বিকেলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক, বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক ইউনূস
Published: 15th, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আজ শনিবার কাজ শুরু করবে। এর অংশ হিসেবে আজ বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। বেলা তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে বক্তব্য দেবেন।
এদিকে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ইতিমধ্যে বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছে। বৈঠকে তারা অংশ নেবে। বিএনপি সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে।
সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যেসব দলের বৈঠক হয়েছে, ওই সব দলই আজকের বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই বৈঠক ধারাবাহিকভাবে চলবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বৈঠকে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং অংশ নেবেন।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতবিনিময়ে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মতবিনিময়ে অংশ নিতে তাঁরা আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধিদল সভায় অংশ নেবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে।এদিকে গতকাল শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ থেকে আলোচনা শুরু হবে বলে জানান। তিনি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে রাজধানীর হাইকোর্ট গেটের সামনে শিক্ষাচত্বরে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম পর্যায়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে গত বুধবার ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ গঠন করে সরকার। এর নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বৈঠকে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং অংশ নেবেন।কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ; যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনেরও প্রধান। বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশন প্রধানেরা ঐকমত্য কমিশনের সদস্য।
এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, ইতিমধ্যে জমা দেওয়া ছয় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে।
কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ; যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনেরও প্রধান। বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশন প্রধানেরা ঐকমত্য কমিশনের সদস্য।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রথম ইউন স সদস য গতক ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’
‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’
উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’
আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।
আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।