বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনেকগুলো ডিভাইসকে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে পরিচালনার প্রযুক্তি, আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস) ইকোসিস্টেম। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রযুক্তি সচেতনদের কথা মাথায় রেখে জনপ্রিয় প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ানপ্লাস সম্প্রতি বাজারে তিনটি আইওটি ইকোসিস্টেম ডিভাইস লঞ্চ করেছে। প্রিমিয়াম ফিচার ও সাশ্রয়ী মূল্যের একটি দারুণ সমন্বয়ে ওয়ানপ্লাস প্যাড ২, ওয়ানপ্লাস বাডস প্রো ৩ ও ওয়ানপ্লাস ওয়াচ ২- এই তিনটি ডিভাইস বাংলাদেশের প্রযুক্তি বাজারে একটি গেম-চেঞ্জারে পরিণত হয়েছে।

সাশ্রয়ী মূল্য
আইওটি ইকোসিস্টেমের বাজারের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং বা অ্যাপলের ইকোসিস্টেম ডিভাইসগুলো বাড়তি দামের কারণে অনেক ব্যবহারকারীর সাধ্যের বাইরে থাকে। এর বিপরীতে ওয়ানপ্লাস সমতুলনীয় ফিচার সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেম অনেক কম খরচে বাজারে নিয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ানপ্লাস প্যাড ২, বাডস প্রো ৩, এবং ওয়াচ ২ এর সম্মিলিত দাম অ্যাপল বা স্যামসাংয়ের অনুরূপ ডিভাইসগুলোর তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। এটি যারা বাড়তি খরচ ছাড়াই একটি প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা পেতে চান তাদের জন্য একটি আদর্শ পছন্দ হতে পারে।

একীভূত সংযোগ 
ওয়ানপ্লাস ইকোসিস্টেমের মূল ভিত্তি হলো সকল ডিভাইসকে একসাথে কাজ করতে সহায়তা করে এমন একটি সমন্বিত নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের আওতায় ব্লুটুথ ইন্টিগ্রেশন, ওয়াই-ফাই ও ক্লাউড সিঙ্ক্রোনাইজেশনের মত প্রযুক্তি রয়েছে।

এই ইকোসিস্টেমের অধীনে ওয়ানপ্লাস বাডস প্রো ৩ ও ওয়াচ ২ ব্লুটুথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত ও স্থিতিশীল সংযোগ নিশ্চিত করে। ফাস্ট পেয়ার প্রযুক্তি ম্যানুয়াল সেটআপের ঝামেলা দূর করে তাৎক্ষণিক পেয়ারিংয়ের সুবিধা দেয়। ওয়ানপ্লাস প্যাড ২ ডেটা সিঙ্ক করতে ও ক্রস-ডিভাইস ফিচার অ্যাকটিভ করতে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে, ওয়ানপ্লাস ক্লাউড অ্যাকাউন্ট ডিভাইসগুলোর মধ্যে ডেটা সিঙ্ক্রোনাইজ করে ব্যবহারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত কিছু ইকোসিস্টেম ফিচার
এই ইকোসিস্টেমে অ্যাডাপটিভ নয়েজ ক্যানসেলেশন (এএনসি), কন্টেক্সট-অ্যাওয়ার ফাংশনালিটি ও ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশনের মত কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। ওয়ানপ্লাস বাডস প্রো ৩, প্যাড ২-এর সাথে সংযুক্ত থাকার সময় এএনসি-এর সাহায্যে বাইরের পরিবেশের আওয়াজ কমিয়ে ব্যবহারকারীর জন্য একটি নির্দিষ্ট সাউন্ড অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এছাড়াও, প্যাড ২-তে একটি ভিডিও দেখার সময় বিরতি দিলে এর কন্টেক্সট-অ্যাওয়ার ফাংশনালিটি নিশ্চিত করে আপনার বাডস বা ওয়াচ পরবর্তী ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকবে।

ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশ ডিভাইসগুলোর মধ্যে রিয়েল-টাইম যোগাযোগের মাধ্যমে শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে। যেমন, ওয়ানপ্লাস প্যাড ২-তে বাডস প্রো ৩ এবং ওয়াচ ২-এর ব্যাটারির লেভেল দেখা যায়। এই সমন্বয় এনার্জির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে ইকোসিস্টেমের ব্যাটারি লাইফ দীর্ঘায়িত করে।

সাশ্রয়ী মূল্য ও প্রিমিয়াম ফিচারের মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়ে ওয়ানপ্লাস এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে যা ব্যবহারকারীদের ইন্টারকানেক্টেড ডিভাইস ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকেই বদলে দিচ্ছে। ওয়ানপ্লাস-এর ফিচার, ইন্টিগ্রেশন ও সাশ্রয়ী মূল্য বাজারের সেরাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম। যারা একটি স্মার্ট, শক্তিশালী ও বাজেট- ফ্রেন্ডলি ইকোসিস্টেম খুঁজছেন তাদের জন্য ওয়ানপ্লাস সেরা পছন্দ।

ওয়ানপ্লাস সম্পর্কে
ওয়ানপ্লাস একটি গ্লোবাল মোবাইল প্রযুক্তি ব্র্যান্ড, যা প্রযুক্তির প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। ব্র্যান্ডটি চারদিকে ‘নেভার সেটেল’ মন্ত্র তৈরি করেছে, ওয়ানপ্লাস প্রিমিয়াম বিল্ড কোয়ালিটি এবং হাই-পারফরম্যান্স হার্ডওয়্যারসহ চমৎকার সব ডিজাইনের ডিভাইস তৈরি করে। ওয়ানপ্লাস সবসময় এর ব্যবহারকারী ও ফ্যানদের নিয়ে কমিউনিটি তৈরির মাধ্যমে তাদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলে একত্রে উন্নতি লাভ করে। সংবাদ ‍বিজ্ঞপ্তি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত ন শ চ ত কর ড ভ ইসগ ল ব যবহ র র জন য সমন ব

এছাড়াও পড়ুন:

দেশেই তৈরি হচ্ছে স্মার্ট এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজ

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের হিসাবে বিশ্বজুড়ে ২০২৪ সালে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) বাজারের মূল্য ছিল ৭১৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০৩২ সালে এই বাজারের আকার ৪ দশমিক শূন্য ৬ ট্রিলিয়ন (১০০ বিলিয়ন = ১ ট্রিলিয়ন) ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই বাজারকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের উদ্ভাবকেরা নানা ধরনের পণ্য উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশি উদ্ভাবক এ কে এম গনিউল জাদীদ স্মার্ট এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজ তৈরি করেছেন।

দেশের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যকর খাদ্যের সরবারহপ্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে এই স্মার্ট ফ্রিজ তৈরি করেছেন তিনি। শহরের মানুষের জন্য খাদ্য সরবারহ বিশেষ করে অফিসগামী মানুষের দুপুরের খাবার ও সকালের নাশতার সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষ ভেন্ডিং মেশিন তৈরি শুরুর পর স্মার্ট ফ্রিজের ধারণা আসে এ কে এম গনিউল জাদীদের মাথায়। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে সফটওয়্যার উন্নয়নে কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘শহরের মানুষের কাছে প্রাকৃতিক খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমি এই স্মার্ট ফ্রিজের জন্য ধারণা ও সফটওয়্যারটি তৈরি করেছি। বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার কর্মীদের কাছে প্রাকৃতিক খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে।’

স্মার্ট এন্টারপ্রাইজের এই উদ্যোগ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অংশীদারত্বের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংক-অর্থায়িত এজ প্রকল্পের অধীন পরিচালিত হচ্ছে। উদ্ভাবক গনিউল জাদীদ স্মার্ট এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজ নিয়ে বলেন, এই অত্যাধুনিক ফ্রিজ শুধু একটি রেফ্রিজারেটর নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তি-সমন্বিত খাদ্য সরবরাহের অবকাঠামো। এতে রয়েছে রিয়েল টাইম ইনভেন্টরি ট্র্যাকিং, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুবিধা। এ ছাড়া সমন্বিত লেনদেনের জন্য ডেটা অ্যানালিটিকসের মতো সুবিধা। এর মাধ্যমে অফিসগামী, যেকোনো পর্যটনকেন্দ্রে দর্শনার্থী এবং কর্মজীবী পেশাদারেরা সহজেই নিরাপদ, সাশ্রয়ে ও ডিজিটালভাবে পরিচালিত স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে পারেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ন্যাকস, পানীয়, রেডি মিল ও হিমায়িত পণ্য পাবেন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। দেশীয় ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের সহায়তায় ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত বেয়ার সামিট ও ন্যাশনাল সেমিকন্ডাক্টর সিম্পোজিয়ামে এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজটি দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রথম এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজ হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহ দেখা যায়। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মাহদী মুকুট বলেন, ‘দেশীয় উদ্ভাবকেরা অনেক কাজ করছেন। আমাদের স্থানীয় সমস্যা আমাদের উদ্ভাবকেরা সমাধানের চেষ্টা করছেন। এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজটি নতুন উদ্ভাবন মনে হচ্ছে। আমি নিজে সামিটে ফ্রিজটি ব্যবহার করেছি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একটা যন্ত্র দিয়ে ফ্রিজ থেকে খাবার সংগ্রহ করা যাচ্ছে। আইওটি পণ্য হিসেবে নতুন চমক মনে হয়েছে আমার কাছে।’

মুঠোফোন দিয়ে স্ক্যান করে স্মার্ট এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজ থেকে নানা ধরনের খাবার সংগ্রহ করা যাচ্ছে। গনিউল জাদীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজ প্রকল্পের অন্য সদস্য হিসেবে আছেন ইলা শারমিন, মুক্তাদির শরীফ ও মোশাররফ হোসেন টিপু। সামিটে প্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের কাজটি উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রযুক্তির প্রতি এরই মধ্যে দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমরা দ্রুত এই আইওটি পণ্য বাজারে আনার আশা রাখছি।’

গনিউল জাদীদ রংপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে প্রথম ব্যাচে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রযুক্তিবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশেই তৈরি হচ্ছে স্মার্ট এন্টারপ্রাইজ ফ্রিজ