চট্টগ্রামের ১০টি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, ৬টিতে বাকি, মহাসড়ক অবরোধ
Published: 3rd, November 2025 GMT
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী বাদ পড়েছেন, ফলে বেশ কিছু নতুন মুখ এসেছে। এদিকে প্রার্থী ঘোষণার পর বাদ পড়া এক নেতার সমর্থকেরা আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাঁরা সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আজ সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন (চেয়ারম্যান); চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর; চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড)-এ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী; চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ; চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ এনামুল হক; চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম; চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন মুখএদের মধ্যে নতুন মুখ হিসেবে রয়েছেন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী; সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন; সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী এবং দলীয় নেতা নুরুল আমিন ও সরওয়ার আলমগীর।
ছয়টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নিদলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ৬ (রাউজান) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উওর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। দুই নেতার বিরোধে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাউজানে ১৪ টি খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে ছয়টি। দুজনের কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে দলে বিরোধ আরও চাঙা হয়ে উঠতে পারে সে আশঙ্কায় আপাতত ঘোষণা করা হয়নি।
একই অবস্থা চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে। সেখানে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা না দিলেও আসনটিতে বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম, নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও বিএনপি নেতা শামসুল আলম এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাঁদের একজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়ে যেতে পারে। তাই পরে এই আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দলের নীতি নির্ধারকেরা।
আজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এই আসনে আবু সুফিয়ানের নাম ঘোষণা করে পরে বলেন, এটি স্থগিত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বিএনপির হেভিওয়েট কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশী নেই। এই কারণে এই দুটি আসন জোটের জন্য হাতে রাখা হয়েছে। এলডিপির সঙ্গে জোট হলে অলি আহমদ ও তাঁর ছেলেকে এ দুটি আসন দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আবার শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে জামায়াতে ইসলামী সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন পেতে পারে।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইস্রাফিল খসরু দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন। আমীর খসরুকে একটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করায় তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করা হবে কিনা সে হিসাব-নিকাশ চলছে। এই আসনে একজন ব্যবসায়ী নেতার নামও আলোচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের মনোনয়ন চাইছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তরিকুল আলম। তাঁরা আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। একাধিক প্রার্থী থাকায় কোন্দল ঠেকাতে এই আসনের প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব আসনে আমাদের একাধিক মনোনয়নপ্রার্থী আছেন, সেখানে এই মুহূর্তে নাম ঘোষণা করা হলে ঝামেলা হতে পারে বলে দলের নীতিনির্ধারকেরা একটু সময় নিচ্ছেন। এ ছাড়া কয়েকটি আসন জোটের জন্য রাখা হয়েছে— যদি জোট হয়।’
আরও পড়ুনসীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের৫৮ মিনিট আগেমহাসড়ক অবরোধসীতাকুণ্ড আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হয়নি দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আসলাম চৌধুরীর। এই আসনে আসলাম চৌধুরীর পরিবর্তে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এরপর আসলাম চৌধুরীর সোমবার সন্ধ্যায় রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাঁরা সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি শহীদ মিনার এলাকায় সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন আসলামে সমর্থকেরা। তাঁরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ট র সদস য নগর ব এনপ র ম র ম হ ম মদ ল উদ দ ন ল ইসল ম ক অবর ধ এই আসন আলমগ র স মব র আসল ম আসন র ই আসন
এছাড়াও পড়ুন:
রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের রাউজানে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আলমগীর আলমের সহযোগী ছিলেন। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম মুহাম্মদ রাজু (২৮)। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার মৃত নুর নবীর ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, আলমগীর আলমকে গুলি করার সময় তাঁর পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন মুহাম্মদ রাজু।
গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। আলমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঢালারমুখ এলাকায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আলম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেছেন। নিহত আলমের শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।
রাউজান থানা-পুলিশ জানায়, আলম নিহত হওয়ার দুই দিন পর তাঁর বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করে রাউজান থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে রাজুর নাম নেই। তবে ঘটনার তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে এ মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন রাউজান কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রাসেল খান (৩২) ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী মুহাম্মদ হৃদয় (৩০)।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন অস্ত্রধারীরা আলমগীর আলমকে গুলি করার জন্য কবরস্থানে লুকিয়ে ছিলেন, তখন আলমগীর আলমের পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন রাজু। তিনি আলমগীরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তবে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন আলম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।