গাজীপুরের শ্রীপুরে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কলাগাছে দিয়ে তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর সেটি লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে গাজীপুর মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী। পরে এ নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানেই নেটিজেনরা তীব্র সমালোচনার করেন। এ নিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তিস্বরূপ শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। কার্যক্রমে চলবে, যতদিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হবে ততদিন।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গাজীপুর মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ডেকে আনে। 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, ‘‘কিছু না বুঝেই ওই দুই শিক্ষার্থী লাথি মেরে শহীদ মিনার ভেঙে নিজেদের ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে বলে জানিয়েছে। এ কারণে তারা অনুতপ্ত, ক্ষমাও চেয়েছে। তাই তাদের শাস্তি হিসেবে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের সমস্ত শ্রেণিকক্ষ, বেঞ্চ পরিষ্কার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের এ পরিষ্কার কার্যক্রমে যতদিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হবে, ততদিন চালিয়ে যেতে হবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ওই দুই শিক্ষার্থীর বয়স কম হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই স্কুলের পক্ষ থেকে তাদের ওপর এই মানবিক শাস্তি আরোপ করা হয়।’’

প্রসঙ্গত, গাজীপুর মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই প্রতি বছর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

এ বছরও কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় উপজেলার মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওই প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষার্থী অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে লাথি মেরে শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে।

এই দৃশ্য ভিডিও করে নিজেরাই গত রবিবার ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও অনেকে নিজেদের ওয়ালে পোস্ট করে নিন্দা জানায়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় নেটিজেনদের তীব্র সমালোচনা।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরা দুই শিক্ষার্থী মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এক পর্যায়ে তারা দুজন মিলে একসঙ্গে দৌড়ে এসে অস্থায়ীভাবে কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে লাথি দেয়।

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা শফিকুল ইসলাম জনী বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছি। বাঙালির আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। আমরা ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছি। তিন কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’’

ঢাকা/রফিক/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ষ ক র কল গ ছ

এছাড়াও পড়ুন:

নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার 

আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়াকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অশ্লীল ও শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করায় স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরো পড়ুন:

জুলাই বিরোধিতা: ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’

আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার 

সোমবার (৩ নভেম্বর) নোবিপ্রবির রেজিষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজীদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের  রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

নোটিশে বলা হয়েছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত বিদেশে গমন করেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর ধারা ২(চ) অনুযায়ী ‘পলায়ন’ ।

এছাড়া একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করায় ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ,২০০১’ এর ধারা ৪৭(৫) এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। 

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮ মে  আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে সেটির জবাব যথাযথ হয়নি। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি আপনাকে পুনরায় ৭ জুলাই বিজ্ঞ আইনজীবীর মতামত এবং ৩১ জুলাই প্রেরিত নোটিশের জবাব না দেয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭ তম সভার আলোচ্যসূচি-১৮ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ৪৭(৮) ধারা অনুযায়ী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও (গ) অনুযায়ী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সহকারী পরিচালক (সামরিক বরখাস্ত) পদ থেকে চূড়ান্ত বা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো লেনদেন থাকলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকেন এই কর্মকর্তা।

ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ