গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের খোঁজখবর নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছেন, ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো.

আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গাজীপুর থেকে মারধরে আহত হয়ে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে মোট ১১ জন এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকি সাতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মো. আসাদুজ্জামান আরও জানান, আহত সাতজনের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তাঁর নাম কাশেম (১৭)। বাকি ছয়জনকে দু-এক দিনের মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

ঢাকা মেডিকেলে বাকি যে ছয়জন চিকিৎসা নিচ্ছেন তাঁরা হলেন, ইয়াকুব (২৪), শুভ শাহরিয়ার (১৬), হাসান (২২), গৌরভ ঘোষ (২২), আবদুর রহমান ইমন (২০), সাব্বির খান হিমেল (২২) ও কাজী ওমর হামজা (২১)।

হাসপাতালে হামলায় আহত ইয়াকুবের ভাই মো. নাছির বলেন, ফাঁদে ফেলে তাঁর ভাইসহ অন্যদের গাজীপুরে আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসার একটি কক্ষে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে আটকে রেখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। তাঁদের এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। তাঁর ভাইয়ের মাথায় আঘাত রয়েছে। তাঁর ভাইসহ কয়েকজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গতকাল রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাঁদের কয়েকজনকে আটক করে মারধর করেন। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাত ৯টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রমের দক্ষিণখানে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালান। তাঁরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করেন। এ সময় মসজিদের মাইকে মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। মাইকিং শুনে আশপাশের লোকজন বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। তাঁরা ভাঙচুরকারী কয়েকজনকে মারধর করেন।

এ হামলার প্রতিবাদে গতকাল দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের নেতা মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘গতকাল রাতে আমাদের কাছে খবর আসে, ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। এটি শোনার পর প্রতিহত করতে আমাদের শিক্ষার্থীরা রওনা হন। দ্রুত ১৫-১৬ জন ঘটনাস্থলে চলে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, লুটপাট হচ্ছে। এতে বাধা দিলে পেছন থেকে হুট করে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যান। তাঁদের হাতে রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। অন্য শিক্ষার্থীরা আসার আগেই ওই ১৫ জনকে ছাদে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে অন্যান্য শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদেরও পেটানো হয়।

গাজীপুরে মোজাম্মেলের বাড়িতে আহত ৫ জন ঢাকা মেডিকেলে, মাথায়-হাতে গুরুতর আঘাতগাজীপুরে মোজাম্মেলের বাড়িতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে হাসনাত ও সারজিসগাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক ডেকে মারধরে আহত ১৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ম ম ল হক র ব গতক ল র ত মন ত র ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অনুসারীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

সেখানে বিক্ষোভকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিবাদ মিছিলও করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার মধুপুর-লক্ষীপুর এলাকাতেও সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের দাবি, সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বদলে এখানে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সোহরাব উদ্দিনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।

এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুনেছি আমার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি।’ এর বেশি কথা বলেননি তিনি।

জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে এ নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন, তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হাসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’

কুষ্টিয়ার অন্য তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ