ভাইকে কোলছাড়া করতেই চাচ্ছে না ইমতিয়াজ
Published: 17th, April 2025 GMT
আলমগীর-সুমাইয়ার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এলাকার রাজরামপুর গ্রামে। তাদের বড় ছেলের নাম ইমতিয়াজ হোসেন। তার বয়স ৭ বছর। বড় ছেলের নামের সাথে মিল রেখেই ছোট ছেলের নাম রাখা হবে বলে ভেবে রেখেছেন মা। তবে, নাম এখনো ঠিক করা হয়নি। এই শিশুকে হাফেজ বানাতে চান বাবা।
নবজাতকের জন্মানোর সম্ভাব্য সময় ছিল আজ ১৭ এপ্রিল। তবে রোববার রাতে হঠাৎ করে প্রসব বেদনা ওঠে সুমাইয়ার। তখন তড়িঘড়ি করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর স্বামী। তাদের বাড়ি থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিয়ে রাত ১টার দিকে তাকে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। তখন নবজাতকের বাবা-মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে আসেন সুমাইয়ার মামি ও আলমগীরর মামি। তারা সারা রাত জেগে থেকে নবজাতকের মায়ের সেবা করেছেন তারা। আর নবজাতকের বাবা সারারাত চিন্তায় হাসপাতালের বারান্দায় পায়চারি করেছেন। কারণ ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখের আগে ব্যাথা শুরু হওয়ায় ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তিনি। এভাবেই রাত কেটে যায় তার। পরদিন সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শিশুটির জন্ম হয়। শিশুটি পৌনে তিন কেজি ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। তার স্বাস্থ্য ভালো হওয়ায় পরিবারের লোকজন দারুণ খুশি। কোনো ধরনের অপারেশন ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয় শিশুটি। নবজাতকের বাবা আলমগীর পেশায় একজন টালি মিস্ত্রী। সুমাইয়া গৃহিনী। ৮ বছর আগে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
নবজাতককে দেখে সবচেয়ে খুশি হয় তার বড়ভাই ইমতিয়াজ। কিছুক্ষণ পরপর মায়ের কাছে আবদার করে যেন ছোটভাইকে তার কোলে দেওয়া হয়। কোলে তুলে নেওয়ার পরই সে ভাইকে আদর করতে থাকে।
মোসাম্মৎ সুমাইয়া উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘গর্ভবতী থাকার পুরো সময়টাই আমি সুস্থ ছিলাম। আমার প্রথম সন্তানও স্বাভাবিকভাবে হয়েছে। দ্বিতীয় সন্তানও স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীতে আসলো। আজকে বছরের প্রথম দিনে আমার সন্তান জন্মেছে, আবার আজকে হাসপাতালে জন্মানো প্রথম শিশুও আমার ছেলে। এই বিষয় জানার পর খুশি লাগছে। বড় ছেলে ইমতিয়াজের নামের সাথে মিল রেখে ছোট ছেলের নাম রাখব। যেহেতু আগে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে তাই বাচ্চা পেটে থাকলে কিভাবে চলতে হবে তার নিয়ম কানুন আগেই জানা ছিল। তাছাড়া পাশেই একটি ক্লিনিকে একজন গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়েছি। ছেলে একদিন দেশের জন্য ভালো কিছু করবে এ আশাই করি।’
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার ঘর আলো করে আবারও দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে। আমার দুই সন্তানকে মানুষের মতো করে বড় করতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। সন্তানকে হাফেজ বানাতে চাই। ছেলের মায়ের স্বাস্থ্য ভালোই ছিল। ভালোভাবেই খাওয়া দাওয়া করতে পারত। তেমন কোনো আশঙ্কা ছিল না।’ সমকালের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানানোয় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
আলমগীরের মামি আলেয়া বেগম নবজাতককে প্রথম কোলে নেন। তিনি বলেন, ‘আজকে পহেলা বৈশাখে আমার নাতি জন্মেছে। বছরের প্রথম দিনে শিশু জন্মেছে, তাই আনন্দ লাগছে। নাতিকে প্রথম কোলে নেওয়ার পর মন প্রশান্তিতে ভরে গেছে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ।
পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন।
১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”
ঢাকা/এমদাদুল/রফিক