নেইমার পুনরায় বার্সেলোনার ফিরতে পারেন। কদিন ধরেই এমন একটা গুঞ্জণ শোনা যাচ্ছে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে। ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা পেতে কদিন আগেই আল হিলাল ছেড়ে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে নাম লিখিয়েছেন এই ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। সেখানে ফিটনেস ফিরে পাওয়ার পর জানা গেল তিনি সাবেক ক্লাব বার্সায় প্রত্যাবর্তন করতে পারেন। তবে এই আলোচনার মাঝে নেইমার এবার বোমা ফাটালেন। নিজেই জানালেন- ২০১৩ সালে নিজেদের ডেরায় টানার জন্য রিয়াল মাদ্রিদ তাকে ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দিয়েছিল!

২০১৩ সালে সান্তোস ছেড়ে লা-লিগার ক্লাব বার্সালোনায় যোগ দেন নেইমার। সেখানে সঙ্গী হিসেবে পান মেসি-সুয়ারেজদের। এতদিন গনমাধ্যম দাবি করে আসছিল যে, এই ব্রাজিলিয়ানকে পেতে আগ্রহী ছিল বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়ালও। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন পক্ষই ব্যাপারটা নিয়ে মুখ খুলেনি। অবশেষে নেইমার সত্যতা দিলেন এতদিনের গুঞ্জণকে।

আরো পড়ুন:

সোসিয়েদাদ দর্শকদের অসহিষ্ণুতা, ম্যাচের পার্থক্য গড়লেন এনদ্রিক 

দুই গোলে এগিয়ে থেকেও বার্সার ড্র

সান্তোসে ফর্মে ফিরার পর আবারও নেইমারের বার্সায় ফেরার সংবাদ আসে। এই ব্রাজিলিয়ান কাতালান জায়ান্টদের হয়ে ১৮৬ ম্যাচ খেলে জিতেছেন ১টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এবং ২টি লা-লিগা শিরোপা। পেয়েছিলেন ১০৫ গোল ও ৭৬ অ্যাসিস্ট। এরপর ২০১৭ সালে পিএসজিতে যোগদান করেছিলেন বিশাল ট্রান্সফার ফি এবং বেতনের বিনিময়ে। পরে ২০২৩ সালে সৌদি প্রো লিগ ঘুরে ২০২৫ সালের প্রথমভাগে পুনরায় দেশের ক্লাব সান্তোসে ফিরে যান। সেখানে স্বল্পকালীন চুক্তি করেন।

সান্তোসের হয়ে দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৮ ম্যাচে ২ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট করে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন নেইমার। তবে সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বার্সায় পুনরায় যোগ দিতে চান তিনি। যদিও বার্সা কোচ হান্সি ফ্লিক এই চুক্তির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন স্পষ্ট সংকেত দেননি। স্প্যানিশ দৈনিক দা অ্যাথলেটিকেরে দাবি- বার্সেলোনা এবং নেইমারের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে, নেইমার বার্সেলোনার প্রতি নিজের আনুগত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সমর্থকদের। ২০১৩ সালে কেন তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে বাদ দিয়ে বার্সাকে বেছে নিয়েছিলেন সেটিও জানান।

সম্প্রতি একটি পডকাস্টে নেইমার বলেন, “আমার কাছে উভয় পক্ষ (বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ) থেকে প্রস্তাব এসেছিল। রিয়ালের প্রস্তাবটি ছিল প্রায় একটি সাদা চেক। রিয়াল বলেছিল, ‘যতটুকু চাও (বেতন), তা লিখে দাও। আমরা পরিশোধ করতে প্রস্তুত।’ যদি আমি রিয়ালে চলে যেতাম, তবে আমি বার্সেলোনায় যা পেতাম তার তিন গুণ বেশি আয় করতাম।”

বার্সার প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসার কারণেই রিয়ালের এই লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন নেইমার, “আমি শেষ পর্যন্ত আমার হৃদয়ের কথা শুনেছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিল লিওনেল মেসির সাথে খেলা, তখনই আমি বার্সেলোনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।”

যদি নেইমারকে সত্যিই চুক্তিবদ্ধ করার কথা ভাবে বার্সালোনা, তবে এটি তাদের জন্য খুবই লাভজনক হবে। কারণ কোনো ট্রান্সফার ফি’র প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া নেইমারকে আগের মতো আকাশ্চুম্বী বেতনও দিতে হবে না। তবে এই ব্রাজিলিয়ানের ফিটনেসটাই সম্ভবত তার বার্সায় ফিরার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প য ন শ ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ