৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান, সরিয়ে দিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
Published: 10th, April 2025 GMT
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোসহ পিএসসি’র সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন একদল চাকরিপ্রার্থী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগানের প্ল্যাকার্ড।
অবস্থানের এক পর্যায়ে চাকরিপ্রার্থীরা আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে থেকে পাবলিক সার্ভিস কমিশন–পিএসসির দিকে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রথমে বাধা দেন। পরে চাকরিপ্রার্থীদের জোর করে নির্বাচন কমিশন থেকে পিএসসির যাওয়ার পথ থেকে সরিয়ে দেয়আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে আসা এক চাকরিপ্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশের সাথে লিখিত পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের প্রিলির ফল যখন দ্বিতীয়বার প্রকাশ করা হয় তখন লিখিত পরীক্ষার সম্ভাব্য কোনো তারিখ দেওয়া ছিল না। এছাড়া ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের পর বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসে কিছুটা পরিবর্তন আসে, প্রার্থীদের নতুন করে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়। কিন্তু সরকারি কর্ম কমিশন প্রার্থীদের কথা চিন্তা না করে হঠাৎ করে লিখিত পরীক্ষার জন্য ৮ মে তারিখ ঘোষণা করে। এতে আমরা সাধারণ প্রার্থীরা বিপদে পড়েছি। আমাদের একটাই দাবি লিখিত পরীক্ষা পেছানো হোক।’
অপর এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘পিএসসির চেয়ারম্যান স্যার পরীক্ষা পেছানোর জন্য তিন দিন সময় চেয়েছিলেন। আজ দুদিন পার হলো। আগামীকাল শুক্রবার। তাই আজকের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত চাই। এ জন্য অবস্থান নিয়েছি।’
এ ব্যাপারে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম বলেন, তাঁরা চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যাগুলো বিচার বিশ্লেষণ করছেন। তাঁদের কথা শুনবেন বলে তিনি জানান।
গত মঙ্গলবার ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পিএসসির সামনে বিক্ষোভ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। পরে পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৬ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে করেন পিএসসি চেয়ারম্যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ র চ কর প র র থ প এসস র অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।