কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ এসেছেন প্রিয়জনকে নিয়ে, কেউবা আবার এসেছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। ঈদের ছুটি উদযাপনকে কেন্দ্র করে ঈদের পঞ্চম দিনেও পটুয়াখালীর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় সমাগম ঘটেছে লাখো পর্যটকের। এবছরের মধ্যে শুক্রবার সবেচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকের ভিড়ে টইটুম্বুর হয়ে আছে সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকা। আগত পর্যটকরা হইহুল্লোরে মেতেছেন। অনেকে সমুদ্রের নোনা জলে সাঁতার কাটছেন, অনেকে সমুদ্রের বালিয়াড়িতে ফুলবল নিয়ে খেলা করছেন, অনেকে আবার মেতেছেন জলকেলিতে। শিশুরা মেতেছে বালু খেলায়। 

এছাড়া অনেকে স্পিড বোট, ওয়াটারবাইক, ঘোড়া এবং মোটরসাইকেলে ঘুরে দেখছেন সৈকতের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। অনেকে ছবি কিংবা সেলফি তুলে রেখে দিচ্ছেন স্মৃতির পাতায়। কেউবা আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন সমুদ্রের উতাল পাতাল ঢেউসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। অনেকে আবার প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে ঘুরে দেখছেন পুরো সৈকত। 

আগত পর্যটকদের মাঝে এখনও বইছে ঈদ উৎসবের আমেজ।

সকল পর্যটন স্পটে রয়েছে পর্যটকদের বাড়তি উপস্থিতি

এদিকে রাখাইন মার্কেট, শুঁটকি মার্কেট, সীমা বৌদ্ধ বিহার, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, লাল কাঁকড়ার চর, গঙ্গামতি, ঝাউ বাগান, শুঁটকি পল্লী,  লেম্বুর বন ও তিন নদীর মোহনাসহ সকল পর্যটন স্পটে রয়েছে পর্যটকদের বাড়তি উপস্থিতি। 

আগতদের ভিড়ে বিক্রি বেড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বুকিং রয়েছে কুয়াকাটার আড়াই শতাধিক হোটেল মোটেল। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।

ঢাকার কামরাঙ্গীর চর থেকে আসা পর্যটক পারভেজ-শিউলী দম্পতি বলেন, “পরিবারের ৬ সদস্য মিলে গতকাল বিকেলে আমরা কুয়াকাটায় এসেছি। এত মানুষ একই স্থানে একসঙ্গে আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। সৈকতের জলতরঙ্গ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছে। তবে এখানে খাবার মূল্য এবং হোটেল ভাড়া একটু বেশি।” 

ঢাকার গাজীপুর থেকে আসা ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, “আমরা ৮ বন্ধু মিলে কুয়াকাটায় এসেছি। এখন প্রচণ্ড রোদ থাকার কারণে বেঞ্চিতে বসে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সৈকতের তীরে আছড়ে পড়া ছোট বড় ঢেউ উপভোগ করছি। এ এক অন্যরম অনুভূতি। কিছুক্ষণ পরে জোয়ার আসলে আমরা সবাই মিলে সাঁতার কাটবো। কুয়াকাটার ভ্রমণের কথা আমাদের চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।” 

শেষ সময়ে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে

ট্যুর অপারেটরস এ্যাসোশিয়েসন অফ কুয়াকাটা এর সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু বলেন, “আমাদের ধারণা, দর্শনার্থী এবং পর্যটক মিলিয়ে আজ কুয়াকাটায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটেছে। আমরা পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।” 

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল আহসান বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাঠে রয়েছি। এছাড়া সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছে। ১০টি পর্যটন স্পটে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আশা করছি পর্যটকরা নিরাপদে তাদের ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।”

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “যেহেতু ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই শেষ সময়ে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।” 

ঢাকা/ইমরান/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স কত র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 

রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। 

আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, বিপাকে ৪০ হাজার পর্যটক
  • আমার জন্মঋতু
  • হাওরের স্বচ্ছ জলে মুগ্ধ পর্যটক, বাড়ছে ভিড়
  • পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কেউ অসুন্দর করলে ব্যবস্থা: চসিক মেয়র
  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
  • কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ