সুনামগঞ্জের কয়েকশ গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০-৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। তারা এ জন্য ব্যবহার করেছিল ‘অক্সট্রেড ডটকম’ নামে একটি কোম্পানির নাম। চক্রটি কোম্পানিটি সুইজারল্যান্ডে নিবন্ধিত বলে প্রচারও চালিয়েছিল।
বর্তমানে এ নামের ডোমেইনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। চক্রের সদস্যরা বিপুল অঙ্কের মুনাফা দেওয়ার নাম করে টাকা সংগ্রহ করে। এ জন্য তারা ব্যবসায়ী, ডাক্তার, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের টার্গেট করেছিল। তারা সবাই বিপুল অঙ্কের টাকা হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ডা.
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অক্সট্রেড ডটকমের নামে অনলাইনে প্রচার চালানো হয়। সুনামগঞ্জে কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের হিরাঝিলের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, নরসিংদীর শিবচরের তরিকুল ইসলাম ও কুমিল্লার হুমায়ুন আহমেদ। তারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন মেটলাইফ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অভিজিৎ সরকারকে। প্রতারণার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর থেকে লাপাত্তা তিনি। শহরের নতুনপাড়ার বাসভবনে তাঁর স্ত্রী ছাড়া কেউ নেই। ঈদের পর থেকে মেজর ইকবাল রোডে অবস্থিত মেটলাইফের বিশাল অফিসে তালা ঝুলছে।
মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সে দুটি পলিসি আপডেট হয়েছিল ডা. আশুতোষ দাসের। তিনি সেখান থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা পান। পাশাপাশি দিরাইয়ে বিক্রি করা জমির টাকা, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শ্যালিকাসহ কয়েক আত্মীয়ের প্রায় দুই কোটি টাকা অক্সট্রেডে বিনিয়োগ করেন। ডা. আশুতোষ বলেন, ‘আমাদের বলেছিল, ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানি ব্যবসা করবে। ১ হাজার ডলারের বিপরীতে দিনে ৮ ডলার করে দিত। এই মেসেজ আসত গ্রাহকের মোবাইলে। অভিজিৎ সরকারের কাছে তা পাঠালে তিনি ক্যাশ দিতেন। ১৫-২০ দিন হয় মেসেজ এলেও টাকা ক্যাশ করা যায়নি। অভিজিৎসহ সংশ্লিষ্টদের ফোন নম্বরও বন্ধ।’
বিশ্বম্ভরপুরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার কাছ থেকে ডলারের মেসেজ পাঠিয়ে ক্যাশ করতেন অভিজিৎ সরকার। এ ছাড়া ‘বাইনান্স’ নামে আরেকটি হিসাবে গ্রাহক মেসেজ পাঠালেও তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ সাড়ে সাত লাখ টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার হিসাবে জমা করেছেন ৪ মার্চ। এরপর থেকেই লেনদেন বন্ধ।
ওই ব্যবসায়ী জানান, প্রতি লাখে মাসিক মুনাফা ১৬ হাজার টাকা, ছয় মাস পরে একসঙ্গে জমা টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ এক লাখ থাকলে গ্রাহকদের মুনাফাসহ দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই কোম্পানি।
মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের সুনামগঞ্জ কার্যালয় বুধবার বিকেলেও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কোম্পানির বীমা প্রতিনিধি লিংকন তালুকদার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি নিজেও ভিক্ষুক হয়ে গেছি। বাড়ি-জমি সব বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন মরে যাওয়া ছাড়া পথ নেই।’ আরেক কর্মী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলির পাঁঠা। জমিজমা বিক্রি করে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। জাহাঙ্গীর ও তরিকুলের বাড়িতে ১০-১২ জন গিয়েও পাইনি।’
অভিজিতের শ্বশুর দীপু তালুকদারের ভাষ্য, সুমন, সাইফুল, শাহজাহান সুনামগঞ্জে এই কোম্পানি নিয়ে আসেন। অভিজিৎ যুক্ত হতে চাননি। ১০-১৫ দিন বোঝানোর পর অভিজিৎ অ্যাকাউন্ট খোলেন। ৫০০ ডলারের অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি হলেও সাইফুল, সুমনেরা জোর করে ৫ হাজার ডলারের অ্যাকাউন্ট করান। অভিজিতের নাম ব্যবহার করে এরা ব্যবসা করেছে।
মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের জিএম লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ সুনামগঞ্জ সদর থানায়ও এমন কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ন মগঞ জ সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন মার্কেটপ্লেস এখন হোয়াটসঅ্যাপে
বাংলাদেশি অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রয় গ্রাহকের জন্য এবার দিয়েছে বিশেষ সুবিধা। এখন থেকে বিজ্ঞাপনের বিস্তারিত পেজ থেকে আগ্রহীরা সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
ফিচারটি বিক্রয় ডটকম সাইট ও মোবাইল অ্যাপ– দুই প্ল্যাটফর্মেই সক্রিয় বলে উদ্যোক্তারা জানায়।
নতুন ফিচার দিয়ে ফোনকল ও চ্যাটের সঙ্গে বিক্রয়ের তৃতীয় যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে যুক্ত হলো হোয়াটসঅ্যাপ। বিজ্ঞাপনের নিচে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ বাটনে ক্লিক করলেই প্রি-ফিল্ড (আগে থেকে লেখা) মেসেজের সঙ্গে চ্যাট সক্রিয় হবে, যাতে বিজ্ঞাপনের লিঙ্ক বা তথ্য যুক্ত থাকবে। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতার যোগাযোগ হবে দ্রুত, সহজ ও ফলপ্রসূ।
বাংলাদেশে হোয়াটসঅ্যাপ বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ।
বিশেষ পরিষেবার ফলে বিক্রেতারা এখন আগ্রহী ও প্রকৃত ক্রেতার কাছ থেকে বার্তা পাবেন, যা তাদের পণ্য বিক্রি প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও সহজ করতে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে, বিক্রেতার আলাদা কোনো সেটআপের প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞাপনে বিক্রেতার প্রথম যে মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোয়াটসঅ্যাপ যোগাযোগে ব্যবহৃত হবে।
বিক্রয় ডটকমের হেড অব মার্কেটিং মো. আরিফিন হোসাইন বলেন, সব সময় প্রযুক্তিনির্ভর ও সহজে ব্যবহারযোগ্য সমাধান নিয়ে কাজ করছি। হোয়াটসঅ্যাপ ইন্টিগ্রেশন আমাদের প্ল্যাটফর্মে সময়োপযোগী সংযোজন। শুধু ক্রেতাদের নয়, বিক্রেতার জন্যও বিশেষ সুবিধা। আগের তুলনায় এখন তারা আরও বেশি আগ্রহী ক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি বার্তা পাবেন, যা বিক্রির সম্ভাবনা বাড়ানোর
সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ নিশ্চিত করবে।
ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়াকে সহজ, স্মার্ট ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিক্রয়। হোয়াটসঅ্যাপ ফিচার এমন প্রচেষ্টার আরেকটি উদাহরণ, যা
ক্রেতা-বিক্রেতার সংযোগকে দ্রুত ও ব্যবহারবান্ধব করবে বলে জানানো হয়।
ডিজিটাল পণ্য বিকিকিনিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এখন সময়োপযোগী মাধ্যম। নিজের প্রয়োজনে পণ্য বিক্রি বা ক্রয়ে এমন পরিষেবায় হোয়াটসঅ্যাপ নতুন মাত্রা যুক্ত করবে বলে উদ্যোক্তারা জানায়।