বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মশাল মিছিল
Published: 13th, July 2025 GMT
মিডফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ড ও সারাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক শেল্টারে চাঁদাবাজি, দখলদারি, হামলা ও খুনের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শাহবাগ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
মশাল মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ, জুলাই অভ্যুত্থানে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীপুর বাজারে শহীদ নাদিমুল হাসান এলেমের বাবা শাহ আলম, জাতীয় যুবশক্তির সংগঠক নীরব রায়হান, জুলাই যোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আরমান শাফিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনামের সঞ্চালনায় মুখপাত্র সিনথিয়া জাহিন আয়েশাসহ নেতাকর্মীরা মিছিলে অংশ নেন।
শহীদ নাদিমুল হাসান এলেমের বাবা শাহ আলম বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই কীভাবে আমার ছেলেকে খুনি শেখ হাসিনা হত্যা করেছে। আপনারা কি চান আবার এই ঘটনা ঘটুক? আরেকটা দল এসে এমন করুক। যদি না চান এসব ঘটনার প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে জানাতে চাই- এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে। এই দশমাসে ১৫৪ জন মারা গেছে। আমরা আর এসব দেখতে চাই না। আমার ছেলে রক্ত দিছে, প্রয়োজনে আমি আবার রক্ত দেব। এগুলো আর করতে দেব না। সারাদেশের মানুষকে বলি, মিডিয়াকে বলি কেউ যাতে আর এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ বলেন, ‘ইন্টেরিম ঘোড়ার ঘাস কাটে কিনা আমরা জানি না। জননিরাপত্তা এমন জায়গায় পৌঁছেছে, মাঝেমধ্যে মনে হয় এই পুলিশ ইউনূসের নয়, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পুলিশ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলব, জনগণের নিরাপত্তার কাজে সাড়ে ৩২ নাম্বার পেয়ে ফেল করেছেন। আপনারা দেখেন কারা ধর্ষণ, খুন, হামলা করে। এমন ঘটনার পরে আমরা কোনো শুদ্ধি অভিযান দেখতে পাইনি। যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে অ্যাকশন দেখান। আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আসসালামু আলাইকুম, আপনি বিদায় নেন।’
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাটি শুক্রবার ভাইরাল হওয়ার দুইদিন আগে ঘটেছে। কিন্তু মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এগুলো সামনে আনেনি। মনে হচ্ছে, ফ্যাসিবাদী সময়ে মিডিয়াগুলো হাসিনার কোল থেকে নেমে অন্য কারো কোলে উঠেছে। তাদের প্রচারণায় নেমেছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন