ঈদের পঞ্চম দিনে কুয়াকাটায় লাখো পর্যটক
Published: 4th, April 2025 GMT
কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ এসেছেন প্রিয়জনকে নিয়ে, কেউবা আবার এসেছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। ঈদের ছুটি উদযাপনকে কেন্দ্র করে ঈদের পঞ্চম দিনেও পটুয়াখালীর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় সমাগম ঘটেছে লাখো পর্যটকের। এবছরের মধ্যে শুক্রবার সবেচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকের ভিড়ে টইটুম্বুর হয়ে আছে সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকা। আগত পর্যটকরা হইহুল্লোরে মেতেছেন। অনেকে সমুদ্রের নোনা জলে সাঁতার কাটছেন, অনেকে সমুদ্রের বালিয়াড়িতে ফুলবল নিয়ে খেলা করছেন, অনেকে আবার মেতেছেন জলকেলিতে। শিশুরা মেতেছে বালু খেলায়।
এছাড়া অনেকে স্পিড বোট, ওয়াটারবাইক, ঘোড়া এবং মোটরসাইকেলে ঘুরে দেখছেন সৈকতের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। অনেকে ছবি কিংবা সেলফি তুলে রেখে দিচ্ছেন স্মৃতির পাতায়। কেউবা আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন সমুদ্রের উতাল পাতাল ঢেউসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। অনেকে আবার প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে ঘুরে দেখছেন পুরো সৈকত।
আগত পর্যটকদের মাঝে এখনও বইছে ঈদ উৎসবের আমেজ।
সকল পর্যটন স্পটে রয়েছে পর্যটকদের বাড়তি উপস্থিতি
এদিকে রাখাইন মার্কেট, শুঁটকি মার্কেট, সীমা বৌদ্ধ বিহার, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, লাল কাঁকড়ার চর, গঙ্গামতি, ঝাউ বাগান, শুঁটকি পল্লী, লেম্বুর বন ও তিন নদীর মোহনাসহ সকল পর্যটন স্পটে রয়েছে পর্যটকদের বাড়তি উপস্থিতি।
আগতদের ভিড়ে বিক্রি বেড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বুকিং রয়েছে কুয়াকাটার আড়াই শতাধিক হোটেল মোটেল। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
ঢাকার কামরাঙ্গীর চর থেকে আসা পর্যটক পারভেজ-শিউলী দম্পতি বলেন, “পরিবারের ৬ সদস্য মিলে গতকাল বিকেলে আমরা কুয়াকাটায় এসেছি। এত মানুষ একই স্থানে একসঙ্গে আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। সৈকতের জলতরঙ্গ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছে। তবে এখানে খাবার মূল্য এবং হোটেল ভাড়া একটু বেশি।”
ঢাকার গাজীপুর থেকে আসা ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, “আমরা ৮ বন্ধু মিলে কুয়াকাটায় এসেছি। এখন প্রচণ্ড রোদ থাকার কারণে বেঞ্চিতে বসে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সৈকতের তীরে আছড়ে পড়া ছোট বড় ঢেউ উপভোগ করছি। এ এক অন্যরম অনুভূতি। কিছুক্ষণ পরে জোয়ার আসলে আমরা সবাই মিলে সাঁতার কাটবো। কুয়াকাটার ভ্রমণের কথা আমাদের চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
শেষ সময়ে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে
ট্যুর অপারেটরস এ্যাসোশিয়েসন অফ কুয়াকাটা এর সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু বলেন, “আমাদের ধারণা, দর্শনার্থী এবং পর্যটক মিলিয়ে আজ কুয়াকাটায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটেছে। আমরা পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।”
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল আহসান বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাঠে রয়েছি। এছাড়া সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছে। ১০টি পর্যটন স্পটে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আশা করছি পর্যটকরা নিরাপদে তাদের ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।”
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “যেহেতু ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই শেষ সময়ে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স কত র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ