জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড ও এমএড, আবেদন শেষ ১৫ জুন
Published: 12th, June 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধীনে এক বছর মেয়াদি বিএড (প্রফেশনাল) এবং এমএড (প্রফেশনাল) প্রোগ্রামে ফল-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ভর্তির যোগ্যতাবিএড (প্রফেশনাল): প্রার্থীকে অবশ্যই কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে স্নাতক বা ডিগ্রি পাস হতে হবে। গ্রেডিং পদ্ধতিতে জিপিএ ২.
এমএড (প্রফেশনাল): বিএড প্রফেশনাল প্রোগ্রামে উল্লিখিত যোগ্যতাসহ প্রার্থীকে অবশ্যই বিএড ডিগ্রিধারী হতে হবে।
আবেদনপত্র জমার শেষ তারিখ১৫ জুনের ২০২৫ মধ্যে www.jnu.ac.bd ওয়েবসাইট থেকে ভর্তির আবেদনপত্র ডাউনলোড করতে হবে। আবেদনপত্র পূরণ করে সব সনদ ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত কপি স্ক্যান করে [email protected] ই-মেইলে পাঠাতে হবে। আবেদন ফি ১ হাজার ২৫০ টাকা।
লিখিত ভর্তি পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্যবিএড: ২০ জুন, বেলা ১১.৩০টা থেকে দুপুর ১২.৩০টা। এমএড: ২০ জুন, বেলা ৩.৩০টা থেকে বিকেল ৪.৩০টা।
ফলাফল ঘোষণার তারিখ: ২৬ জুন। ওরিয়েন্টেশন শুরু: ৪ জুলাই ২০২৫। সাপ্তাহিক ক্লাস: শুক্রবার ও শনিবার।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট: www.jnu.ac.bd
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার ‘জুন মার্কার’ থেকে কতটুকু সরল
ঈদুল আজহার ছুটি চলাকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন– ‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে’ (সমকাল অনলাইন, ৬ জুন ২০২৫)।
আমরা দেখেছি, বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বলে আসছিল– নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে। নতুন দল এনসিপি বলেছিল, আগে জুলাই ঘোষণাপত্র, তারপর নির্বাচন। সেনাবাহিনী প্রধানও একাধিকবার সুস্পষ্টভাবে বলেছেন– গণঅভ্যুত্থানের ১৮ মাসের মধ্যে তথা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ‘জুন মার্কার’ থেকে সরছিল না। প্রথমে যদিও বলেছিল, কম সংস্কার হলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে, আর অধিক সংস্কার হলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে; পরে দেখা যাচ্ছিল, ডিসেম্বরের কথা বেমালুম ভুলে কেবলই জুনের কথা বলে যাচ্ছিল সরকার।
মনে আছে, গত ২ জুন সব দলের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে (দৈনিক সমকাল, ৩ জুন ২০২৫)। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তাঁর ডেপুটি অধ্যাপক আলী রিয়াজও বলেছিলেন, ‘কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের আগস্টে শেষ হচ্ছে এবং এর আগেই জুলাই মাসে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ আপাতভাবে মনে হচ্ছিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন নয়, বরং জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার তাড়া।
এর মধ্যে বিএনপির দিক থেকে দৃশ্যত ও কার্যত চাপ তৈরি করা হয়– জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। এর প্রতিক্রিয়াতেই সম্ভবত প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হলো। প্রশ্ন হচ্ছে, জাতির উদ্দেশে দেওয়া সর্বশেষ ভাষণের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পর্যন্ত ‘জুন মার্কার’ থেকে কতটুকু সরে এলো?
গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় একটি বিষয় স্পষ্ট, সরকার যা করতে চায়, সেটি এনসিপির মাধ্যমেই উত্থাপিত হয়। আবার এনসিপি জাতীয় নির্বাচন ছাড়া আর সবকিছুতে আগ্রহী! আসলে বিনা ভোটে ক্ষমতা পাওয়া গেলে নিবার্চনে যাওয়ার ক্লেশ কে স্বীকার করতে চায়!
সম্প্রতি বিশেষ করে করিডোর ও বন্দর ইস্যুতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তো বটেই, খোদ সেনাবাহিনীও স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিল। এতে সরকার হয় তো সত্যিই চাপে পড়েছিল। যে কারণে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বিবৃতির কিছু অংশ আরও গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, ‘বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবিদাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কমর্সূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।’ একই সময়ে এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলামও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য না দেওয়ার জন্য বলেন।
যেমন নির্বাচন কমিশনের গেজেট এবং উচ্চ আদালতে শপথবিরোধী রিট খারিজ হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়াচ্ছে না সরকার। যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব শপথ পড়ানো, সেটার দায়িত্বে আবার ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা উপদেষ্টাদের একজন। নির্বাচন কমিশনের গেজেট ও উচ্চ আদালতের অবস্থানকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে কি এনসিপির স্বার্থে? চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো হলেও ঢাকায় ইশরাককে শপথ পড়ানো হচ্ছে না কি এনসিপির রাজনৈতিক স্বার্থে?
যা হোক, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জুলাই সনদ, ঘোষণাপত্র ও বিচার শেষ হলে এপ্রিলে নির্বাচন করা যেতে পারে। তা ছাড়াও আমরা চেয়েছিলাম সংস্কারের রূপরেখাটা আগে হোক’ (বাংলা ট্রিবিউন, ৬ জুন ২০২৫)।
মজার ব্যাপার, অন্তর্বর্তী সরকার ও অঘোষিত সরকারি দল এনসিপি সংস্কারের কথা উঠতে বসতে বললেও আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার আসলে কী কী সংস্কার করতে চায়, সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো ধারণা দিচ্ছে না!
বস্তুত সরকারের ভেতরে-বাইরে অনেক কিছুই হচ্ছে। বেশির ভাগ আমরা নাগরিকরা জানি না; ধারণা করি মাত্র। বিগত সরকারের মতো এই সরকারও জনগণকে অনেক কিছু জানতে দিচ্ছে না। কিন্তু ‘জনগণ চায় বা চায় না’– এটি নিয়েই সবচেয়ে বেশি রাজনীতি হচ্ছে। এখন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আমরা পেয়েছি। কিন্তু ‘জুন মার্কার’ এপ্রিল পর্যন্ত এলেও কেন ডিসেম্বর পর্যন্ত আসবে না– সে সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা মিলছে না; না অন্তর্বর্তী সরকার, না তাদের সমর্থক এনসিপির দিক থেকে।
নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও এনসিপির অবস্থান জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নাগরিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। কারণ যেমন শাসকই থাকুক, সেটা যদি প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় না আসে, তাহলে জনগণই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে। অতীতে অনেকবার এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগের টানা চার মেয়াদের শাসনামলে জনগণ সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।
জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
zobaidanasreen@gmail.com