সংবিধান সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ‘সমঝোতা সংলাপ’
Published: 8th, February 2025 GMT
সংবিধান সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ‘সমঝোতা সংলাপ’ করেছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। আজ শনিবার দুপুরে রংপুরের একটি হোটেলে রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর রংপুর মহানগর ও জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা সংলাপের মুখ্য আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, দেশ একটি সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিবাদের শাসন ও মাফিয়া হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। ছাত্র–জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই উৎখাত সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও হতাশা তৈরি হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংস্কার উল্লেখ করে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐক্য ও একতা ছিল, কিন্তু বিভক্তির কারণে সংস্কারের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সমস্যা যাতে কোনোভাবে সংকটে পরিণত না হয়, সে জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাঁরা সমঝোতা সংলাপ করছেন। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগ ও প্রাণদান যাতে ব্যর্থ না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন হাসনাত কাইয়ূম। তিনি বলেন, কীভাবে সমঝোতা হতে পারে, কীভাবে সংস্কার হতে পারে তা নিয়ে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও ঐকমত্য তৈরি করার জন্যই তাঁরা বিভাগীয় সমঝোতার সংলাপ করছেন।
হাসনাত কাইয়ূম উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদ যাতে বাংলাদেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য সংস্কারকে বাস্তব রূপ দিতে হবে। সংবিধানের টেকসই সংস্কারের জন্য কোন পদ্ধতিতে সংস্কার করা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সংলাপ অব্যাহত থাকবে।
রংপুরের এই সমঝোতা সংলাপে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান, এবি পার্টির মহানগরের সদস্যসচিব মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক রাতুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর কমিটির সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হানিফ খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি চিনু কবির, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ন্যায়পাল রায়হান কবীর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য র র জন সরক র সমঝ ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।
রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।
এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।
বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।
প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতাবামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।
এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।
এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।
দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।
শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।
বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।
বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’