বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ নেতার প্রার্থিতা বাতিলের দাবির পর নির্বাচন কমিশন স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২৬ সালের এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে সভাপতি পদে দুজন প্রার্থীর মধ্যে একজন হচ্ছেন কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এ এস এম আজাদুর রহমান। গতকাল বুধবার বিকেলের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানান। এই দাবিতে আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের সামনে তাঁরা অবস্থান নেন। পরে নির্বাচন কমিশন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ সমিতির উপস্থিত সদস্যরা তাৎক্ষণিক বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল রাত আটটার পর নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঘোষণায় বলা হয়েছে, জেলা আইনজীবী সমিতির আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালের নির্বাচন অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। পরে সমিতির সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের বিষয়ে সবাইকে অবগত করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি কাজী মনজুর আহমেদ বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের আজাদুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা আছে। এই দাবিতে আমরা বারের সামনে অবস্থান করি। রাতে নির্বাচন স্থগিতের কথা জানানো হয়েছে।’

জেলা আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আজাদুর রহমানের প্রার্থিতার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আপত্তি দিয়েছে। তাদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন, সিনিয়র-জুনিয়র আইনজীবীসহ কমিটির সদস্যরা রাতে বৈঠক করেন। বৈঠকে নির্বাচন সাময়িক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই–তিন দিনের মধ্যে আলোচনা করে নির্বাচনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজ দ র রহম ন আইনজ ব আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন

মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।

‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা

শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।

তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।

শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।

আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫

ঐতিহাসিক পটভূমি

মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।

গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা

মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।

আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’

সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট

আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সেরা
  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৫ জুন ২০২৫)
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আরও যাঁরা পেয়েছেন ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৫’
  • সৌদি আরবের ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ, আবেদনের শেষ তারিখ আজ 
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৪ জুন ২০২৫)
  • মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন