সময় এক মাসের কম। ৮ ফেব্রুয়ারি ঠিক হয়ে যাবে চতুর্থবারের মতো দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন কি না অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ভোট গ্রহণ ৫ ফেব্রুয়ারি।

এমন নয় যে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া আম আদমি পার্টির (আপ) প্রতিষ্ঠাতা ও সর্বেসর্বার একমাত্র মোক্ষ। কিন্তু বৃহত্তর রাজনৈতিক মোক্ষলাভের পথে এগোতে হলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কুরসিই যে কেজরিওয়ালের মাছের চোখ, সে নিয়ে সন্দেহ নেই। যেমন সন্দেহ নেই তাঁর কাছে এটাই হতে চলেছে কঠিনতম নির্বাচন।

সহজভাবে বলা যায়, ৫ ফেব্রুয়ারির দিল্লি বিধানসভার ভোটে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন কেজরিওয়াল ও তাঁর আম আদমি পার্টি। চতুর্থবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হতে না পারলে কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক লেখচিত্রের নিম্নগামিতা ঠেকানো যেমন কঠিন হবে, তেমনই কঠিন হবে দল অটুট রাখা। দিল্লি হারালে পাঞ্জাবও কি ধরে রাখা যাবে? সন্দেহ প্রবল। সবচেয়ে বড় কথা পরিচ্ছন্ন ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় এসেছিল, যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি কেজরিওয়াল গড়ে তুলেছিলেন, ক্ষমতাসীন হতে না পারলে তার দফারফা অবশ্যম্ভাবী। বিজেপি তো বটেই, কংগ্রেসও এবার তাঁকে ছেড়ে কথা বলছে না। ছয় মাস জেলে কাটিয়ে জামিনে মুক্তি পেলেও দুর্নীতির কালো ছিটে এখনো তুলতে পারেননি। হেরে গেলে সেই দাগ পাকাপাকি রেখে দিতে বিজেপির চেষ্টায় ত্রুটি থাকবে না।

রাজনৈতিক বাজি এবার এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে কোনোরকমে টায় টায় পাস করার মতো নম্বর পেলেও কেজরিওয়ালের চলবে না। তাঁকে জিততে হবে ৭০–এর মধ্যে ৫০-৫৫টি আসন পেয়ে। কোনোরকমে সরকার গড়ার অর্থ হবে অমিত শক্তিধর বিজেপিকে ক্ষমতা দখলে প্রলুব্ধ করা। সরকারের পতন ঘটিয়ে সরকার গড়ার খেলায় বিজেপির ধারেকাছে কেউ নেই—এটা যেমন সবার জানা, তেমনই ক্ষমতার ঘ্রাণ পাওয়া বিজেপিকে রোখার ক্ষমতা যে তাঁদের নেই, কেজরিওয়াল তা জানেন। তার ওপর এবারের লড়াই ত্রিমুখী। বাজি যে কঠিন, তা তাঁর চেয়ে বেশি অনুধাবন কেউ করতে পারছে না।

২০১২ সালের অক্টোবরে দল গঠন করে ২০১৩ সালে প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়ে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ২৮টি আসনে জিতেছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল ৮টি। তাদের সমর্থন নিয়ে ৩২ আসন জেতা বিজেপিকে টপকে কেজরিওয়াল প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন। যদিও ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করায় রাজধানী রাজ্য দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির পথ প্রশস্ত হয়েছিল। এক বছর পর ২০১৫ সালের ভোটে তিনি সুনামি হয়ে ফিরেছিলেন। ৬৭টি আসন দখল করেছিল আপ সাড়ে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে। মাত্র ৩টি আসন জিতেছিল বিজেপি। সে সময় একটা কৌতুক খুব চালু হয়েছিল। লোকে বলাবলি করত, দিল্লির বিজেপি বিধায়কদের বিধানসভায় যাওয়া-আসার জন্য একটা অটোই যথেষ্ট! সেই লজ্জা বিজেপি আজও ঢাকতে পারেনি।

পাঁচ বছর পর ২০২০ সালের ভোটও ছিল আগেরবারের জলছবি। আপের আসনসংখ্যা ৬৭ থেকে কমে হয়েছিল ৬২। ভোট কমেছিল ১ শতাংশের কম। আপের হারানো ৫টি আসন বিজেপির ঝুলিতে যাওয়ায় তারা ৩ থেকে ৮-এ উঠেছিল। বিজেপি এবার মরিয়া। দুই–আড়াই বছর ধরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার ডালি তারা সাজিয়ে বসেছে। নির্বাচিত সরকারকে প্রতি পদে বাধা দিতে আইন করে উপরাজ্যপালের ক্ষমতা বাড়িয়েছে। তাঁর সম্মতি বিনা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের নেই। ১০ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লির যে হাল করেছে, গণতন্ত্রের পক্ষে তা অবশ্যই লজ্জার। আশঙ্কা, এমনই হাল হতে চলেছে জম্মু-কাশ্মীরেরও। ওমর আবদুল্লাহ ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল একই নৌকার সওয়ারি।

কেজরিওয়াল হেসেখেলে চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হলে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কংগ্রেসের অবস্থান আরও ঢিলে হবে। কেজরিওয়াল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অখিলেশ যাদবের অক্ষ জোরদার হবে। মহারাষ্ট্রে বিপর্যয়ের পর কংগ্রেস নিয়ে উদ্ধব ঠাকরেও আর গদগদ নন। ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব থেকে কংগ্রেসকে সরানোর যে স্বর হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র ভোটের পর মিনমিন করে উঠেছিল, কেজরিওয়ালের সাফল্য তা জোরালো করে তুলবে। দিল্লিতে হারলেও জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির পক্ষে তা হবে আশাব্যঞ্জক।

অথচ কাজের নিরিখে, বিশেষ করে দরিদ্র মানুষকে সুরাহা দেওয়ার ক্ষেত্রে কেজরিওয়াল অবশ্যই সফল। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কল্যাণে বাড়ি বসে বহু সরকারি পরিষেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে সরকারি অফিসে যাওয়ার ঝক্কি কমেছে। কমেছে দালাল চক্রের হাতে হয়রান হওয়ার সমস্যাও। মহল্লায় মহল্লায় দরিদ্রদের কাছে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন চিকিৎসা পরিষেবা। সরকারি স্কুলগুলোর হাল ফিরিয়েছেন। মহিলাদের বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসে যাতায়াতের সুবিধা করে দিয়েছেন। দরিদ্রদের জন্য বিনা পয়সায় ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছেন।

প্রথম সাত–আট বছর এই সুশাসনের মাধ্যমে যে সুনাম তিনি ও তাঁর দল অর্জন করেছে, শেষ দুই–আড়াই বছরে বিজেপি সেই ঔজ্জ্বল্য অনেকটাই কেড়ে নিয়েছে উপরাজ্যপালকে শিখণ্ডী করে। পদে পদে বাধা সৃষ্টি করে। রাজ্য সরকারের আবগারি (মদ) নীতি কেজরিওয়াল ও তাঁর সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিতে নিশ্চিতই কালি ছিটিয়েছে। সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিপন্নে বিজেপির প্রচারের মোকাবিলাও ‘আপ’ করতে পারেনি। বরং ‘বিস্তর অপ্রয়োজনীয়’ খরচ করে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসস্থান তৈরির সরকারি রিপোর্ট দরিদ্রের মেসিহা কেজরিওয়ালকে বাক্‌রুদ্ধ করে দিয়েছে। কোনো বাসস্থান সারাতে ও সাজাতে ৩৩ কোটি টাকা খরচ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। বিশেষ করে যিনি ঘোষণা করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর থাকার জন্য একটা দুই কামরার ফ্ল্যাটই যথেষ্ট।

কেজরিওয়ালের দলের মতো এতটা ঝুঁকিতে অবশ্যই বিজেপি নেই। বরং আশান্বিত হওয়ার মতো পরিসংখ্যান তাদের আছে। ২০১৫ থেকে ২০২৪—এই ৯ বছরে দিল্লিতে তাদের সমর্থনে বিশেষ হেরফের ঘটেনি। ২০১৫ সালে তারা পেয়েছিল প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছিল সাড়ে ৩৮ শতাংশ। যদিও আসনসংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে হয়েছিল মাত্র ৮। ২০২২ সালে দিল্লি পৌরসভার ভোটে তা আরও বেড়ে হয় ৩৯ শতাংশ, আপের ভোট সাড়ে ৫৩ শতাংশ থেকে কমে হয় ৪২। গত বছর জুন মাসে লোকসভা ভোটে বিজেপি নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায় প্রায় সাড়ে ৫৪ শতাংশ ভোট টেনে। সেই ভোটে আপ ও কংগ্রেস জোট বেঁধেও কোনো আসন জেতেনি। আপের ভোটের হার কমে হয়েছিল ২৪ শতাংশ, কংগ্রেসের বেড়ে হয়েছিল ১৯।

এবার কংগ্রেস ও আপ জোট ভেঙে আলাদা লড়ছে। অতীতের ট্রেন্ড অনুযায়ী বিজেপি তার মূল সমর্থন ধরে রাখতে পারলে পাটিগণিতের হিসাব আপের বিপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, দুই দলেরই সমর্থনের বৃত্ত এক—দলিত, অনগ্রসর ও মুসলমান।

এত অসুবিধা সত্ত্বেও আপের যা সুবিধা বা প্লাস পয়েন্ট, বিজেপির সেটাই দুর্বলতা বা ঘাটতি। অর্থবল, লোকবল, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক শক্তি সত্ত্বেও বিজেপির কাছে এমন কোনো মুখ নেই, যাঁকে সামনে রেখে আপের মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার কেজরিওয়ালের মোকাবিলা করা যায়। কংগ্রেস শুরু থেকেই এ খেলায় এলেবেলে। তাদের ঘিরে আগ্রহ একটাই, শেষ পর্যন্ত বিজেপি না আপ—কার বাড়া ভাতে তারা ছাই ফেলবে।

আগ্রহ আরও এক জায়গায়। কেজরিওয়াল হেসেখেলে চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হলে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কংগ্রেসের অবস্থান আরও ঢিলে হবে। কেজরিওয়াল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অখিলেশ যাদবের অক্ষ জোরদার হবে। মহারাষ্ট্রে বিপর্যয়ের পর কংগ্রেস নিয়ে উদ্ধব ঠাকরেও আর গদগদ নন। ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব থেকে কংগ্রেসকে সরানোর যে স্বর হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র ভোটের পর মিনমিন করে উঠেছিল, কেজরিওয়ালের সাফল্য তা জোরালো করে তুলবে। দিল্লিতে হারলেও জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির পক্ষে তা হবে আশাব্যঞ্জক।

আম আদমি পার্টি আরও একবার দিল্লি দখল করলে সেই জয় ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠবে নরেন্দ্র মোদির ‘পরাজয়’। শুধু পরাজয়ই নয়, সেটা হবে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর হারের হ্যাটট্রিক। নরেন্দ্র মোদি সেই অসম্মান কোথায় লুকাবেন?

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নিয়মিত সভা করে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির জোগান ও ব্যাংকের মূলধন কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে রূপরেখা তৈরি করে বাস্তবায়ন করতে হবে। মূলধন জোগান দেওয়া ছাড়া শুধু সংকটে পড়া ব্যাংক নয়, ভালো ব্যাংকগুলোকেও ভুগতে হতে পারে।

‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুনরুদ্ধার: মূলধন এখন কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন অভিমত উঠে আসে। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ব্যাংকার, পুঁজিবাজারের অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ।

বক্তারা বলেন, ব্যাংকে পর্যাপ্ত মূলধন হলো আর্থিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি, যা আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়, তারল্য বজায় রাখে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা টিকিয়ে রাখে।

এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের জাতীয় বিনিয়োগ কৌশল নেই। ফলে বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান হচ্ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোও বিভিন্ন বাধা তৈরি করে রেখেছে। এসব দূর করা জরুরি। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বন্ধ করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলতে হবে। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী নতুন পথের সন্ধান করতে হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য মূলধন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বল পরিচালন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসছে। আগে যে ভুল হয়েছে, তা শোধরাতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসান ও. রশিদ বলেন, ব্যাংকের শেয়ারধারণে ২ শতাংশ কোনো ইস্যু নয়। সমস্যা হলো সুশাসন ছিল না। একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবার থেকে একজনের বেশি পরিচালক না দিলেই হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা দরকার। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে আর বন্ড নয়, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে এক টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।

আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে যে শীতল যুদ্ধ চলে, তার অবসান হওয়া দরকার। এনআই অ্যাক্টে মামলা হলে শুনানির তারিখ পেতে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ আদায়ে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাংকের মূলধনে বাড়াতে দেশের পাশাপাশি বিদেশি তহবিলের দিকেও নজর দিতে হবে। বিদেশ থেকে এখনো কম খরচে তহবিল পাওয়া সম্ভব। এ জন্য সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।

সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগে অনেক ভালো নিয়মকানুন ছিল। আমরা ধীরে ধীরে তা থেকে সরে এসেছি। সুদের হারে ৬/৯–এর মতো তত্ত্ব চালু করে আমরা সারা বিশ্বকে শিখিয়েছি। এর প্রতিদান এখন আমরা পাচ্ছি। এ জন্য আন্তর্জাতিক চর্চা মেনে চলতে হবে। যেসব ব্যাংকে মূলধন জোগান দিয়েও ঠিক করা যাবে না, সেগুলোতে টাকা ঢালা ঠিক হবে না। যেসব ব্যাংক ঠিক হওয়া সম্ভব সেগুলোর এবং ভালো ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়াতে হবে।’ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধার কারণ দেশে নতুন আর্থিক পণ্য চালু করা যায় না বলে জানান তিনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, মূলধন বাড়াতে সরকারের গ্যারান্টি–নির্ভর বন্ড চালু করতে হবে। তবে দেশের মানুষের বন্ডে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা ভালো না। ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া বন্ডের টাকা এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি। ব্যাংকগুলোর বন্ড এখন ক্লাব নির্ভর হয়ে গেছে। এক ব্যাংকের বন্ড অন্য ব্যাংক কিনছে। বন্ডে বিনিয়োগে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তাদের কিনতে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এ এফ নেছারউদ্দিন বলেন, ব্যাংক খাতে এই দুরবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক একীভূতকরণই যথেষ্ট নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হওয়াটা নিশ্চিত করতে সময়োপযোগী সংস্কার, স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ, স্বতন্ত্র মূল্যায়ন এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য মূলধন পুনর্গঠন কাঠামো দরকার।

সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন বলেন, ধীর আইনি প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীদের শক্তিশালী আস্থা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকরী বাণিজ্যিক আদালত দরকার। যারা অর্থ তছরুপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দেওয়া হচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও খেলাপির মামলা দিয়ে শেয়ার বাজেয়াপ্ত করলে কিছুটা ফলাফল পাওয়া যেত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ