাইকে দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে অপসারণ করা হয়।

ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুতুলকেও অপসারণ করার ক্ষমতা আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জনস ব স থ য য গ যত কর ছ ন র জন য ব ষয়ক তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণের  অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বরখাস্তকৃতরা হ‌লেন: গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনি, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী  আবদুল্লা আল মামুন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহানা আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি শিরাজী তারিকুল ইসলাম। 

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানায়, কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে এ সকল কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

জানা গে‌ছে, মনিরুজ্জামান মনি টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে ডক্টোরাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি কাটানোর পর পরবর্তী সময়ে অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী তাকে ২১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বরখাস্ত করা হয়। 

আবদুল্লা আল মামুন পিএইচ.ডি করতে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে  ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক তাকে ১৫ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।    

মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ৭ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অননুমোদিতভাবে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।   

ফারহানা আহমেদ ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর  থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

মফিজুল ইসলাম ২০২৩ এর ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি কাটালেও পরে ছুটি না নিয়ে অফিসে  অনুপস্থিত। তাকে ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

শিরাজী তারিকুল ইসলামও ২০২২ সালের ১২ মে থেকে ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২১ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে ইসরায়েল কি পশ্চিমা বিশ্বেও একঘরে হয়ে যাচ্ছে
  • স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাকেতার
  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
  • দলবদলের বাজারে চেলসিই রাজা, শীর্ষ দশে আর কারা
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো