কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত
Published: 19th, February 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সংঘর্ষের ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন কুয়েটের সহ-উপাচার্য (প্রোভিসি) প্রফেসর ড.
আরো পড়ুন: কুয়েটের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা
তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম এ হাসেমকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহ। অন্য দুইজন সদস্য হলেন- শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আবু ইউসুফ ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবু জাকির মোর্শেদ।
কুয়েট সূত্র জানায়, জরুরি সিন্ডিকেট সভায় গত বছরের ১১ আগস্ট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী সব শিক্ষক ও কর্মচারীকে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধকরণ, আইন অমান্যকারীদের চাকরিচ্যুতসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সংঘর্ষে আহত সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মাছুদ।
এর আগে, আজ দুপুর দেড়টার দিকে উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে কুয়েটের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কুয়েট উপাচার্য এখনো অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সকাল থেকেই অনেক শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করতে শুরু করেছেন। ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে যারা ভাড়া রয়েছেন তাদের ভেতর ভয় এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা রয়েছেন উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে বিরোধের জেরে গতকাল মঙ্গলবার কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাতে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য এক ড ম ক র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’