Prothomalo:
2025-08-01@05:05:27 GMT

এসব মৃত্যু কি এড়ানো যেত না

Published: 3rd, April 2025 GMT

ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় কতজন মারা গেছেন, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় হাসপাতাল ও থানা-পুলিশের মাধ্যমে। যদি কেউ হাসপাতালে ভর্তি না হন, থানায়ও তথ্য না জানান, সেটা হিসাবের বাইরেই থেকে যাবে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। কিন্তু যে পরিসংখ্যান আমরা নিয়মিত পাই, সেটি আমাদের শঙ্কিত করে তোলে।

সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলো আমাদের কমবেশি সবারই জানা, যেমন—সড়ক অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত বা ত্রুটিপূর্ণ সড়ক এবং চালকের বেপরোয়া যান চালনা। এবারও ঈদের আগে ও পরের সময়টাতে সড়কে একের পর এক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে প্রচলিত কারণগুলোই, যেসবের কার্যকর সমাধান আমরা আসলে সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে করতে পারছি না।

এবারের ঈদে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি জাঙ্গালিয়া বাঁকে। বুধবার সকালে রিলাক্স পরিবহনের দ্রুতগতির যাত্রীবাহী একটি বাস সেখানে এলে চালক হার্ড ব্রেক করতে গেলে বাসটির সামনের অংশ ঘুরে যায়। এতে বাসটি মহাসড়কে আড়াআড়ি হয়ে যায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা কক্সবাজারগামী দ্রুতগতির একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই কক্সবাজারগামী দ্রুতগতির আরেকটি মাইক্রোবাস দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে শিশু, নারীসহ ১০ জন মারা যান। একই স্থানে সোমবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ তরুণ নিহত হন বলে জানা যায়।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, এসব মৃত্যু কি এড়ানো যেত না? সড়কের ওই বাঁক যে যানবাহনের জন্য একটি বিপজ্জনক, সেটা নিশ্চয়ই সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অজানা নয়। তারপরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? এই বাঁকে আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কেবল ঢাকা–চট্টগ্রাম সড়ক নয়, দেশের আরও অনেক সড়কে এ রকম বিপজ্জনক বাঁক আছে। বহু বছর আগে ঢাকা-মানিকগঞ্জ সড়কে এ রকম একটি বিপজ্জনক বাঁকে চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিকতার শিক্ষক মিশুক মুনীর নিহত হলে দেশব্যাপী প্রতিবাদ হয়। পরে সরকার বিপজ্জনক বাঁকটি সংস্কারও করে। কিন্তু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বাঁকটির মতো আরও অনেক বাঁক বিপজ্জনক অবস্থায়ই থেকে গেছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ও পরের দুই দিনে বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও মানুষ নিহত হয়েছেন। এর বড় অংশ মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। কোনোটি চালকের বেপরোয়া চালনার জন্য, কোনোটি অপর বাহনের ধাক্কায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদের সময় গ্রামগঞ্জে বা মফস্‌সলে অতিরিক্ত আরোহী নিয়ে মোটরসাইকেল চালনা বেড়ে যায়। এমনকি খুব কম চালক ও আরোহীদের মাথায় থাকে হেলমেট। 

ঈদের আগে দুর্ঘটনা অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে। ঈদযাত্রায় কর্তৃপক্ষ যতটা সতর্ক থাকে, পরে আর থাকে না, একটা ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে। এটাও দুর্ঘটনার বড় কারণ। একটি দুর্ঘটনা মানে একটি পরিবারের কান্না। দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে বা পঙ্গু হয়ে গেলে সেটা সেই পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, স্বজনদের সারা জীবন বহন করতে হয়। আহত ব্যক্তিরাও একসময় নিজের কাছে, এমনকি পরিবারের কাছেও বোঝা হয়ে যান। 

সড়কে কেউ বেপরোয়া যান চালালে আমরা চালককে দোষারোপ করি, কিন্তু আঁকাবাঁকা সড়কের কারণে যেসব দুর্ঘটনা হয়, সেই দায় সড়ক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। রাতারাতি সড়কগুলোর বাঁক মেরামত করা না গেলেও তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। সেখানে নিয়মিত মনিটরিং, জরুরি সংকেত ও গতি নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকলেও দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। আশা করি, বিলম্বে হলেও কর্তৃপক্ষ সজাগ হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন য় ক দ র ঘটন ব যবস থ সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ