দানিশকে বাংলাদেশে পুশইন, আদালতে যাচ্ছে তৃণমূল
Published: 10th, July 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূমের বাসিন্দা দানিশ শেখ। তাঁর স্ত্রী সোনালি খাতুন ও ছেলে সাবিরকে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে। অভিযোগ উঠছে ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও কেবল মুসলিম ও বাংলাভাষী হওয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘এই সময়’ অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, ‘কোনো খোঁজ নেই দানিশ শেখের। ২৬ বছরের যুবক ভারতের রাজধানী দিল্লিতে কাগজ কুড়ানোর কাজ করতেন। খোঁজ নেই তাঁর স্ত্রী সোনালি খাতুন (২৫) এবং তাদের ৯ বছরের ছেলে সাবিরেরও। সোনালিও দিল্লিতে দানিশের সঙ্গে কাজ করতেন। খোঁজ নিতে গিয়ে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। দিল্লি পুলিশের সন্দেহ হয়, দানিশ বাংলাদেশি। এ কারণে সপরিবার তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশে।’
পরিবারের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মুরারইয়ে পাকুড় থানা এলাকায় দানিশদের বংশানুক্রমিক বাস। ভিটেমাটি ছেড়ে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দানিশ দিল্লিতে থাকেন। যে বস্তিতে থাকতেন, কিছুদিন আগে সেখানে বিধ্বংসী আগুনে দানিশের ভোটার কার্ড পুড়ে যায়।
দানিশের শ্যালক রকি শেখ জানান, দানিশের আধার কার্ড তো ছিল। সেটা দেখানো হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। রকির অভিযোগ, গত ২৬ জুন দানিশ, তাঁর বোন সোনালি ও ভাগনেকে দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাদের আর কোনো খোঁজ নেই। তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সুইচ অফ বলছে।
অভিযোগ উঠছে, বাংলায় কথা বলা মুসলিমদের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ধরে ধরে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এদের প্রায় সবাই পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। প্রমাণপত্র দেখিয়েও লাভ হচ্ছে না। গত রোববার তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক্সে জানানো হয়, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজি ও বিবেকানন্দের ভাষায় (বাংলা) কথা বলাও এখন নরেন্দ্র মোদির দেশে অপরাধ।
রকি জানান, সোনালি তাঁর মামাতো বোন। মামা বহুদিন দিল্লিতে। আরেক মামাতো বোন করিশমাও সেখানে। করিশমাই ফোন করে জানান, দানিশদের পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। রকি জানান, দিল্লিতে করিশমা উকিলেরও ব্যবস্থা করেন। সোনালির আধার কার্ড সেই উকিলকে দেওয়া হয়। গত ২৬ তারিখ উকিল জানান, আর কিছু করার নেই। দানিশদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় দানিশের পরিবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য সামিরুল ইসলামের দ্বারস্থ হয়েছে। এ সংসদ সদস্য জানান, দানিশ ও তাঁর পরিবারকে দ্রুত ভারতে ফেরানোর দাবিতে তিনি আদালতে যাবেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি