শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন পরিচালক পলাতক। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন শাখার মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ নাভিদ শাফিউল্লাহ এক আদেশে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালকে এই প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছেন বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন সমর কুমার পাল। তিনি বলেছেন, ‘এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কমিটির বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে এই সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে কোনো পরিচালনা পর্ষদ নেই, এ কারণে প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রমও নেই। তাই ধারাবাহিক কার্যক্রম বজায় রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে চলমান অস্থিরতা দূর করতে বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২–এর ১৭ ধারা অনুসারে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। ১২০ দিনের মধ্যে প্রশাসক একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের স্টেশন রোড এলাকায় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যালয় অবস্থিত। এখানে থাকা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একটি টিনশেড ভবনে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা (চপল)। তিনি একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। গত ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মগোপনে আছেন খায়রুল হুদা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেম্বারের একজন সদস্য বলেন, ‘সুনামগঞ্জ চেম্বার আসলে দীর্ঘদিন একটি পরিবারের দখলে ছিল। পরিচালনা পরিষদের অন্যরা ছিলেন নামমাত্র। এখানে কোনো নিয়মনীতি ছিল না। ব্যবসায়ী ও শহরের লোকজন এটা জানেন। এখানে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি একটি ভালো উদ্যোগ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ চ ম ব র পর চ ল ব যবস স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

চামড়া সংরক্ষণে কাজে আসেনি ২০ কোটি টাকার ‘গছানো’ লবণ

পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানি হওয়া পশুর চামড়া পায় মূলত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো। কিন্তু প্রতিবছর চামড়ার দর কমছে। প্রাথমিক সংগ্রহকারীরাও চামড়া সংরক্ষণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই এবার সরকার চামড়া সংরক্ষণ করার জন্য এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানকে লবণ দিয়েছিল; কিন্তু এসব লবণ তেমন কাজে আসেনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০ কোটি ব্যয়ে ১১ হাজার ৫৭১ টন লবণ কিনে ৬৪ জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠানকে লবণ বরাদ্দ দেওয়া হয়। লবণ নিয়ে বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। আবার তালিকায় নাম থাকলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের লবণ না পাওয়ার অভিযোগও আছে।

আমরা আড়াই মণ লবণ পেয়েছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে চামড়া সংরক্ষণের দরকার পড়েনি। যারা চামড়া নিয়েছে, তাদের চামড়ার সঙ্গে লবণও দিয়ে দিয়েছিচট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আবু বকর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ইউছুপ

গত ২৭ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে লবণ কেনার জন্য বরাদ্দের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষককে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তালিকা অনুযায়ী লবণ মিলমালিকদের কাছ থেকে জেলা প্রশাসকেরা লবণ সংগ্রহ করেন।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আবু বকর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ইউছুপ বলেন, তাঁরা এবার চামড়া সংগ্রহ করেছেন ৪৭৯টি। ঈদের দিন বিকেলে সংগ্রহ শেষে রাতেই আড়তদারদের কাছে চামড়া বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আড়াই মণ লবণ পেয়েছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে চামড়া সংরক্ষণের দরকার পড়েনি। যারা চামড়া নিয়েছে, তাদের চামড়ার সঙ্গে লবণও দিয়ে দিয়েছি।’

যাদের লবণ দিয়েছি, তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি বলে জানিয়েছে। তারা সেসব লবণ পাশের মাদ্রাসায় যেখানে বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, সেখানে হস্তান্তর করে।জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম

সংরক্ষণ না করলেও অনেক প্রতিষ্ঠানে লবণ দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এতিমখানা কমদমোবারকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজন না থাকলেও লবণ নিতে বলা হয়েছিল। আমাদের যেহেতু দরকার হবে না, তাই আমরা নিইনি।’

চট্টগ্রামে ৯৮ লাখ ৪২ হাজার টাকায় ৬৪০ টন লবণ দেওয়া হয়। জোর করে লবণ বরাদ্দের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের লবণ দিয়েছি, তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি বলে জানিয়েছে। তারা সেসব লবণ পাশের মাদ্রাসায় যেখানে বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, সেখানে হস্তান্তর করে।’

খাগড়াছড়িতে বরাদ্দ লবণ দেওয়া হয়েছে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে। জেলার জব্বারিয়া আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসায় চার টন লবণ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু আমরা চামড়া সংরক্ষণ করিনি।’

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ভিত্তিতে লবণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু আসছে তাহলে বিষয়টি রিভিউ (পর্যালোচনা) করতে হবে।’

ফেনীতে লবণ পেয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি। অনেকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লবণ নেয়নি। লবণ নিয়েছে এমন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ না করেই বিক্রি করেছে। চামড়া সংরক্ষণ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম।চামড়া সংরক্ষণ খুবই কম

ফেনীতে লবণ পেয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি। অনেকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লবণ নেয়নি। লবণ নিয়েছে এমন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ না করেই বিক্রি করেছে। চামড়া সংরক্ষণ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম।

ফেনীর দাগনভূঞার তালতলী কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম কামরুল আহসান বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য ৬২ বস্তা লবণ তাঁদের জোর করে দেওয়া হয়। কিন্তু চামড়া সংরক্ষণ না করেই তাঁরা বিক্রি করেন। প্রতিটি লবণের বস্তা বিক্রি করেন ৩০০ টাকা দরে।

ফুলগাজীর নুরপুর দারুল উলুম মহিউসুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষা পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে তাঁদের লবণ নিতে বলা হলেও চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা নেননি।

তবে প্রয়োজন থাকলেও লবণ পায়নি এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ফেনী সদরের শর্শদি দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল করিম বলেন, তাঁরা এবার এক হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তাঁদের লবণ দেওয়া হয়নি। কেউ এ বিষয়ে যোগাযোগও করেনি।

ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, চামড়া সংরক্ষণ করার উদ্দেশেই লবণ দিয়েছে সরকার। তবে লবণ নিয়েও কারও কারও চামড়া সংরক্ষণ না করার বিষয়ে শুনেছেন। লবণ না পেলেও তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।


[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি ও সংবাদদাতা, ফেনী]

সম্পর্কিত নিবন্ধ