সংবিধান সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ‘সমঝোতা সংলাপ’ করেছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। আজ শনিবার দুপুরে রংপুরের একটি হোটেলে রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর রংপুর মহানগর ও জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সমঝোতা সংলাপের মুখ্য আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, দেশ একটি সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিবাদের শাসন ও মাফিয়া হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। ছাত্র–জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই উৎখাত সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও হতাশা তৈরি হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংস্কার উল্লেখ করে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐক্য ও একতা ছিল, কিন্তু বিভক্তির কারণে সংস্কারের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সমস্যা যাতে কোনোভাবে সংকটে পরিণত না হয়, সে জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাঁরা সমঝোতা সংলাপ করছেন। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগ ও প্রাণদান যাতে ব্যর্থ না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন হাসনাত কাইয়ূম। তিনি বলেন, কীভাবে সমঝোতা হতে পারে, কীভাবে সংস্কার হতে পারে তা নিয়ে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও ঐকমত্য তৈরি করার জন্যই তাঁরা বিভাগীয় সমঝোতার সংলাপ করছেন।

হাসনাত কাইয়ূম উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদ যাতে বাংলাদেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য সংস্কারকে বাস্তব রূপ দিতে হবে। সংবিধানের টেকসই সংস্কারের জন্য কোন পদ্ধতিতে সংস্কার করা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সংলাপ অব্যাহত থাকবে।

রংপুরের এই সমঝোতা সংলাপে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান, এবি পার্টির মহানগরের সদস্যসচিব মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক রাতুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর কমিটির সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হানিফ খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি চিনু কবির, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ন্যায়পাল রায়হান কবীর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য র র জন সরক র সমঝ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবির ‘ক্ষণিকা’ বাসে হামলা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর নিন্দা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষণিকা’ বাসে মঙ্গলবার দুপুরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরা আজমপুর এলাকায় টঙ্গী-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী ‘ক্ষণিকা’ বাসে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। হামলায় বাসচালকসহ পাঁচ–ছয়জন আহত হন। আহত ব্যক্তিরা বর্তমানে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ভিসি চত্বর ঘুরে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে তাঁরা সমাবেশ করেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মাহমুদ হামলাকারীদের দুর্বৃত্ত উল্লেখ করে বলেন, কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সারা দেশে বায়বীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকের ঘটনায় শিক্ষার্থী সেজে কারা হামলা করেছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আঘাত করার চেষ্টা করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ক্ষণিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। অভ্যুত্থানের ৮ মাস পার হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আমরা দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সড়কে একদল স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হলে তারা হঠাৎ গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটিও ভাঙচুর করা হয়। এতে সাতজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। হামলার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে তারা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘একটি কুচক্রী মহল জুলাই গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী রেজিমেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপণের এমন চেষ্টা আমরা দেখেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নতুন বাংলাদেশে এমন যেকোনো কূটচাল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।’

হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শুধু শিক্ষার পরিবেশকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিরও ইঙ্গিত করে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বহীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এসব ঘটনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানায় দলটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবির ‘ক্ষণিকা’ বাসে হামলা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর নিন্দা