ধর্ষণের বিচার, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পাঁচ দফা দাবিতে ছয়দিন ধরে রাজধানীর শাহবাগে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি। ছয়দিন ধরে অবস্থানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ সংহতি জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি কেউ।

সরকারের কেউ দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তিনি কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন বলে জানান। তাসনীম আফরোজ ইমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি শামসুন নাহার হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি।

গত ৮ মার্চ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘দেশব্যাপী নারী, ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং হেনস্তার প্রতিবাদে লাগাতার অবস্থান’ শুরু করেন ইমি। তিনি বলেন, কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি পরিচয় নয়, একেবারে সাধারণ নাগরিকের ব্যানার থেকে আমি অবস্থান করছি। তবে দুঃখের বিষয় আমি এতদিন অবস্থান করছি কিন্তু কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। এটা একটা বার্তা দেওয়া হলো-সাধারণ মানুষের কথা কেউ শোনে না।

তিনি বলেন, আমার যদি কোনো ক্ষতি হয়, এটার পুরো দায় সরকারকে নিতে হবে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি, আমার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস-নিশ্চয়তা যদি আসে তাহলে আমি ঘরে ফিরতে চাই।

তার পাঁচ দফা দাবি হলো-

১.

ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিচার কার্যক্রম নিম্ম আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করতে হবে, এবং দ্রুত রায় কার্যকর করতে হবে।

২. আগামী ৭২ ঘণ্টার ভেতর প্রতিটি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার নারী ও শিশু নির্যাতন একটি ইমারজেন্সি ক্রাইসিস রেস্পন্স টিম গঠন করতে হবে। একই সাথে থানার অভ্যন্তরে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেখানে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সহায়তা আইন সহায়তা ও মানসিক এখন সেবা দেওয়া হবে।

৩. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-২৪ সংশোধন পূর্বক ধর্ষণের শিকার ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে সেই ধারায় সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।

৪. ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে।

৫. নারী ও শিশুর উপর সংঘটিত সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরীর জন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এই উদ্যোগ গুলোর মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি শ্রেণী স্তরের নারী ও শিশুদেরকে সচেতন করা যাবে। একই সাথে স্কুল-কলেজের পাঠ প্রস্তুকে নৈতিক শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা পাঠদানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ