মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় ২৭টি কবর খুঁড়ে ৬টি কঙ্কাল চুরি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার পশ্চিম সিংপাড়া সামাজিক কবরস্থান থেকে কঙ্কালগুলো চুরি হয়।

এর আগে ১৪ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় শ্রীনগরের বেজগাঁওয়ে করব খুঁড়ে ১১টি খুলি এবং ২০ ফেব্রুয়ারি চারিগাঁও জান্নাতুল ফেরদৌস কবরস্থান থেকে ৪টি কঙ্কাল চুরি হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে চতুর্থবারের মতো কবর থেকে কঙ্কাল চুরি হওয়ায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।

পশ্চিম সিংপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি কবরস্থানের বাতি জ্বালান এবং ভোরে ফজরের নামাজের পর বাতি বন্ধ করে দেন। আজ ভোরে বাতি বন্ধ করে কবরস্থানের চারপাশে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। তখন একটি কবর খোঁড়া দেখতে পান। সন্দেহ হলে পুরো কবরস্থান ঘুরে ২৬টি কবর খোঁড়া দেখা যায়। এরপর এলাকাবাসীকে বিষয়টি জানালে তাঁরা খোঁড়া কবরগুলো থেকে ছয়টি কঙ্কাল চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

কবর থেকে কঙ্কাল চুরির ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে মৃতের স্বজনেরা সেখানে ভিড় করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, তিন মাস আগে তাঁর মাকে কবরস্থানে দাফন করা হয়। আজ সকালে জানতে পারেন, কবরস্থান থেকে অনেকগুলো কঙ্কাল চুরি হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে এসে মায়ের কবর খোঁড়া ও কঙ্কাল চুরির বিষয়টি দেখতে পান। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বজনদের শেষবিদায় দিয়ে গোরস্তানে রাখি। যখন তাঁদের কথা মনে পড়ে, গোরস্তানে আসি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, চোখের পানি ফেলি। তাঁদের না দেখলেও কবর দেখে মনকে সান্ত্বনা দিই। সেই কবর থেকে যখন কঙ্কাল চুরি হয়, তখন সেই সান্ত্বনাটুকুও হারিয়ে যায়।’

শ্রীনগর উপজেলায় কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বেজগাঁও কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বারবার চুরির ঘটনায় আমরা এখন আতঙ্কিত। আমরা চাই, এসব চুরির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যেন প্রশাসন দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করে।’

যেসব কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি হয়েছে, সেগুলোর একটিরও সুরক্ষা দেয়াল, পাহারাদার নেই বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) আনিসুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কবরস্থান থেকে প্রথম কঙ্কাল চুরি যাওয়ার পর তাঁরা প্রতিটি কবরস্থানের সভাপতিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেয়াল, বাতি, সিসিটিভি ক্যামেরা ও পাহারাদার নিযুক্ত করতে বলেছিলেন। কিছু জায়গায় হয়েছে। তবে অধিকাংশ জায়গায় বাকি। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা গেলে চুরি রোধ করা যাবে। তিনি বলেন, চুরির ঘটনা কমাতে পুলিশ তৎপর আছে। যারা এসব ঘটনায় জড়িত, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। চোর চক্রকে ধরতে আজ থেকে জোর অভিযান চালানো হবে। দ্রুত তারা গ্রেপ্তার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কবরস থ ন থ ক কবরস থ ন র এল ক ব স শ র নগর র ঘটন কবর খ

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও গুরুতর নিপীড়ন চালাচ্ছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সোমবার এ কথা বলেছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, রাখাইনে আরাকান আর্মির দখল করা এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট, নির্বিচারে আটক ও খারাপ আচরণ, বাধ্যতামূলক শ্রম এবং জোর করে বাহিনীতে ভর্তি করানোর মতো নানা নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়ে আসছে। জাতিবিদ্বেষের মতো চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ এরই অংশ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেছেন, ‘রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে আসছে, আরাকান আর্মিও ঠিক সে রকম দমননীতি অনুসরণ করছে। তাদের উচিত, এই বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক আচরণ বন্ধ করে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা।’

২০২৩ সালের নভেম্বরে নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর পর মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছ থেকে কিছু এলাকা দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তখন আরাকান আর্মি সেসব অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে রোহিঙ্গারা বলেছে, তাদের জীবন এখনো কঠিন ও শৃঙ্খলিত। আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান বৈষম্যমূলক নীতি-বিধি ও চর্চা অব্যাহত রেখেছে।

‘অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলও নিষেধ ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।’জুন মাসে বাংলাদেশে আসা ৬২ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী

মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যের বুথিডং উপজেলা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গত এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে এসব সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

জুন মাসে বাংলাদেশে আসা ৬২ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেছেন, ‘আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে জীবন অসম্ভব রকম কড়াকড়ির মধ্যে ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলও নিষেধ ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।’

এইচআরডব্লিউ বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাতের মধ্যে আটকে পড়েছেন রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। দুই পক্ষই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও বেআইনিভাবে বাহিনীতে ঢোকানোর মতো গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে।

২০২৩ সালের শেষ ভাগ থেকে রাখাইন ও চিন রাজ্যে চার লাখের বেশি মানুষ দেশের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর এ সময় প্রায় ২ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।

রোহিঙ্গা গ্রামবাসীরা সংস্থাটিকে বলেছেন, আরাকান আর্মি তাঁদের কৃষিজমি, বাড়িঘর, গবাদিপশু, মাছ ধরার সরঞ্জাম, জ্বালানির কাঠ এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে।

বুথিডংয়ের কিন টং গ্রামের দুই বাসিন্দা বলেন, মে মাসে তাঁদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাঁদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।

এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করার পর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও অন্যান্য রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আবারও রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়েছে।

বুথিডংয়ের কিন টং গ্রামের দুই বাসিন্দা বলেন, মে মাসে তাঁদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাঁদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।

মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, যুদ্ধ এবং রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের জোর করে বাহিনীতে ভর্তি করানোর ফলে মুসলিম রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মে থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গাশিবিরে নতুন করে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিবন্ধিত হয়েছেন। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা কোনো সরকারি ত্রাণ বা সহায়তা না পাওয়ার কথা বলেছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ মনে করে, সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। তবে জাতিসংঘ ও উদ্বিগ্ন দেশগুলোর উচিত জোর দিয়ে বলা যে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কোনো পরিবেশ এখন নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মালেগাঁওয়ে কবরস্থানে বিস্ফোরণ মামলায় বিজেপি নেত্রী প্রজ্ঞাসহ সবাই খালাস
  • রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ