ভারত থেকে তিন সীমান্ত দিয়ে মানুষকে বেশি এপারে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ভারত থেকে পুশইন করা হয়েছে ১ হাজার ১১৪ জনকে। তাদের মধ্যে মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে ৩৮০, খাগড়াছড়ি ১৩২ ও সিলেট হয়ে পাঠানো হয়েছে ১১৫ জন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র বলছে, আরও যেসব সীমান্ত দিয়ে ভারত কথিত অভিবাসী দাবি করে ঠেলে পাঠিয়েছে, তার মধ্যে হবিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ৪১, সুনামগঞ্জ ১৬, কুমিল্লা ১৩, ফেনী ৫২, কুড়িগ্রাম ৯৩, লালমনিরহাট ৮৫, ঠাকুরগাঁও ১৯, পঞ্চগড় ৩২, দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে ১৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৭, কুষ্টিয়া ৯, মেহেরপুর ৩০, চুয়াডাঙ্গা ১৯, ঝিনাইদহ ৫২ ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ২৩ জন।
এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি লোককে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করেছে ভারত। অভিযানের ভয়ে আরও প্রায় দুই হাজার লোক ‘স্বেচ্ছায়’ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এসে জড়ো হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ অভিযান ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসামে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় চালানো হচ্ছে। গুজরাট এ অভিযান শুরুর দিককার রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এখান থেকেই প্রায় অর্ধেক লোককে পুশইন করা হয়েছে বাংলাদেশে। দিল্লি ও হরিয়ানা থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোককে ‘ফেরত পাঠানো হয়েছে’ বলে দাবি তাদের। বাকিদের আসাম, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান থেকে আটক করা হয়েছে।
ভারতের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া। যেসব রাজ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ রয়েছে, সেখানকার শহরগুলো থেকে নথি যাচাইয়ের পর এমন (তথাকথিত) অবৈধ অভিবাসীদের আটক করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এপ্রিলের পেহেলগামে হামলার পর এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রচেষ্টা শুরু হয়। অপারেশন সিঁদুরের পর এটি আরও গতি পেয়েছে। গুজরাট প্রথম শুরু করে, এরপর দিল্লি ও হরিয়ানা। আরও অনেক রাজ্য দ্রুতই শুরু করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এ বিষয়ে স্পষ্ট এবং রাজ্যগুলোও সহযোগিতা করছে।
তাঁর মতে, এসব কথিত ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমানে বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপর বিএসএফ তাদের গ্রহণ করে সীমান্তের অস্থায়ী শিবিরে রাখছে। তাদের খাবার ও প্রয়োজনে কিছু বাংলাদেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে এবং কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখার পর তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে।
ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম সীমান্তে অভিযান প্রসঙ্গে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ধারণা আছে, এ রাজ্যগুলো বিজেপিশাসিত হওয়ায় বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্য নয়। মেঘালয়ে বিজেপি ছোট সংখ্যালঘু দল। এ রাজ্যগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এখান থেকে (বাংলাদেশে) পুশইন সহজ। পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে, গ্রামের মাঝখান দিয়ে বা এমনকি বাড়ির মাঝখান দিয়েও সীমান্ত চলে যাওয়ায় এবং উভয় পাশে পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা ছিল।
সূত্রগুলো জানায়, প্রতি সপ্তাহে পুশইন সংখ্যা ১০ বা ২০ হাজারে পৌঁছালে বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে কিছুটা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। এক কর্মকর্তা বলেন, এটি কেবল অস্থায়ী সমাধান। এর আগেও এমন অভিযান হয়েছে, তবে তা অনেক ছোট পরিসরে। কিন্তু অভিবাসীরা পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ফিরে আসে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প শইন কর মকর ত প শইন
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।