ঝালকাঠি জেলার নলছিটিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও বিষাদে ভরে গেছে মন। 

উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন পাকা ধানে ছেয়ে গেছে প্রকৃতি। শুরু হয়েছে ধান কাটা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালোও হয়েছে কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে অতিবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। 

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার দশ ইউনিয়নের ৮ হাজার ১২৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। কৃষি বিভাগের ধারণা, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাবেন কৃষক। 

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠে শুধু ধানের ফলন। দিগন্তজুড়ে সবুজ ধান পেকে সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। কিন্তু ধান কেটে ঘরে নেওয়ার কথা থাকলেও ধান কাটতে পারছেন না কৃষক। গ্রীষ্মের প্রথমে এত বৃষ্টি কখনো দেখেননি তারা। 

উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠী গ্রামের কৃষক লুৎফর সিকদার জানান, এবার ধান ভালো হওয়ার কথা থাকলেও মৌসুমের শেষের দিকে এসে অনেক বৃষ্টি থাকায় অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ধান কাটতে পারছেন না তারা, তাই অনেক লোকসান হবে বলে মনে করছেন। 

পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কৃষক জামাল তালুকদার জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও পরামর্শে চলতি বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। কিন্তু ধান কাটার সময় বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে অনেক ক্ষতি হবে তাদের। 

উপকৃষি কর্মকর্তা মো.

জাহিদ হাওলাদার বলেন, এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিবৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে কৃষকদের। তাই তাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধান পাকলে কর্তন করতে বলা হয়েছে।

ঢাকা/অলোক/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র র ফলন

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক

সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ঠিকাদার মোট বিলের ৮০ শতাংশ তুলে নিয়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা। এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ থমকে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। 
এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের। ইতোমধ্যে সড়কে বিছানো খোয়া উঠে গেছে। ধুলাবালি জমে সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার সড়ক। 
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কল রিসিভ করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশলী,  অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন জনকে দিতে হয়। কাজ চলাকালে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাইটে যান, তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাজিরা হিসাবে দিতে হয়। এভাবে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা চলে যায় ঘুষের পেছনে। যে টাকা থাকে, তা দিয়ে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর বরাদ্দের টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে যান। কর্তারা তাদের কীভাবে বিল ছাড় করেন, তারাই বলতে পারবেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার করেননি।
২০২১-২২ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ৩-এর আওতায় নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালিন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সড়ক পাকাকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ঠিকাদার সড়কের উভয় পাশে মাটি খুঁড়ে বালু ফেলে খোয়া বিছিয়ে দেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল তুলে লাপাত্তা। তিন বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে আছে। 
সড়কের কাজ শেষ করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলেও 
সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এখন চলছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া। 
সড়কটি দিয়ে নওগাঁয় হজরত শাহ শরিফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার, নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসা, নওগাঁ হাটবাজার, নওগাঁ সোনালী ব্যাংক, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়। 
উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্যালাসাইডিং, সাববেজ, সেন্ট ফিলিং ও ডব্লিউবিএম করেছে। সে অনুযায়ী বিল পাঠিয়েছি। বাকি কাজ না করায় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পাওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ