জাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ
Published: 25th, January 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, সদস্য সচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম এবং সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, অধ্যাপক ড. খো. লুৎফুল এলাহী ও ড.
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে স্নাতক (সম্মান) ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১,২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ এবং স্নাতকোত্তর ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা জাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ৬ (৪+২) বছর অথবা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ২ (১+১) বছর ধরে অধ্যয়নরত আছেন তাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে যেসব বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্সের মেয়াদ ৫ বছর হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ৭ বছর ধরে অধ্যয়ন করার অনুমতি রয়েছে, সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাত বছর মেয়াদ পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জাকসু গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাকসু সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এম ফিল, পিএইচডি, উইকেন্ড ও ইভিনিং প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ব্যাচের অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের নাম জাকসুর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষার্থীরা বিশেষায়িত মাস্টার্সে অধ্যয়ন করায় তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি।
যেসব শিক্ষার্থী আইবিএ-জেইউতে নিয়মিত কোর্সে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে অধ্যয়ন না করেও মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) শ্রেণিতে অধ্যয়নরত, তারা জাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি।
ঢাকা/আহসান/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির ব্যাঙ
আড়াই শ ফুট উঁচু থেকে ঝরনার পানি আছড়ে পড়ছে পাথরের ওপর। এক দল তরুণ-তরুণী গোসল করছিলেন সেখানে। সুন্দর সময়টির ভিডিও ধারণ করেন একজন। সে ভিডিওতে ধারণ করা হলো পাথরের ওপর লাফালাফি করতে থাকা একটি ব্যাঙের ছবিও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ভিডিওটি নজরে আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। ভিডিওতে যে ব্যাঙটি ধারণ করেছেন তরুণ-তরুণীরা, তা কোনো সাধারণ ব্যাঙ ছিল না। বাংলাদেশে এই প্রজাতির ব্যাঙ একেবারে নতুন বলে রায় দিলেন গবেষকেরা।
গত জুন মাসে রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের এগুজ্যাছড়ি ঝরনায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়। ব্যাঙের এই ভিডিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের হাতে পৌঁছানোর আগেই এই প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করছিলেন তাঁরা। ফেব্রুয়ারি মাসে রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের কাইন্দে গ্রামের একটি পাহাড়ি ছড়া থেকে এই প্রজাতির একটি ব্যাঙ সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকেরা। জুন মাসে এগুজ্যাছড়ি ঝরনায় পাওয়া ব্যাঙটির ভিডিও দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন, দুটি ব্যাঙই একই প্রজাতির। রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের এগুজ্যাছড়ি ও বালুখালী ইউনিয়নের কাইন্দে গ্রামেই কেবল দেখা গেছে ব্যাঙের এই প্রজাতি।
ব্যাঙটির সন্ধান পাওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজের নেতৃত্বে গবেষক দল এটির ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া পাঠায়। ফলাফল আসার পর তাঁরা নিশ্চিত হন দেশে জীববৈচিত্র্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন প্রজাতির ব্যাঙ।
নতুন এই ব্যাঙের ইংরেজি নাম ‘ইন্দোবার্মান টরেন্ট ফ্রগ’। বৈজ্ঞানিক নাম amolops indoburmanensis। আর বাংলা নাম দেওয়া হয় ‘ইন্দো-বার্মিজ ঝিরি ব্যাঙ’। ব্যাঙটি চিহ্নিত করতে কাজ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ আজিজ, অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন, গবেষক আমীর হামজা, অং শৈ ন্যু মারমা, মো. আমিনুর রহমান, ইবনুল সাদ ও রাঙামাটির সাংবাদিক সাধন বিকাশ চাকমা।
নতুন আবিষ্কৃত ব্যাঙটি বাদামি বা জলপাই-সবুজ বর্ণের এবং আকারে ছোট। পরিবেশের সঙ্গে এমনভাবে মিশে থাকে যে সহজে চোখে পড়ে না। শরীরের দানাদার ভাব নেই। ঊরুর পেছনের অংশটি ঘন বাদামি।
নতুন ব্যাঙ নিয়ে এই গবেষণা রেপটাইলস অ্যান্ড অ্যাম্ফিবিয়ান নামের আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। জার্নালটি ‘ইন্টারন্যাশনাল রেপটাইল কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’ নামের আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকাশ করে থাকে।
ব্যাঙটির আবাসস্থল খুবই সীমিত বলে জানান গবেষকেরা। তাঁরা বলেন, ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যে এই ব্যাঙ পাওয়া যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জায়গায় দেখা গেছে। এ ছাড়া সিলেট, মৌলভীবাজারের পাহাড়ি বনের ঝরনায়ও এই ব্যাঙ থাকতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৯ ধরনের উভচর প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি ব্যাঙ প্রজাতি। নতুন ব্যাঙ আবিষ্কারের পর এই তালিকায় আরও একটি সংখ্যা যুক্ত হবে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ।
প্রথম আলোকে এম এ আজিজ বলেন, ‘আমরা নতুন একটি উভচর প্রাণী ব্যাঙের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস নতুন ব্যাঙটি নিয়ে কাজ করেছি। আমরা প্রথমে ব্যাঙটি মাপজোখ করে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তথ্য নিই। কিন্তু এতেও এটির প্রজাতি চিহ্নিত করতে না পেরে ডিএনএ অ্যানালাইসিস করি। এর ফলে ব্যাঙের প্রজাতি চিহ্নিত করতে সমর্থ হই।’
অধ্যাপক এম এ আজিজ আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই বর্গের ১৪ প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১টি প্রজাতি রেকর্ড করা হলো। তাই নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো খবর। এ ছাড়া এই ব্যাঙের বৈশ্বিক মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হলো।