অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একমত হতে পারছে না। এনবিআর বলছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর আইআরডি বিলুপ্ত হবে। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, আইআরডি বহাল থাকবে এবং তারাই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করবে। 

রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে এনবিআর ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে গত ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর এনবিআর রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া তৈরি করেছে। এই অধ্যাদেশ আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হতে পারে। 

অধ্যাদেশের ১০ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে আইআরডি বিলুপ্ত হবে। রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত হবে আইআরডির জনবল। এ ছাড়া আইআরডির বিদ্যমান কার্যক্রম রাজস্ব নীতি বিভাগে অথবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো বিভাগে যথাযথভাবে বিভাজন করবে সরকার। ১১ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নিজ নিজ বিভাগের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন, আদেশ, ব্যাখ্যা ইত্যাদি জারি করতে পারবে।

এদিকে গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংস্কার কমিশনগুলোর বাছাই করা আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগ নির্ধারিত ছকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। এ জন্য দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলোর তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সমকালকে বলেন, যে কাজগুলো রাজনৈতিক দলের মতামত ছাড়াই অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পুনর্গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সমকালকে বলেন, নতুন অধ্যাদেশ নিয়ে কাজ চলছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাবটি কোন দিক থেকে কীভাবে এসেছে, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। দুই ধরনের প্রস্তাবের মধ্যে কোনটা বাস্তবায়ন হতে পারে– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। 

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, দুটি প্রস্তাবেই উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গুরুত্বটা বেশি থাকে। তবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কার্যকরভাবে আলাদা হলে সে ক্ষেত্রে একদিকে এনবিআর রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নে অধিকতর স্বাধীনতা ভোগ করবে; অন্যদিকে আইআরডি রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী তার স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবে। ভারতে একদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এবং অন্যদিকে প্রত্যক্ষ কর বোর্ড ও পরোক্ষ কর বোর্ড এ কাজগুলো করে থাকে। স্বাধীনতা ও জবাবদিহি পরস্পরের পরিপূরক।

বিলুপ্ত হবে এনবিআর 

নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ (১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ (৭৬ নং) রহিত হবে এবং এর অধীন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত হবে। তবে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে। ন্যস্ত করা জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। কোনো মামলা বা আইনগত কার্যধারা কোনো আদালতে চলমান থাকলে তা এমনভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে, যেন ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ রহিত হয়নি এবং আইআরডি বিলুপ্ত হয়নি। আরোপিত কোনো শুল্ক, কর, সারচার্জ, ফি বা অন্য কোনো পাওনা এই অধ্যাদেশ জারির অব্যবহিত পূর্বে অনাদায়ী থাকলে বা কোনো বিষয় অনিষ্পন্ন থাকলে আগের অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে নিষ্পন্ন করতে হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ 

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। সরকার এ দুই বিভাগের জন্য যথাযথ সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করবে। রাজস্ব নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসা প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের থেকে পূরণযোগ্য হবে। কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল হবে রাজস্ব নীতি বিভাগের সংযুক্ত দপ্তর। 

রাজস্ব নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে পরামর্শক কমিটি

সরকার রাজস্ব নীতি প্রণয়নে রাজস্ব নীতি বিভাগকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করবে। অর্থনীতিবিদ, রাজস্ব বিশেষজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞ, হিসাব ও নিরীক্ষা বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী সংগঠন ও পেশাজীবী প্রতিনিধি, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রতিনিধিত্বে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হবে। 

শুধু প্রশাসনিক কাজ করতে পারবে প্রশাসন ক্যাডার

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগে কাজ করতে পারবেন বিসিএস প্রশাসন, কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক তপশিলে বর্ণিত আইন বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে নিয়োজিত পদে শুধু বিসিএস কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করবেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র ব ল প ত হব ন র জন য প রস ত ব উপদ ষ ট প রণয়ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনবল নিয়োগ দিচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, পদ ৪৩০
  • জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • প্রকৌশল পেশাজীবীদের দাবি পূরণে উপাচার্য-অধ্যক্ষদের সঙ্গে আগামীকাল বৈঠক
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই
  • এক সপ্তাহের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ ৫ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের