রাষ্ট্রীয় ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ কেন জরুরি
Published: 21st, January 2025 GMT
একবিংশ শতাব্দী হলো জ্ঞান, উদ্ভাবন ও কৌশলগত দক্ষতার যুগ। একটি রাষ্ট্রীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এই তিনটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করে, যা উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী হতে পারে। একটি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ মূলত অভিজ্ঞতামূলক গভীর গবেষণা, নীতিগত বিশ্লেষণ ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রম সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি, অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তনশীল বাস্তবতা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গভীর ও সুসংগঠিত বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কৌশলগত রূপরেখা প্রণয়ন করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তরুণ প্রজন্মের মেধাবীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে অনুপ্রাণিত করতে পারে, যা ভবিষ্যতে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে। এটি দেশের নীতিনির্ধারকদের তথ্যভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করবে। সুতরাং বাংলাদেশের মতো দ্রুত পরিবর্তনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে রাষ্ট্রীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক একটি অপরিহার্য সংযোজন হতে পারে। এটি উন্নয়ন অগ্রাধিকার নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে, যেখানে দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ যেমন দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এটি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, নীতি বাস্তবায়নে একটি সুসংগঠিত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করতে পারে। একই সঙ্গে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে গবেষণা ও পরামর্শ প্রদান করবে, যা আন্তর্জাতিক চুক্তি ও অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হবে।
রাষ্ট্রীয় ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ না থাকলে একটি রাষ্ট্র বহুমুখী ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। প্রথমত, নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গভীর বিশ্লেষণ এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির অভাব দেখা দিতে পারে, যা রাষ্ট্রের উন্নয়ন কার্যক্রম অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অকার্যকর করে তুলতে পারে। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক পরিবর্তন ও প্রযুক্তিগত বিপ্লবের যুগে, তথ্য ও গবেষণাভিত্তিক নীতি না থাকলে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। কারণ গবেষণা ও বিশ্লেষণের অভাবে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং চুক্তি করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিজের স্বার্থ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হতে পারে।
রাষ্ট্রীয় ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’-এ এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যারা নীতি প্রণয়ন, গবেষণা এবং বাস্তবভিত্তিক সমাধান প্রদানে গভীর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানসম্পন্ন। প্রথমত, একাডেমিক গবেষক ও শিক্ষাবিদ যারা অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন, তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান ও গবেষণা দক্ষতা থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে তথ্যনির্ভর নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, সরকারি নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের থাকা জরুরি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিজ্ঞ কূটনীতিক ও আইন বিশেষজ্ঞরাও থিঙ্ক ট্যাঙ্কে কার্যকর অবদান রাখতে পারেন। কারণ তারা বৈশ্বিক রাজনীতি, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। সবশেষে তরুণ উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সমন্বিতভাবে এ ধরনের ব্যক্তি থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে গবেষণা ও নীতিতে বৈচিত্র্য, গভীরতা এবং বাস্তবসম্মত সমাধান প্রদানে সমর্থ করে তুলতে পারেন।
ড.
বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলনের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী মোদির
কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬তম সম্মিলিত সেনা সম্মেলন (সিসিসি) উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেনা সম্মেলন একটি দ্বিবার্ষিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শীর্ষস্তরীয় মতবিনিময়ের আসর।
অপারেশন সিঁদুরে’র পর এটিই প্রথম সম্মিলিত সেনা সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, তিন বাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান, প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানও।
আরো পড়ুন:
অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প
আসামে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ৫ বাংলাদেশি ছাত্রকে বহিষ্কার
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড সদর দপ্তর কলকাতার বিজয় দুর্গে তথা ফোর্ট উইলিয়ামে আগামী তিনদিন এই সম্মিলিত সেনা সম্মেলন চলবে।
এই সম্মেলন সেনার তিন বাহিনীর সর্বোচ্চ চিন্তাভাবনামূলক ফোরাম, যা দেশের শীর্ষ অসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বকে ধারণাগত ও কৌশলগত স্তরে মতামত বিনিময়ের জন্য আয়োজন করা হয়েছে ৷ কলকাতার আগে সর্বশেষ সম্মিলিত সেনা সম্মলেন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৩ সালে ভোপালে। অপারেশন সিঁদুরের প্রেক্ষাপটে, এই বছরের সম্মেলন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সম্মেলনে সংস্কার, রূপান্তর, পরিবর্তন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির উপর জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু সশস্ত্র বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সংহতিকরণ এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে বিশেষ জোর দেওয়া। একই সঙ্গে শীর্ষস্তরের একাধিক ক্ষেত্রে অপারেশনাল প্রস্তুতির উপরও জোর দেওয়া হবে। তিনদিনের এই সম্মেলন সশস্ত্র বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হবে, যাতে ক্রমবর্ধমান জটিল ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।’
রবিবার আসাম সফর সেরে নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ কিছুটা পর দমদম বিমানবন্দরে নামেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা এবং উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মোদিকে দেখতে ভিড় ছিল বিজেপি সমর্থকদের। ভিড় দেখে গাড়ি থামিয়ে হাত নেড়ে জনসংযোগ সারেন মোদি। সেখান থেকে তার ২৪ গাড়ির কনভয় পৌঁছায় রাজভবনে। সেখানেই রাত্রিবাস করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। তিনি রাত কাটান ফোর্ট উইলিয়ামে।
চলতি বছরে এই নিয়ে চতুর্থবার পশ্চিমবঙ্গে এলেন নরেন্দ্র মোদি। সকাল ৯ টাতেই রাজভবন থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়ামে ছিলেন মোদি। দেড়টার পরে কলকাতা থেকে বিহারের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
একদিকে বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অন্যদিকে অস্থির চিন সীমান্ত। তার মধ্যে আবার নেপালে পালাবদল। দিনকয়েক আগে বাংলাদেশের উত্তরে চিন বিমানঘাঁটি তৈরি করতে চলেছে বলে একটি খবর ছড়ায়। ঘাঁটিটি নাকি আবার তৈরি হবে চিকেনস নেকের কাছেই। সবমিলিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরাট এক জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় কলকাতার বিজয় দুর্গে সেনা সম্মেলনের আয়োজন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ