জমি পাহারা দেওয়ার মতো ভোটকেন্দ্রও পাহারা দিতে হবে: সিইসি নাসির উদ্দীন
Published: 22nd, February 2025 GMT
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আ.ম.ম নাসির উদ্দীন বলেছেন, যেভাবে নিজের জমি পাহারা দেন, তেমনি নিজের ভোটটাও পাহারা দেবেন। দরকার হলে সবাইকে ভোটকেন্দ্রও পাহারা দিতে হবে। যাতে সুন্দর একটি নির্বাচন হয়।
শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় তার পিতা ও দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত মাস্টার তালেব উল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও হাফেজ জালাল উদ্দীন আদর্শ হেফজখানার বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ভোটকেন্দ্রে বাধাপ্রদান ও মানুষ মারার ঘটনাগুলো আর চলবে না। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড কোনোক্রমেই হতে দেওয়া হবে না।
আগামীতে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে দেশবাসীকে নিয়ে আন্দোলন সৃষ্টি করা হবে। এ আন্দোলন শুধু ভোট দেওয়ার অধিকার নয়, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন।
যাতে নির্বাচন সুন্দর হয় এবং ঈদের আনন্দের মতো ভোট উৎসব করতে পারি। এ উৎসবে দেশপ্রেমিক, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের দেশবাসী ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী করলে সমাজের সব সমস্যা সমাধান হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কারও হুকুমমতো চলবে না। এমনকি সরকারের চাহিদানুযায়ীও চলবে না কমিশন। আইন যে ক্ষমতা দিয়েছে কমিশন সে অনুযায়ী ষোলোআনা চলবে। নির্বাচন কমিশন কারো পক্ষে কাজ করে না এবং করবে না। এটাই কমিশনের অঙ্গীকার।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় কুতুবদিয়া দ্বীপের সদর বড়ঘোপে উত্তর মগডেইল নিজ বাড়িতে পৌঁছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বার্ষিক ক্রীড়া ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথোয়াইপ্রু মারমা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সাদাত হোসেন, কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান হোসেন, স্থানীয় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও কুতুবদিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি আ.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ টক ন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।