দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে শীর্ষে অবস্থান করছে এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার মান এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় দেশিদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও মুগ্ধ করেছে।

প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে এখানে পড়াশোনা করা যায়। এজন্য এটা শিক্ষার জন্য সর্বাধিক উপযুক্ত একটি স্থান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে ৩২ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে ২৪ জন স্নাতক এবং ৮ জন স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এসেছেন নেপাল থেকে, যারা প্রধানত ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগে পড়ছেন। এছাড়া সোমালিয়া, সোয়াজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।

ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন (২০২৪) অনুসারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৯ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাতজন, বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭২ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতজন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জন,  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯ জন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৭ জন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ জন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩ জন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ১২ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ‍ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জে ১৯১ জন এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগে অধ্যায়নরত নেপালি শিক্ষার্থী সুমিত শর্মা বলেন, “আমি শুনেছি এখানকার পড়াশোনা মানসম্মত। আমাদের দেশে ভেটেরিনারি বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানকার ডিগ্রির মান ভালো। ভারতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও এখানে এসেছি। এছাড়া পড়াশোনা ও আনুষঙ্গিক খরচও কম।”

তবে বাংলা ভাষার কারণে শুরুর দিকে কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্লাসে প্রথম দিকে বাংলার জন্য কষ্ট হতো। কোনকিছু বুঝতে পারতাম না, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না। দুই বছর আগে আমাদের জন্য বাংলা ভাষার কোর্স ছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বাতিল করা হয়েছে। এটি থাকলে নতুনদের জন্য ভালো হতো।”

গণিত বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত সোমালিয়ার ফারহান আবদি আলি বলেন, “আমার ভাই এখান থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার কাছ থেকে শুনেই আমি এখানে এসেছি। এখানে পড়াশোনার খরচ কম এবং শিক্ষার মান ভালো। বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীরা খুবই বন্ধুসুলভ। বাংলা বলতে না পারলেও বিভাগের বা ডরমেটরির পরিবেশে আমি কোন সমস্যায় পড়িনি। এখানকার সংস্কৃতি আমার খুবই ভালো লেগেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, মানসম্মত শিক্ষা এবং তুলনামূলক কম খরচ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় আরো আধুনিকায়ন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, “বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরে। আমরা চেষ্টা করি, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে। কিছু সমস্যা থাকলেও তা সমাধানের জন্য কাজ করছি।”

তিনি বলেন, “কিছু বিদেশি শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়। তাদের জন্য বৃত্তি এবং টিউশন ফি ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তারা কোন সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোহা.

ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “আমাদের প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী এবং ইতিবাচক। অনেকসময় সেমিস্টার সিস্টেমে একটু বেশি সময় লাগে সেজন্য তাদের একটু সমস্যাই পড়তে হয়। আমাদের এই বিষয়টা একটু আন্তরিকভাবে দেখার দরকার যেন সময়টা নির্ধারিত থাকে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে আমার মনে হয় আরো বিদেশি শিক্ষার্থী আকৃষ্ট হবে এবং এখানে পড়তে আসবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক বন্ধুত্বসুলভ। তারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য আম দ র পর ব শ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

অশ্বিন ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ

ক্রিকেট নিয়ে সুগভীর ভাবনা ও জ্ঞানের জন্য তাঁকে কেউ কেউ ডাকেন ‘বিজ্ঞানী’ (সায়েন্টিস্ট)। এবার ক্রিকেটের সেই ‘বিজ্ঞানী’র বিরুদ্ধেই উঠেছে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ। অভিযুক্তের নাম রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে (টিএনপিএল) গত শনিবার মাদুরাই প্যান্থার্সের বিপক্ষে ৯ উইকেটে জেতে দিন্দিগুল ড্রাগনস। দিন্দিগুলের হয়ে ৪ ওভারে ২৭ রানে কোনো উইকেট পাননি ভারত জাতীয় দলের সাবেক এ স্পিনার। এ ম্যাচে অশ্বিন এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের আয়োজক কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ করেছে মাদুরাই প্যান্থার্স। ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানিয়েছে, আয়োজকেরা অভিযোগের পক্ষে তথ্য–প্রমাণ দিতে বলেছেন মাদুরাই প্যান্থার্সকে।

আরও পড়ুনমিরাজ কি কাল খেলতে পারবেন১ ঘণ্টা আগে

টিএনপিএলের কাছে করা অভিযোগনামায় মাদুরাই দাবি করেছে, এই টুর্নামেন্টের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দিন্দিগুল ম্যাচে রাসায়নিক তরলে ভেজানো তোয়ালে ব্যবহার করে বল মুছেছিল, যে কারণে বল অপেক্ষাকৃত ভারী হয়েছে এবং ব্যাটের আঘাতে ধাতব শব্দ হয়েছে।

টিএনপিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসন্ন কানন এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘তারা (মাদুরাই) অভিযোগ দায়ের করেছে, যেটা আমরা জানি। যদিও নিয়মটা হলো ম্যাচের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ করতে হবে, তবু অভিযোগটি আমলে নিয়ে তাদের তথ্য–প্রমাণ দিতে বলেছি।’

প্রসন্ন যোগ করেন, ‘অভিযোগের সত্যতা মিললে আমরা স্বাধীন একটি কমিটি তৈরি করব। পর্যাপ্ত তথ্য–প্রমাণ ছাড়া একজন খেলোয়াড় ও ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করাটা ভুল হয়। কোনো প্রমাণ দাখিল করতে না পারলে মাদুরাইকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’

আরও পড়ুনভারতের ক্রিকেটে নতুন বিস্ময়, সূর্যবংশীর বন্ধু ২২ ছক্কা ও ৪১ চারে করলেন ৩২৭৩ ঘণ্টা আগে

টিএনপিএলকে পাঠানো চিঠিতে মাদুরাই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এস মহেশ বলেছেন, ‘দিন্দিগুল ড্রাগনসের বিপক্ষে আমাদের সাম্প্রতিক ম্যাচে বল টেম্পারিংয়ের মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। কয়েকবার সতর্ক করার পরও দিন্দিগুল দল বল টেম্পারিং করেছে। তারা তোয়ালে ব্যবহার করেছে, যেটিতে রাসায়নিক মাখানো ছিল।’

বর্ষা মৌসুমে টিএনপিএল চলায় বৃষ্টিতে ম্যাচে বিঘ্ন ঘটছে। গত শনিবার মাদুরাই-প্যান্থার্স ম্যাচও বৃষ্টির কারণে শুরু হতে দেরি হয়। মাদুরাই আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৫০ তোলে। তাড়া করতে নেমে ১২.৩ ওভারে জেতে দিন্দিগুল। ওপেন করতে নেমে ২৯ বলে ৪৯ করেন অশ্বিন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ভেজা মাঠের কন্ডিশনের জন্য প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলকে তোয়ালে সরবরাহ করে তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। খেলোয়াড়েরা আম্পায়ারের সামনে তোয়ালে দিয়ে বল মুছে শুকনা করতে পারবেন। প্রসন্ন এ নিয়ে বলেছেন, ‘শুধু টিএনপিএলের সরবরাহ করা তোয়ালে দিয়েই তাঁরা বল মুছে শুকনা করতে পারবেন। প্রতি ছক্কার পর কিংবা আউটের পর আম্পায়াররা নিয়মিত বল পরীক্ষা করেন এবং তাঁরা ওই ম্যাচে কোনো সমস্যা খুঁজে পাননি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ