যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ
Published: 19th, March 2025 GMT
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের অনেকে তখন গভীর ঘুমে। কেউ কেউ সাহ্রির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এমন সময় শুরু হয় একের পর এক বোমা হামলা। ইসরায়েলি বাহিনীর সেই হামলায় হতাহত হতে থাকেন নারী-শিশুসহ সব বয়সী ফিলিস্তিনি। রাতের অন্ধকারে চলতে থাকে আহত রক্তাক্ত মানুষের আর্তচিৎকার আর আতঙ্কিত মানুষের দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। যুদ্ধবিরতির মধ্যে আবার দুঃস্বপ্নের রাত ফিরে এল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এ উপত্যকায়।
১৫ মাস ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর গাজাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল যুদ্ধবিরতি। ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন করে গাজায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। গত সোমবার মধ্যরাতের পরে ঘুমন্ত গাজাবাসীর ওপর এই হামলায় অন্তত ৪০৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার দক্ষিণের খান ইউনিস ও রাফা, উত্তরের গাজা নগর এবং মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহসহ গাজার প্রায় সব জায়গায় যুদ্ধবিমান ও ড্রোন থেকে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ৫৬২ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতম এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গাজার সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। সংগঠনটি বলেছে, এই হামলার মধ্য দিয়ে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে ইসরায়েল। নৃশংস এ হামলার প্রতিবাদ জানাতে আরব ও ইসলামিক দেশগুলোসহ ‘মুক্ত বিশ্বের মানুষদের’ সড়কে নেমে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল এখন থেকে আরও বেশি সামরিক শক্তি নিয়ে হামাসের ওপর হামলা চালাবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, গাজায় এ হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইসরায়েলের হামলা ফিলিস্তিনিদের জীবন অসহনীয় দুর্দশা বয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। দ্বিতীয়ত, গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া যাবে না এবং তৃতীয়ত, নিঃশর্তে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে।’
গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর মেয়াদ শেষ হয় ২ মার্চ। যুদ্ধবিরতির মূল চুক্তিতে বলা ছিল, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলাকালে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা হবে। যদি এর মধ্যেও দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে সমঝোতা না হয়, তাহলে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলবে।
এ ছাড়া প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর ২ মার্চ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর বিষয়ে অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের সরকার। পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের পাসওভার উৎসব এই মেয়াদকালের আওতায় পড়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে সোমবার রাতে আবারও গাজায় নির্বিচার হামলা চালাল ইসরায়েল।
‘হাতে হাতে শিশুর ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ’ঘড়িতে তখন রাত ২টা ১০ মিনিট। মেয়ে বানিয়াসকে নিয়ে গভীর ঘুমে মারাম হুমাইদ দম্পতি। আচমকা যুদ্ধবিমান থেকে একের পর এক বোমা হামলার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় বানিয়াসের। শিশুটির চোখেমুখে আতঙ্ক। চিৎকার করে কাঁদছিল আর বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘বাবা! মা! কী হচ্ছে বাইরে?’
মারাম হুমাইদ বলেন, ‘মেয়ে শুয়ে ছিল আমার পাশে। তাকে কী বলব বুঝতে পারছিলাম না।’
দেইর আল-বালাহর বাসিন্দা মারার হুমাইদ বলেন, ‘এ অবস্থায় মেয়েকে কোলে জড়িয়ে ধরে তার বাবা। হামলার তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। বুঝতে পারছিলাম আবার ইসরায়েল হামলা শুরু করেছে।’
চারপাশে ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলার শব্দে ঘুম ভাঙে আহমেদ আবু রিজক ও তাঁর পরিবারের। গাজার এই স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। শিশুরাও ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন সড়ক থেকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসতে শুরু করে। দেখলাম লোকজন তাঁদের হাতে করে সন্তানদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ নিয়ে আশপাশের হাসপাতালের দিকে ছুটে যাচ্ছে।’
মোমেন কোরেইকেহ নামে গাজার এক বাসিন্দা বলেন, সোমবার মধ্যরাতে ইসরায়েলের এই হামলায় নবজাতক, নারী-শিশুসহ পরিবারের ২৬ জন সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি।
গাজায় আল-জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজৌম জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অস্থায়ী হাসপাতাল, আবাসিক ভবন—সর্বত্র বিমান থেকে বোমা হামলা চলছিল। হামলায় হামাসের কিছু শীর্ষ নেতাও নিহত হয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিমান ও ড্রোন থেকে চালানো হামলার পর নবজাতক, শিশু, নারী ও প্রবীণ মানুষের অসাড় দেহ যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়।’
‘হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী’হামাস বলেছে, ইসরায়েল এই নৃশংস হামলার মধ্য দিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করেছে। ইসরায়েলির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তাঁর চরমপন্থী সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি উল্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গাজায় থাকা (ইসরায়েলি) বন্দীদের জীবনও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে তারা।
গাজার আরেক সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন ইসলামিক জিহাদ বলেছে, যুদ্ধবিরতির সব প্রচেষ্টা ভূলুণ্ঠিত করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে এ হামলা করেছে দখলদার ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের হামলা শুরুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি দায়ী করেছে ইরান। গতকাল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অব্যাহত হত্যাযজ্ঞের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি দায়ী।’
ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডান। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতা করে আসা কাতার বলেছে, ইসরায়েলের এ হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্তির ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর বলেছে, ইসরায়েলের এই হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ইসরায়েলের হামলায় চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং। সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে এমন পদক্ষেপ না নিতে দুই পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। রুশ সরকারের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
গতকাল হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট ফক্স নিউজকে বলেন, ‘গাজায় আজ (সোমবার) রাতের হামলার বিষয়ে আগেই ট্রাম্প প্রশাসন ও হোয়াইট হাউসের সঙ্গে আলোচনা করেছে ইসরায়েল।’ তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হামাস, হুতি, ইরানসহ যারা শুধু ইসরায়েল নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও ভীতি ছড়াতে চায়, তাদের এর মূল্য চুকাতে হবে। নরকের সব দরজা খুলে যাবে।’
যুদ্ধবিরতির আলোচনা বন্ধকয়েক মাসের আলোচনার পর মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এ চুক্তির আওতায় ৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রাথমিক এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাতারের দোহায় বিবদমান পক্ষের সঙ্গে কাতার ও মিসরের আলোচনা চলছিল। সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার রাতের হামলার পর যুদ্ধবিরতির আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে।
দেড় মাস ধরে আলোচনা চললেও যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ইসরায়েল রাজি হচ্ছিল না। ইসরায়েল ও তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছিল, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে গাজায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হোক।
কিন্তু হামাস বলে আসছিল, মূল চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করতে হবে। এর আওতায় ইসরায়েলি সব সেনাকে গাজা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। এর পরই বাকি জিম্মিদের ছেড়ে দেবে তারা।
হামাস এখনো মূল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে চায় বলে গতকাল জানিয়েছেন সংগঠনটির মুখপাত্র আবদেল লতিফ। তিনি রয়টার্সকে বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে এখনো তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। এখনো তাঁরা মূল চুক্তি পুরোপুরি কার্যকরের পক্ষে।
এদিকে গাজায় হামলার পর ইসরায়েল নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করেছে তারা। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন ইউরোপের ২৭টি দেশের এই জোটের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় হামলা বন্ধ ও ত্রাণসহায়তা প্রবেশ করতে দিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র হ প রথম ধ প র ইসর য় ল ক র যকর স মব র সরক র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত ৩, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।