থেমে গেল প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ
Published: 16th, February 2025 GMT
যন্ত্র নেই, যন্ত্রী নেই। আলোর পরোয়া নেই। আছে দার্শনিক ঈক্ষণ। আছে রাজনীতি, শ্রেণি-সচেতনতা আর সুরের বহুমাত্রিক চলন। এসব সামান্য উপকরণে খালি গলায় তৈরি করতেন অসামান্য ইন্দ্রজাল। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সেই কণ্ঠ থেমে গেছে। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে গতকাল শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
রবীন্দ্র সদনে গতকাল শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন নাট্যকার ও মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, ‘প্রতুলদার স্বাতন্ত্র্য ছিল, কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়া দিব্যি গান গাইতেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেতেন, পাখি তো গান গায়, তার কি কোনো বাদ্যযন্ত্র লাগে? কোনো মিউজিশিয়ান লাগে?’
প্রতুলের জন্ম ১৯৪২ সালে বাংলাদেশের বরিশালে। বাবা প্রভাতচন্দ্র ছিলেন স্কুলশিক্ষক, মা বীণাপাণি মুখোপাধ্যায় গৃহবধূ। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়।
অল্প বয়স থেকে কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু। নিজেও গান লিখতেন। অথচ প্রথাগত সংগীত শিক্ষা তিনি নেননি। আবেগকে সুর ও কথা দিয়ে বাঁধতে শিখেছিলেন।
প্রতুলকে গণসংগীত শিল্পী বলা হয়। গণসংগীতে সাধারণত যৌথকণ্ঠ থাকে, তাঁর গানে সেটা নেই। বাদ্যযন্ত্র তো নেই-ই। তবে আছে শরীর যন্ত্র। গাল, বুক বা আঙুলে তুড়ি বাজাতেন, কখনও হাততালি দিতেন। এভাবে নিজের প্রত্যঙ্গকে যন্ত্র বানিয়ে নিজে হতেন যন্ত্রী। এ কারণে তাঁকে বলা হতো ‘গানমানুষ’।
‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮) তাঁর প্রথম অ্যালবাম। তবে এটা অন্য শিল্পীদের সঙ্গে মিলে করতে হয়েছিল। প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম বের হয় ১৯৯৪ সালে ‘যেতে হবে’। এর পর ‘ওঠো হে’ (১৯৯৪), ‘কুট্টুস কাট্টুস’ (১৯৯৭), ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ (২০০০), ‘তোমাকে দেখেছিলাম’ (২০০০), ‘স্বপনপুরে’ (২০০২), ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’ (২০০৪), ‘হযবরল’ (২০০৪), ‘দুই কানুর উপাখ্যান’ (২০০৫) ও ‘আঁধার নামে’ (২০০৭)। আর ২০১১ সালে মুক্তি পায় তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘আমি বাংলায় গান গাই’। তাঁর শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)।
পেশার তাগিদে কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। আবার ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবিতে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। একাকিত্ব বরাবর পছন্দ ছিল। তাঁর প্রয়াণের খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংগীত জগতে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় লোপামুদ্রা মিত্র লিখেছেন, ‘যাদের জন্য আমি বাংলায় গান গাই, তাদের মধ্যে প্রতুলদা একজন। গান ওঁর নেশা ছিল। নিজের মতো গান গেয়ে যেতেন। প্রচারবিমুখ ছিলেন। আমার কাছে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন।’
খালি গলার এমন অনন্য সুরেলা ছন্দ প্রসঙ্গে কবির সুমন বলেন, ‘তিনি ছিলেন একজন আনপ্যারালাল পারফরমার। এমন কিছু কবিতায় তিনি সুর দিয়েছেন (যেমন বাবরের প্রার্থনা), যেগুলো প্রতুলদা ছাড়া অন্য কেউ ভাবতে পারবেন না। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের কোনো রিমেক নেই, করা যাবে না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “যতদিন বাংলা গান থাকবে, ততদিন ‘আমি বাংলায় গান গাই’ বাঙালির মুখে মুখে ফিরবে।”
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ১.৯৪ শতাংশ
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (২৭ থেকে ৩১ জুলাই) পর্যন্ত সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে। আলোচ্য এ সময়ে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ১.৯৪ শতাংশ।
শনিবার (২ আগস্ট) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১০.৩১ পয়েন্টে। আর সপ্তাহ শেষে তা অবস্থান করছে ১০.৫১ পয়েন্টে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ০.২০ পয়েন্ট বা ১.৯৪ শতাংশ।
এর আগের সপ্তাহের (২৪ থেকে ২৮ জুলাই) শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ৯.৭১ পয়েন্টে। আর সপ্তাহ শেষে তা অবস্থান করছে ১০.৩১ পয়েন্টে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ০.৬০ পয়েন্ট বা ৬.১৮ শতাংশ।
খাতভিত্তিক পিই রেশিওগুলোর মধ্যে- জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৬.১০ পয়েন্টে, ব্যাংক খাতে ৭.১৯ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতে ৯.৮৯ পয়েন্ট, টেক্সটাইল খাতে ১০.৭০ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১১.০৮ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতে ১১.৩৫ পয়েন্টে, আর্থিক খাতে ১২.৬০ পয়েন্টে, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৭৭ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতে ১৪.১০ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৪.৯৪ পয়েন্টে, আইটি খাতে ১৬.৩১ পয়েন্টে, বিবিধ খাতে ১৬.৬৫ পয়েন্টে, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ১৭.৯৬ পয়েন্ট, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১৮.৪৩ পয়েন্টে, পেপার ও প্রিন্টিং খাতে ২১.৮১ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে ২১.৯৩ পয়েন্টে, পাট খাতে ২৬.১৯ পয়েন্টে, ট্যানারি খাতে ২৬.৭৭ পয়েন্টে, এবং সিরামিক খাতে ৫৭.৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ঢাকা/এনটি/ইভা