পেঁয়াজের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেতে হঠাৎ দুর্যোগ
Published: 6th, March 2025 GMT
মিজানুর রহমান কামাল চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করেছেন ৩০ কাঠা (৫০ শতাংশ) জমিতে। দিন দশেক আগেও গাছের ডগা ছিল মিশমিশে কালো। ভালো ফলনের আশা করছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তাঁর আশা ছিল অন্তত ৮০-৯০ মণ পেঁয়াজ পাবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁর জমিতে পেঁয়াজ গাছের ডগা লালচে হয়ে মরতে শুরু করেছে।
উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া মাঠে শিক্ষক কামালের জমি। গতকাল বুধবার সকালে তিনি বলেন, ‘১০ দিনে বিভিন্ন কোম্পানির নামিদামি কীটনাশক ছিটিয়েছি প্রায় আড়াই হাজার টাকার। কৃষি কর্মকর্তাকেও ডেকে এনেছি। তবুও মাথা মরা বন্ধ হয়নি।’ মাসখানেক পরেই পেঁয়াজ ঘরে তুলবেন কৃষকেরা। এখন পেঁয়াজে গুটি নামার সময়। গাছের আগা মরে গেলে গুটি ছোট হবে। আর ফলনও কম হবে বলে জানান কামাল। চলতি মৌসুমে তাঁর ৩০ কাঠা জমিতে গত মৌসুমের তুলনায় ৩০-৪০ মণ ফলন কম হবে বলেও মনে করছেন।
পশ্চিমপাড়া মাঠে জমি রয়েছে মনছুর আলীর। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। এর পর থেকেই গাছের ডগা মরে যাচ্ছে। কোনো ওষুধে কাজ হচ্ছে না। তাঁর ১৫ কাঠা জমিতে গত বছর ৪০ মণ পেঁয়াজ হয়েছিল। এবার ১৫ মণও ফলন হবে না।
পেঁয়াজের চারা রোপণের প্রায় দুই মাস হয়েছে। এখন গুটি নামার সময়। ২০-৩০ দিন পরই যখন পেঁয়াজ ঘরে উঠবে। চাষিরা শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত– এমন সময়ই উপজেলার দুই-তৃতীয়াংশ কৃষকের পেঁয়াজ ক্ষেতে দেখা দিয়েছে এই দুর্যোগ। তারা প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-২০ মণ ফলন কম হওয়ার শঙ্কা দেখছেন।
কৃষকদের ভাষ্য– জমির ইজারা, চাষ, বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যা, সার, কীটনাশকসহ পেঁয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি তাদের খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৫০-৬৫ মণ ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি হালকা বৃষ্টির পর থেকে গাছের ডগা মরে যাচ্ছে। এতে ফলন ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। তবে কৃষি কর্মকর্তার দাবি, বৃষ্টি নয়, হঠাৎ তাপ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের ডগা মরে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলন কিছুটা কমার শঙ্কা রয়েছে বলেও স্বীকার করেন।
কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার সরেজমিনে উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট ও চাপড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে পেঁয়াজ গাছের ডগায় লালচে ভাব ধরে মরতে দেখা যায়। কৃষকেরা এ অবস্থা ঠেকাতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। তাদের চোখমুখে হতাশা, আর কপালে চিন্তার ভাঁজ।
যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠের কৃষক মো. জিন্নাহ মোল্লা বলেন, বৃষ্টির পর থেকেও গাছ মরে যাচ্ছে। দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে এখন পর্যন্ত ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ৬০ মণ থেকে কমে ২০-৩০ মণ হতে পারে। তাতে এবার তাদের খরচই উঠবে না।
এই মাসের শেষের দিকে পেঁয়াজ ঘরে তোলার আশা করছেন একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর বিলের কৃষক আব্দুল বারেক (৬০)। তিনি বলেন, যেভাবে গাছ মরে যাচ্ছে, তাতে ফলন অর্ধেক কমে যাবে।
এক সপ্তাহে প্রায় দুই-তিন ইঞ্চি করে গাছ মরে গেছে বলে জানান শিলাইদহ ইউনিয়নের নাউতি গ্রামের কৃষক সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, কোনো ওষুধই কাজ করছে না। খরচ তোলা নিয়েই তাঁর মতো কৃষকের যতো দুশ্চিন্তা।
পড়াশোনার পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন মনিরুল ইসলাম। ডিগ্রি পড়ুয়া এই তরুণ চাপড়া ইউনিয়নের কবুরাট গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় ১২ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল হাইব্রিড কিং জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন মনিরুল। তিনি বলেন, গত বছর বিঘাপ্রতি ৮০-৯০ মণ ফলন হয়েছিল। এখন পেঁয়াজে গুটি নামার সময়, এখনই ডগা মরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ফলন ৪০-৬০ মণের বেশি হবে না।
আবহাওয়াজনিত কারণেই পেঁয়াজ গাছের ডাগা মরার কথা স্বীকার করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় চার হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৮ হাজার টন। হঠাৎ তাপমাত্রা বাড়ার কারণে পাতা পচা ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। এতে ফলন কিছুটা কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত উপজ ল র ফলন ক
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলের ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইলে ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। তবে, টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থী পরে ঘোষণা করা হবে।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন
বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী
প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ারে) আসনে উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আউয়াল লাভলু, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং টাঙ্গাইল-৮ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীর সর্থকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে সব আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রার্থী ছিল। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল ব্যাপক গণসংযোগে করেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা ছিলো, টুকু ও ফরহাদের মধ্যে একজন টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন।
ঢাকা/কাওছার/রফিক