বিমসটেককে কার্যকর করতে আঞ্চলিক এফটিএ জরুরি
Published: 13th, March 2025 GMT
বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় জোট বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন-বিমসটেক। তবে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ঘাটতি, দ্বন্দ্ব এবং বিমসটেকের সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এতে যে কোনো উদ্যোগ নেওয়া ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে বিমসটেক থেকে সুবিধা পেতে আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার পরামর্শ দিয়েছেন জোটের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।
গতকাল বুধবার আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ে বিমসটেক নীতি সংলাপে এ পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দেন তারা। রাজধানীর গুলশানে বিমসটেক সচিবালয়ে এ আয়োজন করে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও বিমসটেক সচিবালয়। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের সাতটি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিমসটেক গঠিত হয়। আগামী এপ্রিলে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় জোটের ষষ্ঠ সম্মেলনকে সামনে রেখে এ নীতি সংলাপ হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিমসটেক মহাসচিব ইন্দ্র মনি পান্ডে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বিমসটেকের জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কোনো পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়ে একটি কাঠামো নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। একাধিক পক্ষ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তবে এফটিএতে যেতে হলে সদস্য দেশগুলোকে আগে সমঝোতায় আসতে হবে।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। এতে তিনি বলেন, বিমসটেকের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান বাধা হলো এফটিএর অনুপস্থিতি। ২০০৪ সালে একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ এফটিএ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এ কারণে সংবেদনশীল পণ্যের তালিকা নিয়ে মতবিরোধ, অশুল্ক বাধা, সুরক্ষামূলক বাণিজ্য নীতি ও অর্থনীতি উন্মুক্ত করতে সদস্য দেশগুলোর অনীহার মতো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
প্যানেল আলোচনায় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিমসটেকের দেশগুলোর মধ্যে এফটিএ করা গেলে বাণিজ্যের ব্যয় অনেক কমানো সম্ভব হবে। তবে এর জন্য দেশগুলো থেকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন হবে।
এ ছাড়া সংলাপে অংশ নেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, বিমসটেকের সাবেক মহাসচিব সুমিত নাকান্দালা, ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের (আরআিইএস) অধ্যাপক প্রবীর দে, নেপালের সাউথ এশিয়া ওয়াচ অন ট্রেড ইকোনমিকস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক পরাস খারেল প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।
ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।
জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।
ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।
আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’
জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল