৪৪-৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা দ্রুত শেষ করতে যেসব পরিকল্পনা নিল পিএসসি
Published: 13th, April 2025 GMT
৪৪তম থেকে ৪৭তম বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আজ রোববার পিএসসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চলমান বিভিন্ন বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কে ভিত্তিহীন এবং খণ্ডিত তথ্য সরবরাহ করছে, যা বিসিএস পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এতে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এমতাবস্থায়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সব মহলের মধ্যে থাকা এসব বিভ্রান্তি দূর করার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত তথ্য উপস্থাপন করছে।
৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়সমূহ আগামী ৮ থেকে ১৯ মের মধ্যে ও পদসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ সম্ভাব্য জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
২২ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। স্থগিত মৌখিক পরীক্ষাসমূহ ১৬ জুনের পরে দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হবে। স্থগিত মৌখিক পরীক্ষাসমূহের পরিবর্তিত শিডিউল অতিসত্বর জানিয়ে দেওয়া হবে।
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল জুনের মধ্যে প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী পরীক্ষা পূর্বঘোষিত তারিখ ২৭ জুনের পরিবর্তে ৮ আগস্ট ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিসিএস ৪৪তম, ৪৫তম ও ৪৬তম নিয়ে সৃষ্ট জট নিরসনকল্পে সব বিসিএস প্রার্থীদের উদ্বেগ বিবেচনায় রেখে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান জট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন সবোর্চ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য অপরিহার্য কিছু বিষয় যেমন প্রশ্নপত্র ছাপানো, পরীক্ষাকেন্দ্র নির্বাচন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনায় কমিশনকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয়।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক সময়ে সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ জানার জন্য প্রার্থীদের কমিশনের ওয়েবসাইটে নিয়মিত দৃষ্টি রাখা এবং কমিশনের ওয়েবসাইটে (www.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব স এস প এসস ম খ ক পর ক ষ পর ক ষ র ব স এস প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন
সরকারি নথিপত্রে যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের ইচ্ছাকৃত অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীতভাবে ইতিহাস বিকৃতির সবচেয়ে খারাপ ধাপ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় প্রত্যেকে এই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকারদের, আর রাজাকারের তালিকায় সুবিদিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের অন্তর্ভুক্তি দেখা গেছে। কিন্তু হাজারো তরুণের রক্তস্নাত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, তা অকল্পনীয় ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা দেখিয়েছে, আগের সেই রেশ থামেনি। দেখা যাচ্ছে, সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শহীদদের যে তালিকা করেছে, তাতে এমন অর্ধশতাধিক লোকের নাম এসেছে, যাঁরা জুলাই শহীদ নন।
জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী অথবা আওয়ামী শাসক দলের লোকদের হাতে নিহত ব্যক্তিরাই জুলাই শহীদ বলে গণ্য হবেন। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সরকারের তৈরি করা জুলাই শহীদদের তালিকায় কমপক্ষে ৫২ জনের নাম আছে, যাঁরা জমিসংক্রান্ত বিরোধ বা অন্য কারণে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন কিংবা নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ছাড়া তালিকায় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন ছাত্রলীগ নেতা আছেন। এমনকি তালিকায় এমন একজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি প্রতিবাদীদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন।
প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন মোট ৩০ লাখ টাকা দেবে সরকার। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। ঢাকায় তাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
জনমানসের যৌক্তিক ধারণা, এই অর্থনৈতিক সুবিধার প্রলোভন তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা, শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং অপকৌশলের সুযোগ তৈরি করেছে। শুধু জালিয়াতি করে শহীদ দেখিয়ে শুধু সহায়তা নেওয়া নয়; সংশ্লিষ্ট নিহতের ঘটনায় মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার নজিরও মিলেছে।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, তালিকাভুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ কাজ করে থাকতে পারে। ঘটনাটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তার মিলিত কৌশল এবং সুযোগসন্ধানীদের চক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি সরকার আমলে নিয়েছে, এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই।
বহু শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকার এক মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, শহীদের মর্যাদাকে সরকারি পরিসরে আর্থিক প্রলোভন, সংকীর্ণ রাজনৈতিক সুবিধা বা স্বার্থপর উদ্দেশ্যে বিকৃত করা হলে সেটি ইতিহাস, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব লঙ্ঘনের অমার্জনীয় অন্যায় হয়ে ওঠে।
এ অন্যায় থেকে বাঁচতে ও মানুষের আস্থা পুনঃস্থাপনে অবিলম্বে বিতর্কিত সব নামের সব সরকারি সুবিধা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। স্বাধীন ও অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করে প্রতিটি নামের পুনঃ যাচাই নিশ্চিত করা জরুরি। বাদ পড়া শহীদদের নামও তালিকায় যুক্ত করতে হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে যাদের গাফিলতি বা দুর্নীতির কারণে এই অনিয়ম হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে এক অমর মাইলফলক। এর শহীদদের তালিকায় নকল বা অপ্রাসঙ্গিক নাম সংযোজন করা হলে ‘বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা’ সব ‘ধরার ধুলায় হবে হারা’। সরকারকে এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
আশার কথা হলো, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো প্রকার ভুয়া প্রমাণিত হলে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কথা ও কাজের সম্মিলিত প্রয়াস আমরা দেখব, সেটিই কাম্য।