বিএসএফের অননুমোদিত প্রচেষ্টায় ‘সীমান্তে উত্তেজনা’
Published: 12th, January 2025 GMT
সীমান্তে বিএসএফ-এর সাম্প্রতিক কার্যকলাপে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে মন্ত্রণালয়ে ‘ডেকে নিয়ে’ সরকারের পক্ষ থেকে ‘কড়া বার্তা’ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। বিশেষ করে, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বিএসএফ-এর অননুমোদিত প্রচেষ্টা ‘সীমান্তে উত্তেজনা’ সৃষ্টি করেছে—এমনটাও জোর দিয়ে জানান তিনি।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাইকমিশনারকে তলব করা হয়। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মো.
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত জসিম উদ্দিন জোর দিয়ে বলেন, ‘‘এই ধরনের কার্যকলাপ, বিশেষ করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অননুমোদিত প্রচেষ্টা এবং বিএসএফের সংশ্লিষ্ট অপারেশনাল পদক্ষেপ সীমান্তে উত্তেজনা ও ঝামেলা সৃষ্টি করেছে।’’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান পররাষ্ট্র সচিবের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে।’’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হবে।
জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘‘অপরাধ দমনে সীমান্ত নিরাপত্তায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব থাকাও প্রয়োজন। সীমান্তের বেড়া নির্মাণে সহযোগিতামূলক মনোভাব আশা করি আমরা।’’
সুনামগঞ্জে বিএসএফ সম্প্রতি একজন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা করেছে— এ তথ্য জানিয়ে, পররাষ্ট্র সচিব সীমান্তে হত্যার পুনরাবৃত্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে এবং এই সমস্ত সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পরিচালনা ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জরুরি ব্যবস্থার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র সচিব।
বিএসএফের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় জড়ো হন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১০ জানুয়ারি বিকেলে পাটগ্রামের মুন্সিপাড়া সীমান্তে।
পররাষ্ট্র সচিব বর্ণনা করেন, ‘‘এটিও গুরুতর উদ্বেগের বিষয় যে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বারবার অ-প্রাণঘাতী কৌশল অনুসরণ ও হত্যা বন্ধ করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।’’
পররাষ্ট্র সচিব ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন ভারত-সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে এমন কোনো উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন; যা ভাগাভাগি করা সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।
সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
পররাষ্ট্র সচিব আরো বর্ণনা করেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, এ ধরনের সমস্যাগুলো গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থায়িত্ব বজায় রাখার উপায়ে সমাধান করা উচিত।
সচিবের দপ্তর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ভারতীয় দূত বলেন, ‘‘অপরাধমুক্ত সীমান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে। চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়েও কথা হয়েছে। দুই সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যেও কথাবার্তা হয়।’’
একই দিনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, সীমান্তে কোনো বিরূপ ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘‘ভারত এরই মধ্যে ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৩ হাজার ২৭১ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। বাকি ৮৮৫ কিলোমিটার এলাকায় কাজ শুরু করতে হলে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি অনুযায়ী আলোচনার প্রয়োজন।’’
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘ভারত সম্প্রতি লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোর, ফেনী, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া এবং নওগাঁর পত্নীতলায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের উন্নয়ন কাজ দুদেশের আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে। বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কঠোর অবস্থানের কারণে ভারতের নির্মাণ কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।’’
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।
খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।
উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।