‘তামিমিয়ান, সাকিবিয়ান, মাশরাফিয়ান বলে কিছু নেই’—শেষ বার্তায় তামিম
Published: 8th, February 2025 GMT
যেভাবে ব্যাট করেছেন বোঝার কোনো উপায় ছিল না, কিছুক্ষণ পরই তিনি পাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের সংবর্ধনা। নির্ভার থেকে এমন বিস্ফোরক ব্যাটিং একমাত্র তামিম ইকবালকে দিয়েই যেন সম্ভব। ওপেনিংয়ে নেমে ফরচুন বরিশাল অধিনায়কের ব্যাটিং বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর ভিত গড়ে দেয়।
ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে বিতর্ক মোড়ানো অবসরের পর ফেরা না ফেরার সুতা ঝুলছিল প্রায় দেড় বছর ধরে। অবশেষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার পরই নিশ্চিত হয়ে যায় ইতি হচ্ছে তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। আনুষ্ঠানিক বিবৃতির পর শুক্রবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) টাইটেল জয়ের দিন তামিমকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
জার্সির স্মারক উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় খান সাহেবের হাতে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে তামিম যেন কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে যান। ছলছল চোখে যেন ভেসে উঠছিল প্রায় দেড়যুগের ক্যারিয়ার। বাবার কথা স্মরণ করে বলেন, “আমার বাবার ইচ্ছে ছিল, একদিন আমি দেশের হয়ে খেলব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি আমাদের সঙ্গে নেই।“
বাংলাদেশকে অনেক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেওয়া তামিম শোনালেন ক্রিকেটার হওয়ার পেছনের অনুপ্রেরণার কথা, “বাংলাদেশ যখন শিরোপা জিতল। পুরো বাংলাদেশের উপভোগটা ছিল অসাধারণ। ওই দিনই ঠিক করলাম, আমি ক্রিকেটার হব।”
উপস্থিত দর্শকদেরসহ কোটি ক্রিকেট ভক্তকে দিয়েছেন কড়া বার্তাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে তামিমের জানা, দেশের ভক্তদের বিভাজনের কথা। কেউ সাকিব আল হাসানের ভক্ত সাকিবিয়ান, কেউ মাশরাফি বিন মুর্তজার ভক্ত মাশরাফিয়ান। ভাগ হয়ে নিজেদের মধ্যেই লড়াতেই সময় কেটে যায়। তামিম তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন দেশ সবার আগে।
“তামিমিয়ান, সাকিবিয়ান, মাশরাফিয়ান বলে কিছু নেই। সবাই বাংলাদেশের সমর্থক। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করেছে। দয়া করে এটা থামান। আমরা যে কারও সমর্থক হতে পারি, কিন্তু সবাই বাংলাদেশি। এটাই আমার শেষ বার্তা।”
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে হাটছিলেন তখন। পাশেই চেনা একজনকে দেখে বলে ওঠেন, “সুন্দর বলছি না?’’
ট্রফি জয়ের সঙ্গে বিদায়ী সংবর্ধনা, যেন পূর্ণতা পেলো সবই। এমন আত্মতৃপ্তির দিনে নিজের কথাকে নিজেই সুন্দর বলতেই পারেন! তাতে তৃপ্তি আরো বাড়ে!
ঢাকা/রিয়াদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।