গল্প, কবিতা, উপন্যাস থেকে শুরু করে ইতিহাস কিংবা পুরাণ পাঠ অথবা শ্রবণের মধ্য দিয়ে কল্পলোক ভ্রমণের সুযোগ পাই আমরা। ভ্রমণের সেই মুহূর্তগুলো চলচ্চিত্রের মতো মনের পর্দায় ভেসে বেড়ায়; যার প্রতিটি দৃশ্য মগজের কোষে তৈরি হয়, চেনা অবয়ব আর পরিচিত জগতের ছায়া অবলম্বনে।

একইভাবে যখন কোনো পরিব্রাজক তাঁর কোনো সফরনামার বয়ান কিংবা ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন, তখনও আমাদের মনোজগতে চলে নানা দৃশ্যপটের নির্মাণ। সেসব দৃশ্যে আমরা মিশে থাকি পরিব্রাজকের ছায়াসঙ্গী হয়ে। এভাবেই বিভিন্ন পর্যটকের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পৌঁছে গেছে কালজয়ী কাহিনির স্তরে। তাই অনুমান করা কঠিন নয় ‘ভ্রমণ কাহিনি’ ও ‘ভ্রমণ সাহিত্য’ শব্দ সৃষ্টির কারণ ও উদ্দেশ্য। সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই লেখক জালাল আহমেদ তাঁর ভ্রমণ কাহিনি দুই মলাটে বন্দি করেছেন; নামকরণ করেছেন ‘ভ্রমণের দশ দিগন্ত’। এটি মূলত লেখকের নির্বাচিত ১০টি সফরের অভিজ্ঞতা। গল্পের বুননে পরিযায়নের দৃশ্যায়ন তুলে ধরার চেষ্টা থেকেই যে এই সংকলনের প্রকাশনা– বইটি পড়া শুরু করলেই পাঠকের কাছে তা স্পষ্ট হবে।

কথাসাহিত্যিক হিসেবে জালাল আহমেদের বড় কোনো পরিচিতি নেই। তবে পরিচিতি গড়ে নেওয়ার ইচ্ছা যে প্রবল, তার আভাস পাওয়া যায় তাঁর লেখনী থেকে। ‘ভ্রমণের দশ দিগন্ত’ লেখকের প্রথম বই। তারপরও ভুলত্রুটি সেভাবে চোখে পড়ে না; বিশেষ করে ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা ঘটনাগুলোর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রাখেননি তিনি। বরং ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ভ্রমণের স্থানটিকে গুরুত্ববহ এবং সফরনামা রোমাঞ্চকর করে তোলার চেষ্টা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বইয়ের সর্বশেষ সফর পর্ব ‘মায়াবিনী মিয়ানমার’-এর কিছু অংশ তুলে ধরছি। লেখার সূচনা ঠিক এভাবে: ‘জানুয়ারি ২০০১ সালের প্রথম সপ্তাহে মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াংগুন-এ (বিমসটেক : বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার-শ্রীলঙ্কা-থাইল্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) জ্বালানি সহযোগিতা সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র আসে। সচিব পর্যায়ের এই সম্মেলনে সচিব ড.

তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী যাবেন বলে আমি জানতাম।

অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফিরে আসার পর জানতে পারলাম যে সচিব যাবেন না, যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান যাবেন।’ এভাবেই লেখার প্রথম অংশ তুলে ধরা হয়েছে সরকারি সফরের আয়োজন, প্রস্তুতি ও কর্মসম্পাদনের বিবরণ। এরপর ঐতিহাসিক নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে লেখায় ভ্রমণের স্বাদ এনে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তৃতীয় প্যারায় ভ্রমণ কাহিনিতে বাঁকবদল এনেছেন ঠিক এভাবে: “সীমান্তবর্তী আরকান-চট্টগ্রাম যোগাযোগ ঐতিহাসিক কাল থেকে। আরাকান বর্তমান রাখাইন স্টেটের অধিবাসীগণ তাদের ইতিহাসের অন্তত চার হাজার পাঁচশ বছরের ঐতিহ্যের কথা বলে থাকেন। প্রাচীনকাল থেকে ১৭৮৪ সালে মিয়ানমার কর্তৃক বিজিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দু’শো সাতাশ জন নিজস্ব রাজার কথা তারা বলে থাকেন।” এই পরিচ্ছেদে তুলে এনেছেন দ্বাদশ শতাব্দীতে বাংলার সীমানায় আরকান বা মগদের হামলার গল্প, আরকান রাজসভায় মুসলিম অমাত্যদের কদর ও সেখানে কালজয়ী বাংলা সাহিত্যের অনুবাদের ইতিহাস, ম্রাউক ইউ রাজত্বের সমাপ্তি ঘটলে কীভাবে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স সফলভাবে শরণার্থীদের পুনবার্সন করেন এবং কৃতকর্মের জন্য স্থানটির নাম তাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে কক্সবাজার রাখা হয়। এমন আরও ঐতিসাহিক ঘটনা তুলে আনা হয়েছে বইয়ের প্রতিটি লেখায়। সহজ গদ্যে লেখা তাই বইটি সুখপাঠ্য। 

উচ্চপদস্থ কর্মকতা হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একাধিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে জালাল আহমেদের। দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে যেমন কাজ করেছেন, তেমনি বিভিন্ন দেশে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। সেই সুবাদে ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ৫০টি দেশে। এর মধ্যে ১০টি সফর নিয়ে এই ভ্রমণ কাহিনি, যা বইয়ের প্রাককথনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সফর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে হলেও লেখক এর পাশাপাশি পরিব্রাজকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেও সংকোচ করেননি। বরং মাঠ পর্যায়ের কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই সহজেই মিশে যেতে পেরেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরে। খুঁড়ে বের করে নিয়ে আসতে পেরেছেন প্রতিটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির আদ্যোপান্ত; মাড়িয়ে আসতে পেরেছেন মনোমুগ্ধকর স্থানগুলোর সবুজ ঘাসের গালিচা, ধূলি ওড়া মরু প্রান্তর, নদী ও সমুদ্র। বাদ যায়নি তীর্থস্থানও। তাই লেখকের ১০টি সফর মানেই ১০ দেশ ঘুরে বেড়ানো, বিষয়টি এমন নয়। নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, সুইডেন, মিসর, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়া, ইউরোপ, ওশেনিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সুবাদে যা কিছু লেখকের স্মৃতির মণিকোঠায় জমা হয়ে আছে, সেগুলো হয়ে উঠেছে ‘ভ্রমণের দশ দিগন্ত’ বইয়ের প্রধান উপকরণ; যা পাঠককে কিছু সময়ের জন্য হলেও নিয়ে যাবে কল্পলোকে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল ক ল র আয়ন য় ভ রমণ ক হ ন ভ রমণ র স কর ছ ন পর য য় বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ