মাথার উপর হা করে আছে সূর্য। তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৩৫ ডিগ্রির ঘর। গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা সবার। কিন্তু এর মধ্যেই হাঁটু পানিতে ভাসছে নগরীর জামালখান ও রহমতগঞ্জ এলাকা। রাতে হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। তাতেই মঙ্গলবার হাঁটু পানি জমেছে এই দুটি এলাকাতে। সকালের সূর্য দুপুরে গড়ালেও কমছে না পানি। হাঁটু সমান পানির মধ্যে দিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে কর্মজীবী নারী-পুরুষদের।

জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, খালে বাঁধ দিয়ে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে, তাই পানি জমেছে। বর্ষার আগে বাঁধ অপসারণ করা হলে পানি আর জমবে না। অথচ মাত্র চারদিন আগে এবার জলাবদ্ধতা কম হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন কাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। কিন্তু মঙ্গলবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।

কয়েকদিনের তাপ প্রবাহের পর মঙ্গলবার ভোররাতে চট্টগ্রামে হালকা বৃষ্টি নামে। ভ্যাপসা গরমে ভোররাতের বৃষ্টি ভেজা শীতল হাওয়া মানুষের মাঝে স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু সকালে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে মানুষ পড়েছেন বিপাকে। তাদের একজন জামালখানের শরীফ কলোনীর বাসিন্দা স্বপন কুমার মল্লিক। তিনি বলেন, ‘সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হতে গিয়ে দেখি বাসার সামনে হাঁটু পানি জমে আছে। তাই আর বের হতে পারিনি। এমনিতে বর্ষায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বৈশাখে কখনো এমন জলাবদ্ধতা দেখিনি। তবে সংস্কার কাজের কারণে প্রায় সময় সড়কে পানি জমে থাকে।’

পঞ্জিকা অনুযায়ী সনাতন ধর্মের লোকজন বাংলা নববর্ষের আচার পালন করেছেন মঙ্গলবার। তাই জামালখান বাইলেনের বাসিন্দা নিপুল কুমার দে বলেন, ‘উন্নয়নের যন্ত্রণা নিয়ে বছরের প্রথম দিনের শুরু।’ এখানকার কর্মজীবী লোকজন অতিরিক্ত ভাড়া গুনে ভ্যানে ও রিকশায় পথ পাড়ি দিয়েছেন। সকালে একইভাবে আন্দরকিল্লা পেশাগত কাজে যেতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েন নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সকালে আন্দরকিল্লা যেতে বাসা থেকে বের হই। রহমতগঞ্জ বাংলা কলেজ এলাকায় গিয়ে দেখি পানি জমে আছে। পরে বিকল্প পথে আন্দরকিল্লা গিয়েছি।’

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের সিআরবি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। বৃষ্টির পরিমাণ কেমন হবে তা একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে এই দুর্ভোগ এবার অনেকটা লাঘব হবে।’ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন কাজের কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে একটা জিনিস দেখে খারাপ লাগছে, কিছুদিন আগে খাল পরিষ্কার করা হলেও সেখানে এখন আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে। এতে মনে হচ্ছে এই কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারি নাই।’

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রকল্পটির আওতায় নগরের জামালখান খালে সংস্কার কাজ চলছে। নগরের নূর আহমদ সড়কের বিমান অফিস এলাকা থেকে উৎপত্তি খালটি মিলিত হয়েছে নগরের চাক্তাইখালে। সংস্কার কাজের খালটিতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। খালের বিভিন্ন অংশে সম্প্রসারণ ও প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। এতে বৃষ্টির পানি উপচে পড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটির পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.

ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘সংস্কার কাজের জন্য জামালখান খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। খালের পানি একটি পাইপ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি হওয়ায় পানি জমেছে। তবে বর্ষার আগে বাঁধ খুলে দিলে আর পানি উঠবে না। এছাড়া আমাদের কাছে বিকল্প কোন পথ নেই। তাই মানুষের একটু ভোগান্তি হচ্ছে। কাজ শেষ হলে এই ভোগান্তি লাঘব হয়ে যাবে।’

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। এর +মধ্যে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প ও দুই হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চউক। ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। চউকের ৮ হাজার ৬২৬  কোটি টাকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নগর র জ প রকল প ন রসন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল

ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সাড়ে চারটায় জামায়াত

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলন

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ